ফরিদপুরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ
তারেকুজ্জামান, ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সকালে ডেঙ্গুতে দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন পরিচালক ডা. এনামুল হক।
মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন: ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের কেশবনগর গ্রামে সুকুমার (৭৭) ও রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার সালমা বেগম (৪২)।
ডা. এনামুল হক জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সুকুমার নামে এক ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার মারা যান তিনি।
অপরদিকে সালমা বেগমও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাতে তিনি মারা যান।
ফরিদপুরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা।
গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৫ জন।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান জানান, বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৮৩ জন।
এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৯৫ জন।
তিনি আরও জানান, হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন নয়জন। এর মধ্যে রাজবাড়ী জেলার চারজন, ফরিদপুরের তিনজন, মাগুরা জেলার একজন ও মাদারীপুরের একজন।
জেলায় এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ২৮২ জন। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৯০ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন বলে জানান তিনি।
ফরিদপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২১ জুলাই প্রথম একজন মারা গেছেন। ২০১৮ থেকে গত সাড়ে পাঁচ বছরে ফরিদপুরে ডেঙ্গুতে এটাই কোনো মৃত্যুর ঘটনা। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত ২০ দিনে ডেঙ্গুতে ৯ জন মারা গেছেন।
ফরিদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ফরিদপুরে ২০১৮ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ৫৯ জন, ২০১৯ সালে ৮৭, ২০২০ সালে ২০৩, ২০২১ সালে ৩৮৭ জন এবং ২০২২ সালে আক্রান্ত হন ১ হাজার ২২৯ জন।
এই হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে ফরিদপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ২০২১–এর তুলনায় ২০২২ সালে এ বৃদ্ধি ৩ দশমিক ১৮ গুণ।
প্রতিবছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে।
চলতি বছরের গত সাত মাসের মধ্যে জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে কেউ আক্রান্ত হননি। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ জন, মার্চে ৭, এপ্রিলে ১২, মে মাসে ১৯, জুনে ৪৩ জন এবং জুলাইয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৬২০ জন।
অর্থাৎ জুনের তুলনায় জুলাইয়ে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে ১৪ দশমিক ৪২ গুণ। আগস্টে এ হার যে আরও বাড়বে, তা বলাই যাচ্ছে। চলতি মাসের প্রথম ৯ দিনে ফরিদপুরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৫০ জন।
অর্থাৎ গত জুলাইয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা আগস্টের ৯ দিনেই অতিক্রম করে আরও ৩৩০ জন রোগী বেশি হয়েছে।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী বাড়ার প্রেক্ষাপটে গত ২০ জুলাই ৩৭ শয্যার একটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আজ ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন ১৯৫ জন।
নির্ধারিত ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ধারণক্ষমতা কম হওয়ায় পুরুষ ও নারী মেডিসিন এবং পেয়িং ওয়ার্ডে ডেঙ্গু কর্নার করে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তারপরও শয্যার সংকুলান না হওয়ায় ওয়ার্ডের মেঝেতে, হাসপাতালের করিডরে ও বারান্দায় ডেঙ্গু রোগীদের রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, ফরিদপুরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
সবার আন্তরিকতা ছাড়া এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কষ্টকর। তিনি বলেন, সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।