স্বতন্ত্র প্রার্থীকে তারা কেন এত ভয় পায়, প্রশ্ন জাহাঙ্গীরের
গাজীপুর প্রতিনিধি: ঋন খেলাপির জন্য মনোনয়ন বাতিল হওয়া মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি তো একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে কেন এত ভয় পায়? সবাই বলেছে একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে। অন্ধকারে যে প্রার্থী বা পেশী শক্তি ব্যবহার করার জন্য চেষ্টা করছে এটা গাজীপুরের মানুষ এক সময় মেনে নিবে না। শহরের মানুষকে একটি অনুরোধ করব কোনো ভন্ড, প্রতারক, মিথ্যাবাদী, অভীনেতাকে যারা ৬০/৭০ বছরে কিছু করতে পারেনি তাদেরকে যেন আর কেউ ভোট না দেয়।
রবিবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, মন্ত্রনালয় থেকে মিথ্যা ভূয়া চিঠি দিয়ে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেটার কোনো ধরনের সমাধান না করে নির্বাচন কমিশন তফসীল ঘোষনা করেছে। এতে কি প্রমাণীত হয় না এখানে ন্যায় বিচার পাব কিনা? এখানে নির্বাচন কমিশনার তার নিরপেক্ষতাটা রাখবে কিনা এবং প্রশাসন সহযোগীতা করছে কিনা নির্বাচন নিরপেক্ষ করার জন্য।
তিনি বলেন, আমি মেয়র থাকাকালে নিজের মানবিক কারণে যখন দেখলাম কোনাবাড়ী এলাকায় নিউ টাউন নীট ওয়্যার কোম্পানী লিমিটেড বন্ধ করে দিয়েছে, হাজার হাজার শ্রমিক তাদের ইনকামের জায়গা বন্ধ হয়ে গেছে। তারা বেতন পাচ্ছে না। যখন মালিক পক্ষ আমার সহযোগীতা চাইলো তখন আমার নিজের থেকে প্রায় ১২ বিঘা জায়গা অগ্রণী ব্যাংকে তাদের কোম্পানীর এগেনেস্টে মর্গেজ দিয়েছি। সেই মর্গেজ পার্টি হিসেবে আমি এবং আমাদের এখানে যে মালিকানা আছেন তারা শতভাগ বিদেশী একটি কোম্পানী। এর মধ্যে আমার শেয়ার নাই।
আমি নি:স্বার্থ ও মানবিক দিক বিবেচনা করে আমার সম্পত্তি দিয়েছে। তারা যখন করোনার কারণে এবং রাশিয়া ইউকে যুদ্ধের কারণে তাদের অর্ডার নষ্ট হয়ে যায় তখন তারা কিছুদিনের জন্য ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেয়। তখন তারা যে বেতন দিতে পারে নাই সেজন্য তাদের যে কিস্তি ছিল ব্যাংকের, সেই কিস্তি না দেওয়ার কারণে তারা ডিফল্ডার (ঋন খেলাপি) হয়ে যায়। ডিফল্ডার হয়ে যাওয়ার পরে আমি যখন শুনতে পারলাম তখন তারা (কোরিয়ানরা) নিজেরাই অগ্রণী ব্যাংকের তাদের যে লোন আছে সেই লোন বাংলাদেশ ব্যংাকের নিয়ম অনুযায়ী সম্পূর্ণ টাকা তারা প্রক্রিয়া অনুযায়ী পরিশোধ করে। অগ্রণী ব্যাংক তাদের অর্থ পেয়েছে। সেই অর্থ পেয়ে তারা নির্বাচন কমিশনে সরাসরি এসে বলেছে আমরা তাদের টাকা পেয়েছি।
তিনি বলেন, সিআইভি জিরো করা হয়। সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চিঠিও দিয়েছে। দুই পক্ষই টাকা দিয়েছে এবং তারা পেয়েছে। ব্যাংক সেখানে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। আমি তৃতীয় পক্ষের একজন মর্গেজ হিসেবে আমার জমি এখানে আছে। আমি ক্ষতিগ্রস্থ, অথচ আমার জমি মুক্ত না করে দিয়ে তারা আমার নমিনেশন ফরম বাতিল করে দিয়েছে। যেখানে ২০১৬ সালের রায় আছে যারা মর্গেজ রাখে তারা কোনো ভাবেই ডিফল্ডার হতে পারে না, তাদের সিআইভি নষ্ট হতে পারে না। সেই রায়টাও আমি দেখিয়েছি। সেই রায়ের বিষয়ে কর্ণপাত না করে তারা (নির্বাচন কমিশন) পক্ষপাতিত্ব করে আমার মনোনয়ন ফরম বাতিল করেছে। ১২ লাখ মানুষ যেখানে সরাসরি ভোট দিতে পারে সেই উৎসবের মধ্যে আসছিলাম।
২০১৩ সাল থেকে আমার উপর নির্যাতন শুরু করেছে। ওই সময় আমি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করেছিলাম। সেদিনও কিন্তু আমার মেনানয়ন বাতিল করেছিল। উচ্চ আদালত থেকে আমি অনুমতিও পেয়েছিলাম। ঠিক ২০১৮ সালেও আমাকে কিভাবে সরানো যায় সব ধরনের চেষ্টাই করেছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীতায় সেই সময়ে আমি নির্বাচন করতে পেরেছিলাম। আজকে ২০২৩ সাল আমার এখানে নির্বাচনের সকল প্রক্রিয়া ঠিক রয়েছে। উচ্চ আদালত বলেছিল আমার নির্বাচন করতে কোনো প্রকার বাধা থাকবে না। কিন্তু দেখা গেছে অন্ধকারের হাত দিয়ে আমার নির্বাচন ফরমটা বাতিল করে দিয়েছে। আমি চাচ্ছি এটা অ্যাপিল ডিভিশনে গিয়ে কিভাবে সমাধান করা যায় সেটা করতে। যাদি না হয় তাহলে উচ্চ আদালত পর্যন্ত আমি চেষ্টা করব। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করব। আমি চেষ্টা করব সত্যের পক্ষে একটা জয় নিয়ে আসার জন্য। গাজীপুরে একটা মিথ্যার জয় হয়ে গেছে। এটা যেন কোনো ভাবেই ভবিষ্যতে না হতে পারে সেজন্য সর্বোচ্চ আদালত, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সরকারের প্রধান, দলীয় প্রধান এবং আমাদের সুপ্রীম কোর্ট সকলের কাছে আমি সহযোগীতা চাই। আইনশৃঙ্খলা সদস্য যারা রয়েছেন তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে এখানে যে সকল নাগরিক ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারেন সবাই যেন সবাইকে সহযোগীতা করে।
আমি এবং আমার মাও নমিনেশন ফরম নিয়েছেন। আমার মা’ও সহযোগীতা চাইবে আমি তাকে সহযোগীতা করব। যারা এ শহরের সাথে বেঈমানী করে নাই তাদের যেন সার্বিকভাবে সহযোগীতা করে। আমি আবারো বলছি এবং এখনো বলছি আমি সর্বশেষ চেষ্টা করব এ নগরবাসীকে একটা স্বস্তি দেয়ার জন্য। নগরবাসী আমাকে যে সহযোগীতা করছে তাদেরকে আমি আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। নগরের মানুষের শক্তি আগামী দিনে আমার ভোটের জন্য শক্তি হবে। কোনো ধরনের পেশী শক্তি অন্যায় কিছু যেন এখানে না করতে পারে গাজীপুরের প্রত্যেকটি ভোটার এবং নাগরিকদের অনুরোধ রাখবো আপনারা দিন রাত পাহারা দিন। আপনাদের শহর রক্ষা করবেন। সৎ এবং আদর্শ মানুষকে ভোট দিবেন যারা আপনাদের সাথে প্রতারনা করবে না।