ফরিদপুরে বাবা-ছেলেকে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেফতার আরো ৪

আপডেট: March 28, 2023 |

তারেকুজ্জামান, ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে নির্দোষ এক কিশোর (১৫) ও তার বাবাকে গত শুক্রবার (১৭ মার্চ) একটি স্কুলের শ্রেণিকক্ষে আটকে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

উক্ত নির্যাতনের ঘটনায় সোমবার (২০ মার্চ) মধুখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

এ ঘটনায় আরো জড়িত চারজনকে আজ সোমবার (২৭মার্চ) গ্রেফতার করে দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মধুখালীর জাহাপুর ইউনিয়নের মাঝকান্দি গ্রামের আসাদুল মোল্যার ছেলে ফরমান মোল্যা(২১), একই গ্রামের শাজাহান মোল্যার ছেলে সজিব মোল্যা(২২), শিবরামপুর গ্রামের নবিয়াল শেখের ছেলে জুবায়ের শেখ(২০) ও নূর ইসলাম ভূইয়ার ছেলে হাসিব ভুইয়া(২০)।

এই মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়, এর আগে ২৫ মার্চ তিনজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়, তাদের মধ্যে দুজন এখন জামিনে বেরিয়ে এসেছেন।

তবে মামলার প্রধান অভিযুক্ত আসামি কুতুবউদ্দিন(২৫) এখনো জেলে রয়েছেন।

সোমবার দুপুরে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

এ সময় পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, তাদের আমরা প্রথম থেকেই এ ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, যে মেয়েটির কথা এখানে বলা হয়েছে সে ইয়ামিন মৃধার প্রথম স্ত্রীর মেয়ে। মেয়েটি হওয়ার পরই তার মা মারা যান।

দুই মাস আগে মেয়েটিকে স্কুলে ২য় শ্রেনীতে ভর্তি করে দেয় তার সৎ ভাই রাজন। তবে মেয়েটিকে বাড়ি নিয়ে যেতে চায় ওই স্কুলেরই একজন নিঃসন্তান শিক্ষক।

মেয়েটিকে তিনি দু’বার তার ফরিদপুরের বাড়িতেও নিয়ে যান। শেষবার তিনি কাউকে না জানিয়ে মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর গত ১৭ মার্চ তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই তার বাবাকে স্কুলে ডেকে নেয়া হয়েছিলো।

এরপর তার ভাইকেও ডেকে নেয়া হয়। তারপর তাদের ওপরে অমানবিক নির্মম নির্যাতন করা হয়।

তিনি বলেন, বাবা ও ছেলেকে নির্যাতনের আগে শিশু মেয়েটির একটি ভিডিও করা হয় যেখানে সে তার বাবা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করে।

আর ভাইরাল হওয়া নির্যাতনের ভিডিওটিও আমরা প্রথমে পাইনি। এজন্য প্রথমেই যৌন নির্যাতনের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারিনি।

তবে ঘটনার পরেরদিন তার বাবা ও ছেলেকে ডেকে এনে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত কথা বলে আমরা বুঝতে পারি যে, বাবা এ অভিযোগ থেকে মুক্ত।

পরে মেয়েটিকে যখন মেডিকেল টেস্ট করার জন্য পাঠিয়েছি তখন সে সত্য কথা বলেছে।

সে আদালতে জবানবন্দিতে বলেছে, ‘আমাকে যৌন নির্যাতন করা হয় নাই। আমি মেডিকেল টেস্ট করাতে চাই না। ওই মহিলা (রুমা) আমাকে প্রলোভন দেখিয়েছে।

টাকা দিয়ে বলেছে, যে তোর ভাই আর বাবার বিরুদ্ধে এসব কথা বলবি। আর ওই মহিলাকে একথা বলার জন্য ঠিক করেছেন ওই স্কুল শিক্ষিকা।

ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা লিপি এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী, তিনিই শিশুটিকে তার বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলতে বাধ্য করেছিলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার শাহজাহান বলেন, মেয়েটি আমাদের কাছে এসব কথা বলে নাই বরং কোর্টে বলেছে।

এজন্য তার আগেই রাজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে এখন বুঝতে পারছি রাজন মৃধা নির্দোষ। আমরা এ মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দিবো এবং রাজন সংশোধনাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে যাবে।

পুলিশ জানায় এ মামলায় অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর