ই-ক্যাবের দখল নিতে চাই আওয়ামীপন্থি ব্যবসায়ীরা

আপডেট: May 7, 2025 |
inbound6010765927046498829
print news

আর শাহারিয়া সুইট, নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ই-কমার্স খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) পুনরায় দখলের চেষ্টা করছেন আওয়ামীপন্থি ব্যবসায়ীরা।

সংগঠনটির সাবেক সভাপতি অভিনেত্রী শমী কায়সার, সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল এবং পরিচালক নাসিমা আক্তার নিশা ই-ক্যাবে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে আসন্ন নির্বাচনে দাঁড় করাচ্ছেন নিজেদের বিশ্বস্ত প্রার্থীদের।

আর এই কাজে তারা সহায়তা পাচ্ছেন বিএনপিপন্থি নেতাদের।

ভোল পালটে সংগঠনটির কার্যনির্বাহী পরিষদের (ইসি) আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চিহ্নিত আওয়ামীপন্থিরা।

অভিযোগ উঠেছে, বিরোধী মতকে দমিয়ে বিএনপিপন্থি ব্যবসায়ী নেতাদের সমর্থনে একরকম ফাঁকা মাঠে আওয়ামীপন্থিদের বিজয় নিশ্চিতের পাঁয়তারা চলছে।

আগামী ৩১ মে ই-ক্যাবের কার্যনির্বাহী পরিষদের ১১টি পরিচালক পদের বিপরীতে লড়াই করবেন ৩৬ জন প্রার্থী।

এই নির্বাচনে ‘ন্যাশনালিস্ট অ্যালায়েন্স’ নামক প্যানেলকে বিএনপিপন্থি প্যানেল বলা হচ্ছে, যার নেতৃত্বের মূলে রয়েছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী আব্দুল আলীমের ছেলে এবং বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফয়সাল আলিম।

তিনি নিজে নির্বাচন না করলেও এই প্যানেলের সম্মুখভাগে রাখা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহ-সম্পাদক প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিনের স্ত্রী শাপলা হককে।

এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসলেও, এই প্যানেলে থাকতে পারেন অন্তত তিনজন আওয়ামী দোসর, যারা ইতোমধ্যে প্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করেছেন।

এদের মাঝে অন্যতম হোসনে আরা নওরীন, ই-ক্যাবের সাবেক সভাপতি শমী কায়সার এবং পরিচালক নাসিমা আক্তার নিশার খুবই ঘনিষ্ঠ।

তাদের সাথে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে দ্রুতই পৌঁছে যান সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ‘পছন্দের’ তালিকায়।

গাড়ি-বাড়ি থাকলেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের আওতাধীন ‘আইডিয়া’ প্রকল্প থেকে দেওয়া অনুদানও পেয়েছিলেন এই নওরীন।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে পলকের সাথে কেক কেটেছেন, বসেছেন পাশের চেয়ারে।

শুধু তাই নয়, ২০২১ সালে দেশে সংঘটিত ই-কমার্স প্রতারণার দায়ে দুষ্ট ই-ক্যাবের তৎকালীন ইসি নেতৃবৃন্দেরও আস্থাভাজন এই নওরীন।

শমী কায়সার নেতৃত্বাধীন কমিটিতে মেম্বার অ্যাফেয়ার্স স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। এখন নিজেই ই-ক্যাবের আগামী শমী কায়সার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

এ বিষয়ে তার মতামত জানতে যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি। যোগাযোগের কারণ উল্লেখ করে ক্ষুদেবার্তা দেওয়া হলেও, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

তালিকার দুই নম্বরে আছেন শমী কায়সারের কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন শিপন।

এই শিপন ই-ক্যাবের প্রতিনিধি হিসেবে ইভ্যালির বোর্ডেও সদস্য ছিলেন। দীর্ঘদিন এই পদের দায়িত্বে থেকেও গ্রাহকদের অর্থ ফেরাতে উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি তিনি।

সূত্র বলছে, ই-ক্যাবের পরিচালনা পর্ষদে থেকে শমী কায়সারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করাই ছিল তার গুরুদায়িত্ব। তাকেও বক্তব্যের জন্য ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।

যোগাযোগের কারণ উল্লেখ করে ক্ষুদেবার্তা দেওয়া হলেও, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে সরকারি অর্থ লুটপাটে ই-ক্যাবের অন্যতম প্রকল্প ‘ডিজিটাল পল্লী’ সম্পর্কিত স্ট্যান্ডিং কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জাহিদুজ্জামান সাঈদ।

গ্রামকে ডিজিটাল করার নামে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ টাকা ই-ক্যাবের হাতিয়ে নেওয়ার অন্যতম মাধ্যম ছিল এই প্রকল্প।

পলক ছাড়াও জাহিদুজ্জামানের বিশেষ সখ্য ছিল আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকের সাথেও।

শেখ মুজিবুর রহমানের বন্দনায় ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শিরোনামে অনলাইন টকশো সঞ্চালনা করতেন তিনি।

অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কোনো দলের দোসর ছিলাম না, কেউ এটা বললে ভুল হবে।

আমি কাজের লোক, আমি শুধু কাজ করেছি। আমার কাজ হলো ‘এক্সপার্ট’ হিসেবে কাজ করা, সেটা যে সরকারই আসুক না কেন। আর নির্বাচনও কোনো প্যানেলের হয়ে করছি না।’

প্যানেলের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শমী কায়সারের আরেক ঘনিষ্ঠ খালিদ সাইফুল্লাহ। শমী কায়সারের নির্বাচনি প্যানেল ‘অগ্রগামী’র অন্যতম কর্মী ছিলেন তিনি।

এমনকি শমী কায়সার কমিটির আমলে এফ-কমার্স স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। সেই খালিদ সাইফুল্লাহও এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ই-ক্যাব নির্বাচনে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। ই-ক্যাবের এই নেতারা এখন ৫ আগস্টের পর ভোল পালটে ভেড়ার চেষ্টা করছেন বিএনপিপন্থি ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে।

সূত্র বলছে, এই কাজে অনেকখানি সফলও হয়েছেন তারা। এ জন্যই বিএনপি নেতা ফয়সাল আলিমের ছত্রছায়ায় প্যানেলের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন তারা।

অনুসন্ধান বলছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর ‘বৈষম্যবিরোধী ই-ক্যাব’-এর ব্যানারে রাজধানীর বনানীস্থ ই-ক্যাবের প্রধান কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের একটি গোষ্ঠী।

উদ্দেশ্য ছিল, কার্যালয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ই-ক্যাবের পরিচালনা পর্ষদে আসীন হওয়া।

এজন্য সে সময় তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজনেরও চেষ্টা হয়েছিল। আর সেই নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন মাত্র ১১ জন।

অর্থাৎ ১১টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের মাধ্যমে ই-ক্যাব দখলের পাঁয়তারা ছিল ওই অংশের। এজন্য অন্যান্য সাধারণ সদস্যদেরও হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছিল।

সূত্র বলছে, বৈষম্যবিরোধী ই-ক্যাবকে সামনে রেখে পেছনে থেকে এর কলকাঠি নেড়েছিলেন ফায়সাল আলিম।

ফয়সাল আলিম নির্ধারিত ১১ জনের তালিকায়ও ছিলেন ওই তিন আওয়ামী দোসর। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসক নিয়োগ করা হলে, ভেস্তে যায় সে সময় ই-ক্যাব দখলের পাঁয়তারা।

ই-ক্যাবের নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় ফয়সাল আলীমের সঙ্গে। ই-ক্যাব ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করলে তার প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান তিনি বিদেশে আছেন।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর