“ধর্ষণের অভিযোগ মিথ্যা” দাবি সেই রেল কর্মকর্তার

আপডেট: March 23, 2025 |
inbound5070177193405654882
print news

গত ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে গণমাধ্যমে প্রকাশ পায় একটি রিপোর্ট যার শিরোনাম ছিল ‍‌‌”‌বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ— উপদেষ্টার কাছে ‘রেল কর্মকর্তা’র বিরুদ্ধে অভিযোগ” যেখানে বাংলাদেশ রেলওয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর (টিসি) মোঃ আনসার আলীর নারী কেলেঙ্কারির ঘটনাকে বর্ণনা করা হয়েছে

এবার এই প্রতিবেদনকে অসত্য এবং পুরো ঘটনাকে উদ্দেশ্য প্রণীত বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত আনসার আলী।

তিনি বলেন অভিযোগকারী শিরিন নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরের মেয়ে তিনি নিজেও রেলওয়েতে অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে কর্মরত।

আমি রেলের বড় অফিসার ভেবে এই মেয়ে বিভিন্ন সময় আমার সাথে সাক্ষ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে, সে আমাকে বলে তার গ্রামের বাড়ি আমার গ্রামের বাড়ি এক জায়গায় অর্থাৎ মাগুরা, এজন্য সে আমার সাথে পরিচিত হতে চায় এর কিছুদিন পর সে আমার ফোন নম্বর এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে মেসেজ করতে থাকে।

এক পর্যায়ে সাধারণ মেয়ে ভেবে আমি তার সাথে কথা বলি। এভাবে চলতে থাকে বেশ কিছুদিন হঠাৎ আমাকে একদিন সে তার মায়ের হাতের পিঠা খাওয়ার দাওয়াত দেয়, অনেক অনুরোধের বশে আমি তার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী সেখানে যাই এবং পরবর্তী সে আমাকে তাদের গ্রামের বাড়ি থেকে আনা কয়েকটি পিঠা খেতে দেয়।

পিঠা খাওয়ার আমার আর তেমন কিছু মনে পড়ে না হঠাৎ একদিন সে আমার ফোনে কিছু অপ্রস্তুত মুহূর্তের ছবি পাঠায় যা দেখার পরে আমি হতাশ হই এবং আতকে উঠি।

সেখানে আমি দেখতে পাই আমি অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছি এবং শিরিন আমার পাশে হেসে হেসে ছবি তুলছে আমি তার উদ্দেশ্য বুঝে ফেলি এবং সাথে সাথে তাকে তার এই ঘৃণ্য কাজের জন্য আইনের আওতায় আনা হবে বলি।

এই কথা শুনে সে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে বলে এসব আমার পরিবারের কাছে পাঠাবে এরপর আমি ভয় পাই এবং চুপ থাকি।

এবার সে দিনের পর দিন বিভিন্ন অজুহাতে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে এবং মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।

কিছুদিন যেতে না যেতেই শিরীনের লোভের মাত্রা অতিক্রম করে এবার সে আমাকে বলে তাকে বিয়ে করতে হবে না হলে আমার অবস্থা ভয়ংকর হবে কিন্তু তাতে আমি কোনভাবেই রাজি হই না বরং আমি কিছুটা সাহস নিয়ে বলি আমি আর তোমার কথা মতো চলবো না আমি এর শেষ দেখতে চাই।

এরপর শিরীন আক্তার ও তার কিছু লোকজন দিয়ে এই ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেয় এবং তার একটি মনগড়া গল্প গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করে।

এ সময় আনসার আলী বলেন গণমাধ্যমের সেই রিপোর্টে দেখলাম শিরীন আক্তার অভিযোগ করেছেন আমি নাকি গত ২০ শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখের রাত ৯ টা ৩০ মিনিটে শিরীনের পৈতৃক নিবাসে যাই এবং তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেই আবার রাতে তার ওই পিত্রালয়ে থাকি এবং তাকে ধর্ষণ করি এবং পরের দিন নাকি আবার আমি সকালে পালিয়ে যাই !

অথচ সত্য এটাই যে আমি ওই তারিখে আমাদের পল্টনের রেলওয়ের অফিসে ছিলাম চাইলে আমার ফোনের লোকেশন এর রিপোর্ট দেখতে পারেন ।

আর একটু খেয়াল করলে দেখতে পাবেন ওখানে বলা হচ্ছে আমি নাকি তাকে রাতে ধর্ষণ করেছি এবং সকালে তার বাড়ি থেকে পালিয়েছি আচ্ছা যে ধর্ষক ধর্ষণ করে সে কি ধর্ষণের পর ওইখানে অবস্থান করবে নাকি পালিয়ে যাবে?

কতটা হাস্যকর কাহিনী দেখেন আমি রাতে ওনাকে ধর্ষণ করেছি আর ওনার বাড়িতে ধর্ষণের পর ঘুমিয়ে সকালে পালিয়েছি এটা কি বিশ্বাসযোগ্য ? এতে কি প্রমাণ হয় না যে এসকল কাহিনী তার মনগড়া এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত?

আবার দেখুন আমার সাথে তার যে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি প্রমাণ হিসেবে দেখিয়েছে সেখানে আমি অচেতনভাবে শুয়ে আছি অথচ সে হাস্যজ্জল মুখে আচ্ছা কোন মেয়ে ধর্ষিতা হলে ধর্ষণের পর কি এভাবে হেসে সেলফি তুলতে পারে?

এবার আমার প্রশ্ন হচ্ছে এখানে ধর্ষক কে আর ধর্ষিতা কে ?

আবার দেখেন আমাকে নিয়ে সে যে অসত্য বানোয়াট কাহিনী গণমাধ্যমে বর্ননা করেছে সেই সাংবাদের শেষের দিকে স্পষ্ট করে লেখা আছে যে অনেকে বলছে, ”ভাইরাল হওয়া ছবিতে আনসারকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখা গেছে তাহলে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলো কখন ? তাছাড়া ছবিটির শিরীন নিজেই তুলে রেখেছিল এর মানে ওই মেয়ের মনে নিশ্চয় দুরভিসন্ধি ছিল।

এ সময় আনসার আরো বলেন, এই মেয়ের আগেও একাধিক বিয়ে ও সম্পর্ক ছিলো বিয়ের একাধিক কাবিননামার প্রমাণ আমার কাছে আছে আমি আপনাদের দিতে পারি।

এ সময় তিনি গণমাধ্যমকে শিরীন আক্তারের কিছু কাবিননামা দেখান। তবে তা সত্য কিনা তা স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।

এদিকে আনসার আলীর বলা ঘটনা সত্যতা জানার জন্য শিরীন আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তা অস্বীকার করেন এবং তিনি বলেন আনসার আলী অসত্য বলেছেন তিনি একটা মিথ্যাবাদী।

এদিকে সারে জমিনে গিয়ে জানা যায়, শিরিন আক্তারের একটি কন্যা সন্তান আছে এবং একটি অজানা কারণে তার আগের সংসার টিকেনি।

এদিকে এই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিরীন আক্তার পড়েছেন বেশ সমালোচনার মুখে রেল সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, তারা দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক, জোর করে কিছু হয়নি। তাহলে শিরিন আক্তার নিজেকে ধর্ষিতা কিভাবে দাবি করেন?

এদিকে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের পর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয় এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে রেল সচিব মোহাম্মদ মোঃ ফাইমুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে আনসার আলেকে বরখাস্তের তথ্যটি জানা যায়

প্রজ্ঞাপণে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি মোতাবেক অসদাচরণের অভিযোগে বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ১২ (১) অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ আনসার আলীকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে।

এছাড়াও প্রজ্ঞাপণে আরও বলা হয়, সাময়িকভাবে বরখাস্ত হলেও তিনি বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা পাবেন। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

এদিকে অভিযুক্ত রেল কর্মকর্তা আনসার আলী তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে অসত্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পাশাপাশি পূর্ণ তদন্তের দাবি করেছেন।

এদিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলায় সর্বোচ্চ সাজা সাত বছর রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।

পাশাপাশি ধর্ষণের মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রেও কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের (২০০০) সংশোধনীতে ধর্ষণের মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে।

আগে বিধান ছিল মিথ্যা মামলার যারা ভিকটিম তাদের অভিযোগ জানাতে হতো। বর্তমান সংশোধিত আইনে ধর্ষণের বিচারের মামলার রায় ঘোষণার পর বিচারকের যদি মনে হয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দেওয়া হয়েছে তাহলে তিনি (বিচারক) স্বতপ্রণোদিতভাবে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর