অজুর মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন সম্ভব

আপডেট: September 1, 2023 |

পবিত্র কোরআনে বিশেষভাবে নামাজ ও পবিত্র কোরআন পড়ার আগে অজু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে শারীরিক পবিত্রতা লাভের জন্য গোসলের পরে অজুর স্থান। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সুরা মায়িদায় বলা হয়েছে অজুর নিয়মকানুন। ‘অজু’ আরবি শব্দ। এর অর্থ পরিচ্ছন্ন, সুন্দর ও স্বচ্ছ। পারিভাষিক অর্থে বিশেষ নিয়মে বিভিন্ন অঙ্গ ধৌত করাকে অজু বলা হয়। অজু নামাজের অপরিহার্য শর্ত।

শরীর অপবিত্র হওয়ার কারণ হলো- পায়খানা-প্রস্রাব করা, বায়ু নিঃসরণ, স্ত্রী সংসর্গ, অচেতন হওয়া বা ঘুমিয়ে পড়া, রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। এ অপবিত্র অবস্থা থেকে পবিত্র অবস্থায় ফিরে আসার জন্য অজুর প্রয়োজন হয়।

অজু তিন প্রকার: ফরজ, ওয়াজিব এবং মুস্তাহাব। নামাজের জন্য অজু ফরজ। কাবা শরিফ তওয়াফের জন্য অজু করা ওয়াজিব। গোসল ও ঘুমানোর আগে অজু করা মুস্তাহাব।

নামাজ ছাড়াও অনেক ইবাদতের জন্য অজু করতে হয়। অজুর বিধান সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে মুমিনরা, যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমাদের মুখ ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং মাথা মাসেহ করবে আর পা টাখনু (গ্রন্থি) পর্যন্ত ধৌত করবে। সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৬।

অজুতে আছে বহুবিধ উপকার-
এ কথা সর্বজনস্বীকৃত যে আল্লাহ তাআলার সৃজিত ঔষধে যেমন একাধিক উপকার ও কল্যাণ থাকে, অনুরূপ তাঁর বিধানের মধ্যেও বিভিন্ন হিকমত ও রহস্য লুক্কায়িত থাকে। একেকটি লতা-পাতা ও ঔষধে তিনি হাজারো গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্য রেখেছেন। এমনকি একটি ঔষধ দ্বারা অনেক অনেক রোগ প্রতিহত হয়ে যায়। সুতরাং উল্লিখিত নিয়ম অনুযায়ী নিচে আমরা অজুর যতগুলো হিকমত ও রহস্য উল্লেখ করেছি। অজুর মধ্যে আরো বহু হিকমত আছে, যেগুলোর জ্ঞান আমাদের কাছে নেই।

অজু মানুষের অলসতা দূর করে থাকে : অজু মানুষকে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ গুনাহ ও অলসতা বর্জন করার প্রতি প্রেরণা সৃষ্টি করে। যদি অজু ছাড়া নামাজ পড়া স্বীকৃত হতো, তাহলে মানুষ অলসতার মাঝে উন্মাদের মতো বিচরণ করত এবং অলসতা অবস্থায়ই নামাজে প্রবেশ করত। যেমন—পার্থিব চিন্তা-ফিকির ও ব্যস্ততায় লিপ্ত হয়ে মানুষ নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির মতো হয়ে যায়। তাই অলসতার নেশাকে দূর করার জন্য অজুর বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে, যেন মানুষ একাগ্রচিত্তে ও নিবিষ্টমনে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হয়।

অজু আগত কষ্ট থেকে রক্ষা করে : চিকিৎসাবিদদের অভিজ্ঞতা এ কথা চাক্ষুষ প্রমাণ বহন করে যে, মানুষের দেহের অভ্যন্তরীণ বিষাক্ত পদার্থ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বের হতে থাকে এবং তা হাত-পা, মুখ ও মাথার ওপর অবস্থান করে। অতঃপর বিভিন্ন প্রকারের বিষাক্ত পদার্থ ফোঁড়া-পাঁচড়ার আকৃতিতে দেহে প্রকাশ পায়। আর দেহের অঙ্গগুলো ধৌত করার দ্বারা এসব দূষিত বস্তু দূর হয়ে যায়। হয়তো দেহের ভেতর এগুলোর উত্তপ্ততা পানির মাধ্যমে ঠাণ্ডা হয়ে যায় অথবা দেহ থেকে বের হয়ে যায়।

অজুর মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করা যায়-আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের নিয়তে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতা আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দা বানিয়ে দেয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ (বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ) পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২২।

অজু ফেরেশতাসুলভ স্বভাব তৈরি করে- যখন পবিত্রতার গুণ অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে যায় তখন সর্বদা ফেরেশতাসুলভ গুণের জ্যোতি (নুর) ব্যক্তির মধ্যে অবস্থান করে এবং পশুত্বের অন্ধকার দূর হয়ে যায়।

অজু জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়ক : অজুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন হয়। আর পবিত্রতা চরিত্রের মধ্যে জ্ঞানের উপকরণ বৃদ্ধি করে। আর জ্ঞান যখন পরিপূর্ণ হবে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কও তখন পরিপূর্ণ হবে।

অজু প্রশান্তি ও জ্যোতি ফিরিয়ে আনে : গুনাহ ও অলসতার কারণে আত্মার যে প্রশান্তি ও জ্যোতি দেহের অঙ্গ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অজুর মাধ্যমে তা পুনরায় ফিরে আসে। এ আধ্যাত্মিক জ্যোতিই কিয়ামতের দিন অজুর অঙ্গগুলোতে উজ্জ্বল দীপ্তিমান হয়ে প্রকাশিত হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন যখন আমার উম্মত আগমন করবে তখন অজুর কারণে তাদের হাত, পা ও চেহারা জ্যোতিতে চমকাতে থাকবে। এ জন্য তোমাদের মধ্যে যার ইচ্ছা সে যেন তার জ্যোতি বৃদ্ধি করে নেয়। বুখারি, হাদিস : ১৩৬।

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘অজুর মাধ্যমে মানুষের অন্তরে নুর বা জ্যোতি সৃষ্টি হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে স্থান পর্যন্ত অজুর পানি পৌঁছবে সে স্থান পর্যন্ত মুমিন ব্যক্তির ঔজ্জ্বল্য বা সৌন্দর্য পৌঁছবে।’ মুসলিম, হাদিস : ৪৭৪।

অজুর কারণে ফেরেশতাদের নৈকট্য লাভ হয় – পবিত্রতার কারণে ফেরেশতাদের সঙ্গে মানুষের নৈকট্য ও সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। কেননা, ফেরেশতারা নাপাক ও অপরিচ্ছন্ন লোকদের ঘৃণা করেন এবং পবিত্র লোকদের পছন্দ করেন। ফলে আল্লাহ তাআলার দরবারের নৈকট্যলাভের সৌভাগ্য হয়। অন্যদিকে পবিত্রতার কারণে মানুষের সঙ্গে শয়তানের দূরত্ব সৃষ্টি হয়।

অজু বিশেষ ইবাদতে প্রবেশের মাধ্যম – নামাজ আল্লাহর বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত, তাই সেই ইবাদতে প্রবেশ করার জন্য অজু আবশ্যক করা হয়েছে। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘পবিত্রতা নামাজের চাবি।’ (মুসলিম, হাদিস : ২২৩)

অজু নামাজের আনুষ্ঠানিকতা আল্লাহর দরবারে পেশ করার প্রাথমিক প্রস্তুতিস্বরূপ।

অজু দেহের প্রধান অঙ্গে শক্তি আনে : অভিজ্ঞতার আলোকে এ কথা প্রমাণিত যে হাত-পা ধৌত করা, চেহারা ও মাথার ওপর পানি ঢালার দ্বারা অন্তরের ওপর বিরাট প্রভাব পড়ে এবং দেহের প্রধান অঙ্গে শক্তি ও সচেতনতা সৃষ্টি হয়। এর দ্বারা অলসতা, অবহেলা এবং উন্মাদনা দূর হয়ে যায়। এ অভিজ্ঞতার সত্যতা বিচক্ষণ চিকিৎসক থেকে প্রমাণিত।

মানুষকে আদেশ করা হয়েছে যে নিজের আত্মার অলসতা, নিস্তেজতা ও অপরিচ্ছন্নতাকে অজুর মাধ্যমে দূর করো, যেন আল্লাহ তাআলার সামনে দাঁড়ানোর যোগ্যতা তৈরি হয়। কেননা, তিনি সদা জাগ্রত ও সতর্ক। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘…আল্লাহকে অলসতা ও নিদ্রা আচ্ছাদন করতে পারে না। সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৫

সুতরাং অলস ও অসচেতন ব্যক্তি তাঁর সম্মুখে দাঁড়ানোর যোগ্যতা রাখে না এ কারণেই নেশা অবস্থায় নামাজ আদায় করা স্বীকৃত নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা নামাজের কাছে যেও না। সুরা : নিসা, আয়াত : ৪৩। আহকামে ইসলাম আকল কি নজর মে অবলম্বনে রচিত।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর