সমাজে আলো ছড়িয়ে প্রশংসায় মুখরিত ‘ আলাদীনের চেরাগ’


মোহাম্মদ রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তি এবং সিসি ক্যামেরা ফুটেজের মাধ্যমে প্রতারক ও চোর শনাক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় মুখরিত ‘আলাদীনের চেরাগ’ যা বর্তমানে ‘চেরাগ টিম’ নামে সুপরিচিত।
তার ই ধারাবাহিকতায় বৈশাখী নিউজ২৪.নেট এর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি যোগাযোগ করেন চেরাগ টিমের প্রধান কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও থানাধীন জাগিরপাড়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ফরিদুল আলমের সঙ্গে।
২০১৭ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রবাসী ছিলেন ফরিদুল আলম।
প্রবাস থেকে ফিরে তিনি ‘আলাদীনের চেরাগ’ নামে স্মার্ট ডিভাইসের দোকান দেন কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও বাস স্টেশনে।
সে সময় ঈদগাঁও বাজারে অবস্থিত বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবাগ্রহীতাগণ চোর এবং প্রতারকদের শিকারে পরিণত হন,যা দেখে মনে মনে কষ্ট পান তিনি। সেই থেকে তাঁর মনে তৈরী হতে থাকে জিঘাংসা।
আলাদীনের চেরাগ প্রতিষ্ঠার ২ বছরের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রায় ৬শত মানুষকে হারানো জিনিস ফিরিয়ে দিয়েছেন এবং সারাদেশে প্রায় ৪শত অপরাধীদের শনাক্ত করার কাজে সহযোগিতা করেছেন তিনি।
ফরিদুল, ঈদগাঁও বাস স্টেশনের ১৩টি লোকেশনে জনস্বার্থে নিজের খরচে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন যা প্রদর্শন হয় দোকানের সামনে বড় টিভিতে।
প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায়, প্রতারক ও চোরের খপ্পরে টাকা, স্বর্ণালংকার, মোটর সাইকেল, টমটমসহ বিভিন্ন যানবাহন ও জিনিসপত্র হারানো মানুষ শরনাপন্ন হতে থাকে ‘আলাদীনের চেরাগ’ এর কাছে।
ফরিদুল সিসি ক্যামেরা দেখে প্রতারক বা চোরকে সনাক্ত করেন। তারপর চোর বা প্রতারকের সাথে যোগাযোগ করে হারানো জিনিস পাইয়ে দেন, অথবা ক্ষেত্রভেদে আইনী সহায়তা পেতে ভোক্তভূগিকে সহযোগিতা করেন।
প্রতারক বা চোর সনাক্ত না হলে ফুটেজ এডিট করে তিনি ফেসবুকে আপলোড করেন। ভিডিও দেখে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চোর বা প্রতারক শনাক্ত হয়।
হারানো মোটর সাইকেল, স্বর্ণালংকার, টমটম, টাকা বা বিভিন্ন জিনিস ফিরে পেয়ে খুশি হয় মানুষ। মূলত প্রযুক্তির সুফল নিজের আশেপাশে ছড়ানো ও মানুষকে সচেতন করা তার অভিপ্রায়।
পাবলিক প্রেস নিজে মনিটরিং করার অনুমতি না থাকায় প্রথম দিকে তাকে রোষানলেও পড়তে হয়েছে। তার নিঃস্বার্থ কাজকর্মে মানুষের উপকার হচ্ছে দেখে এখন সবাই তাকে সহযোগিতা করেন।
২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রচারিত ইত্যাদিতে তার কার্যক্রমের উপর প্রতিবেদন প্রচার করেন হানিফ সংকেত। ফরিদুল তার কাজের সুবিধার্থে ঈদগাঁও উপজেলার স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে গড়ে তুলেন লস্ট এন্ড ফাউন্ড নেটওয়ার্ক।
এটি আলাদীনের চেরাগ এর নেপথ্য ডানা হিসেবে কাজ করে। গ্রুপের ১১ জন সদস্য হারানো জিনিস উদ্ধারে সরাসরি অংশ নেন। জানতে চাইলে ফরিদুল বলেন, শুরুটা ঈদগাঁও বাস স্টেশন দিয়ে।
পরে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতারিত মানুষ ফেসবুক পেজ ‘আলাদীনের চেরাগ’ এ আপলোডের জন্য ভিডিও পাঠাতে শুরু করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতারক বা চোর শনাক্ত হয়। জেলার ভেতরে হলে লস্ট এন্ড ফাউন্ড নেটওয়ার্ক নিয়ে ভোক্তভূগীকে সহযোগিতা করা হয়।
দোকান প্রতিষ্ঠার ১৬ মাসে প্রায় সাড়ে ৫শ মানুষকে নিঃস্বার্থ সেবা দিয়েছেন ফরিদুল। তার এ প্রযুক্তিসেবা এলাকায় হয়ে উঠেছে প্রযুক্তিযুগের আলাদীনের চেরাগ।
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা হলো,১) চট্টগ্রামের অলি খাঁ মসজিদ এর সামনে থেকে একটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটে এবং সেটি উদ্ধার করতে গিয়ে আরো ১১ টি মোটর সাইকেল উদ্ধার হয়েছিল।
২) কক্সবাজার, রামু এলাকার এক মহিলা থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া ৪.৫ ভরি স্বর্ণ সাত দিন পর উদ্ধার করে সারপ্রাইজ দিয়েছিলেন চেরাগ টিম।
৩) নোয়াখালীতে এক বিকাশের দোকান থেকে ৭ লক্ষ টাকা চুরি হয়ে গেলে, পরবর্তীতে চেরাগ টিমের প্রযুক্তিতে চোর সনাক্ত হয় এবং টাকা উদ্ধার করা হয়।
৪) কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ২০১৭ সালে একটি স্বর্ণের দোকান থেকে প্রায়,২০০ টির মত স্বর্ণের চেইন চুরি করে নিয়ে যায়, যার ওজন আনুমানিক ৪০ ভরি, ২০২২ সালে এসে চেরাগ টিম ঐ চোরদের শনাক্ত করেতে সক্ষম হয়। এ ভাবে ধীরে ধীরে জনকল্যাণমূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রশংসায় মুখরিত ‘আলাদীনের চেরাগ’।