মস্কোয় বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ

আপডেট: April 17, 2025 |
inbound4086221013102101823
print news

বিশেষ প্রতিনিধি: মস্কোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত মো. ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক যৌন হয়রানির অভিযোগ ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জমা পড়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি মস্কো ও বিভিন্ন মিশনে দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশি নারী সহকর্মী, ছাত্রী এবং শ্রমিকদের যৌন হয়রানি ও অশোভন আচরণ করেছেন। নানাভাবে মানসিক চাপ প্রয়োগ করা, একাডেমিক ও পেশাগত ক্ষতির হুমকি দিয়েছেন।

ভুক্তভোগীদের একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া একটি দীর্ঘ স্টাটাসে অভিযোগের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ফয়সাল আহমেদ কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এক ছাত্রী এবং তাঁর সহপাঠীরা।

ওই স্টাটাসে আরও দাবি করা হয়, ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার অভিযোগ জানানো হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তার বিরুদ্ধে মুখ খোলা শিক্ষার্থীদের রাশিয়ায় থাকা ও বৃত্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছেন। তিনি সামাজিকভাবে হেয় করার ভয় দেখিয়ে অভিযোগকারীদের চুপ করে থাকতে বাধ্য করেন।

রাশিয়ায় অধ্যয়নরত একাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত মেয়েদের রাতে আপত্তিকর খুদে বার্তা পাঠান।

এসব বার্তা অশোভনীয় এবং আপত্তিকর। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকে দূতাবাসের প্রয়োজনীয় সেবা থেকেও বঞ্চিত করা হয়।

অভিযোগকারীদের দাবি, তাদের কাছে মোবাইল ফোনের খুদে বার্তা, ভয়েস মেসেজ এবং স্ক্রিনশটসহ একাধিক প্রমাণ রয়েছে। সেসব প্রমাণ ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়েছে।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিলেও অজানা কারণে সেটি আলোর মুখ দেখেনি।

এছাড়া, রাশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার বিষয়ে গাফিলতি এবং খারাপ আচরণের অভিযোগও উঠেছে মো. ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে।

রাশিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (আরবিসিসিআই)Ñএর সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী ফেসবুকে এক পোস্টে রাষ্ট্রদূতের আচরণকে সরাসরি ‘মাস্তানি’ বলে মন্তব্য করেছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এসব অভিযোগ স্পর্শকাতর। তাই গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করছে মন্ত্রণালয়।

প্রাথমিক যাচাইয়ের ভিত্তিতে প্রয়োজনে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই ঘটনায় রাশিয়ায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও অভিবাসীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, মিশনে দায়িত্বরতদের কাজ বাংলাদেশি শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

সেটা না করে রক্ষক যদি ভক্ষক হয়ে হুমকি দেয়, হয়রানি করে- তাহলে আমরা কার কাছে যাবো, কোথায় যাবো প্রতিকারের জন্য?

জানা গেছে, মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গেও অশোভন আচরণ করেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত।

তারা বলছেন, উনার কর্মকা-, ব্যবহার ও মুখের ভাষা কোনমতেই কূটনৈতিক সুলভ নয়। তাকে মস্কো থেকে ‌‌দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি জানান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

প্রসঙ্গত, ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত মো. ফয়সাল আহমেদ এর আগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে সাম্প্রতিক অভিযোগ তার কূটনৈতিক ক্যারিয়ারকে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দায়িত্ব পালনে অসঙ্গতি ও বাজে অভ্যাসের কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই পদোন্নতিতে পিছিয়ে রয়েছেন।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর