ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বৈধতা নিয়ে ঐতিহাসিক শুনানি শুরু

আপডেট: February 19, 2024 |

 

জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের ৫৭ বছরের দখলদারিত্বের বৈধতা নিয়ে ঐতিহাসিক শুনানি শুরু হয়েছে।

আজ সোমবার নেদারল্যান্ডসে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) সপ্তাহব্যাপী এই শুনানি কার্যক্রম এমন সময়ে শুরু হলো, যখন ইসরায়েল গাজায় ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ২৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এই মামলাটি গাজায় চলমান যুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিজে-তে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা গণহত্যার মামলা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

এই মামলায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ১৯৬৭ সাল থেকে পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেমে দখলদারিত্বের অভিযোগ আনা হয়েছে। ফিলিস্তিনিরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য তিনটি এলাকাই চায়।

ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি দল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আজ সোমবার শুনানির প্রথম দিনে তারা ইসরায়েলের দখলদারিত্ব যে অবৈধ, তার ওপর যুক্তি উপস্থাপন করবেন আদালতে।

ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি দলের দাবি, ইসরায়েল ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডের বিশাল অংশ দখল করেছে, ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার লঙ্ঘন করেছে এবং জাতিগত বৈষম্য ও বর্ণবাদের ব্যবস্থা চাপিয়েছে।

১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অঞ্চলে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। কিন্তু মৌখিকভাবে তাতে স্বীকৃতি দিলেও বাস্তবে ইসরায়েল নিয়মিত সেই সীমানা লঙ্ঘণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ (ইউএনজিএ) ১৫-বিচারকের প্যানেলকে ইসরায়েলি দখলের বিষয়ে একটি উপদেশমূলক মতামত জানতে চাইলে তাতে ব্যাপক ভোট পড়ায় মামলাটি আদালতে পৌঁছায়।

ফিলিস্তিনিরা আদালতে তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করার পর ৫১টি দেশ এবং তিনটি সংস্থা- লিগ অব আরব স্টেটস, অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন বিচারকদের সামনে বক্তব্য তুলে ধরবেন।

আইসিজের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে দখল, বসতি স্থাপন এবং নিজেদের সীমানা বর্ধিতকরণের মাধ্যমে ১৯৬৭ সালের নির্ধারিত সীমানার বিকৃতি সাধনের অভিযোগ উঠেছিল এবং তদন্তে তার সত্যতা পাওয়া গেছে। এর ভিত্তিতেই সপ্তাহব্যাপী এই শুনানির আহ্বান করা হয়েছে। শুনানিতে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল- উভয়পক্ষকে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।

তবে ইসরায়েল আদালতে উপস্থিত হয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে অংশ নেবে না। তারা এরই মধ্যে তাদের লিখিত পর্যবেক্ষণ পাঠিয়েছে।

ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে মিসর, জর্ডান ও সিরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের সময় পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ২০০৫ সালে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দেয় তেল আবিব।

পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা পিস নাউর হিসাবে, দখলকৃত পশ্চিম তীরে ১৪৬টি বসতি তৈরি করেছে ইসরায়েল এবং এখানে ৫ লাখেরও বেশি ইহুদি বসতি স্থাপনকারী রয়েছে। পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীর সংখ্যা গত পাঁচ বছরে ১৫ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমের সীমানাভূক্ত এলাকাও দখল করেছে এবং পুরো শহরটিকে তাদের রাজধানী বলে মনে করে। ২ লাখেরও বেশি ইসরায়েলি পূর্ব জেরুজালেমে বসবাস করছে। এ শহরের ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা পদ্ধতিগত বৈষম্যের সম্মুখীন হোন, যার ফলে তাদের জন্য নতুন বাড়ি তৈরি করা বা বিদ্যমান বাড়ি সম্প্রসারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলি বসতিগুলোকে অবৈধ বলে মনে করে। শহরটির সবচেয়ে সংবেদনশীল পবিত্র স্থানের আবাসস্থল পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরায়েলের অধিভুক্ত করা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়।

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতিসংঘের সংস্থা বিভাগের প্রধান ওমর আওয়াদাল্লাহ বলেছেন, আমরা আদালত থেকে নতুন কিছু শুনতে চাই। আমরা চাই, আদালত বর্ণবাদের বিষয়টি বিবেচনা করুক। আওয়াদাল্লাহ বলেছেন, আদালতের পরামর্শমূলক মতামত ও শান্তিপূর্ণ আন্তর্জাতিক আইনের ব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধ দখলদারিত্ব মোকাবিলা করতে আমাদের বড় হাতিয়ার হবে।

আইসিজে আদালতের বর্তমান সভাপতি হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের জুয়ান ডোনোহুই। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, স্লোভাকিয়া, জ্যামাইকা, জাপান, ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন, মরক্কো, সোমালিয়া, লেবানন ও উগান্ডার। এই মামলার রায় হতে মাসখানেক সময় লাগতে পারে।

 

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর