মানিকগঞ্জ-২ আসনে আ.লীগের কোন্দল, মমতাজের বিরুদ্ধে ২ উপজেলা চেয়ারম্যান


সোহরাব হোসেন,সিংগাইর প্রতিনিধি: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মানিকগঞ্জ-২ আসনে (সিংগাইর-হরিরামপুর ও সদরের আংশিক) আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সক্রিয় হয়ে ওঠেছেন।
আসনটিতে টানা ৩ বারের ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য কন্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করলেও এ আসনে দলীয় কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে।
সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলছেন দুই উপজেলা চেয়ারম্যান । দূরে সরে দাঁড়িয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরাও ।
দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম জোরেসোরে উঠান বৈঠক ও কর্মী সমাবেশ করছেন।
অপরদিকে, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুল ‘চায়ের সাথে আড্ডা ’নামে গণসংযোগ করছেন।
জেলা আওয়ামীলীগে সদ্য ঠাঁই পাওয়া অর্থ বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্বাচনী মত বিনিময় সভা ও সিংগাইর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ!
মুশফিকুর রহমান খান হান্নান মত বিনিময়ের ব্যানারে পুরো এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে এ আসনে মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির প্রার্থী এস এম আব্দুল মান্নান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তবে সংরক্ষিত নারী আসনে কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম সংসদ সদস্য হয়ে রাজনীতিতে তার শুরু হয় পথ চলা।
এর পর আওয়ামীলীগের টিকিট পেয়ে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সভা-সমাবেশসহ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামীলীগের এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে আনছেন নানা অভিযোগ।
আওয়ামীলীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান, গত ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ উপজেলা নির্বাচনের পর থেকে দলীয় কোন্দলের সৃষ্টি হয়।
সংসদীয় এলাকা হরিরামপুর উপজেলায় আওয়ামীলীগের প্রার্থী দেওয়ান সাইদুর রহমান উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও সিংগাইর উপজেলায় তার বিপরীত ঘটনা ঘটে।
এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী মুশফিকুর রহমান খান হান্নানের কাছে পরাজিত হন আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুর রহমান শহিদ। অবশ্য উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুল মাজেদ খানসহ দলের একটা অংশ প্রকাশ্যে বিরোধীতা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেন।
বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান হান্নান সদ্য ঘোষিত জেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।
এদিকে, গেল ২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে পুরো জেলার ফলাফলে আওয়ামীলীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিন মাত্র ২৭ ভোটের ব্যবধানে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
আওমামীলীগ প্রার্থীর ভোটের ফলাফলে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে নির্বাচনী এলাকা মানিকগঞ্জ-২ আসনে।
এ নিয়ে ভোটের দিন সিংগাইর উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুর রহমানের সাথে ইউপি চেয়ারম্যানদের বাক-বিতন্ডা হয়।
মুহুর্তের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে । ফলাফল বিপর্যয়ের জন্য পরস্পর বিরোধী বক্তব্য শুরু হয়। ফলে দলীয় কোন্দল আরো প্রকট আকার ধারণ করে।
এ নিয়ে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম ক্ষোভে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ সাপ পালছিলাম দুধ দিয়া ’ বলে স্ট্যাটাাস দেন। এর পর থেকে সিংগাইর উপজেলার ৮ ইউপি চেয়ারম্যান সংসদ সদস্যের কাছ থেকে সরে দাঁড়ান।
তার রাজনৈতিক প্রোগ্রামগুলোতে অধিকাংশ ইউপি চেয়ারম্যানরা অংশ নিচ্ছেন না। আর এই সুযোগ নিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান খান হান্নান।
তিনি বেশ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান নিয়ে ঐক্য গড়ে তুলেছেন।
সম্প্রতি উপজেলা চেয়ারম্যান হান্নান একটি বেসরকারি টেলিভিশনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এ সরকারের সময়ে সারা দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও এ এলাকায় কোনো উন্নয়ন হয়নি।
উন্নয়নমূলক কাজে তাকে দেয়া হয়না এমপির ডিও লেটার। দাওয়াত দেয়া হয় না দলীয় প্রোগ্রামগুলোতেও।
অপরদিকে, হরিরামপুর উপজেলায় রাজনৈতিক কোন্দল আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বালু মহালের ইজারা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধকে কেন্দ্র করে এমপি মমতাজ বেগম ও তার অনুসারিদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
তাকে এমপির লোকজন হত্যা করবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন তিনি। উপজেলা চেয়ারম্যানের লোকজনকে মিথ্যা হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও জানান।
এর জবাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন মমতাজের অনুসারীরা । তারা উপজেলা চেয়ারম্যানের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ফলে এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রুপের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এছাড়া হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের পর কেটে গেল দুই বছর। হয়নি পুর্নাঙ্গ কমিটি।
সিংগাইর উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের পর এক বছর ধরে সভাপতি , সাধারণ সম্পাদক ও য়ুগ্ন সাধারণ সম্পাদক দিয়েই চলছে দলীয় কার্যক্রম।
এ প্রসঙ্গে মানিকগঞ্জ-২আসনের সংসদ সদস্য ও সিংগাইর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের সাথে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও পাওয়া যায়নি তার বক্তব্য। তবে একটি বেসরকারি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, শত্রু সৃষ্টি হওয়ার জন্য দু‘একটি ভালো কাজই যথেষ্ট।
দিন যাচ্ছে আমার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। হাতেগুনা কয়েকজন নেতা আমার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তারা যে দুর্নীতি করেছেন , দেশের ক্ষতি করেছেন আমি তাদের প্রশ্রয় না দেয়ায় আমার বিরুদ্ধে এমন কথাবার্তা বলছেন।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, মনোনয়ন প্রক্রিয়া যখন আসবে তখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামীলীগ কর্মীরা এক বৃত্তে এসে যাবেন।
ভুল বুঝাবুঝি থাকবে না। সব কিছু মিলিয়ে মানিকগঞ্জের তিনটি আসনে ভালো রেজাল্ট দিতে পারবো।