মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালাতে পারে ইরান: রিপোর্ট

আপডেট: June 14, 2025 |
inbound7461642368680682694
print news

পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলার জবাবে ইসরায়েলে ‘শত শত বিভিন্ন ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র’ নিক্ষেপ করেছে ইরান। এবার মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতেও হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে ইরান।

শনিবার (১৪ জুন) ফার্স সংবাদ সংস্থার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে স্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল।

এক সূত্র সংস্থাটিকে জানিয়েছে, ইসরায়েলি সরকারের আগ্রাসনের ফলে শুরু হওয়া যুদ্ধ এই সরকারের দখলকৃত সব অঞ্চল এবং এই অঞ্চলে মার্কিন ঘাঁটিতে ছড়িয়ে পড়বে। আক্রমণকারীরা ইরানের কাছ থেকে একটি বড় আকারের প্রতিক্রিয়া পাবে।

ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর বরাত দিয়ে ফার্স সংবাদ সংস্থা জানায়, আরেশ আত্মঘাতী ড্রোনগুলো ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড্রোনগুলো ইসরায়েলের ভূখণ্ডে পৌঁছাতে পেরেছে এবং এগুলোর পরিচালনাকারীদের দ্বারা নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করতে সক্ষম হয়েছিল।

এদিকে, জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে খামেনি বলেন, ‘ ইসরায়েল বড় ভুল করে ফেলেছে, যার পরিণতি তাদের জীবন অন্ধকার করে দিতে পারে।’

কঠোর প্রতিশোধের বার্তা দিয়ে খামেনি বলেন, ‘ইরান এ হামলার জবাব হালকাভাবে দেবে না এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের প্রতি কোনো সহনশীলতা দেখাব না। কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত এবং তা নেওয়া হবেই। আমাদের ইসলামী প্রজাতন্ত্র ও আল্লাহর অনুগ্রহে, ইহুদিবাদী সরকারকে আমরা পরাজিত করব ইনশাআল্লাহ।’

জাতীয় ঐক্যের বার্তা দিয়ে আয়াতুল্লাহ খামেনি দাবি করেন, পুরো ইরানি জাতি এবং সশস্ত্র বাহিনী এই প্রতিশোধে একাত্মতা গ্রহণ করবে। আমাদের সমগ্র জাতি সশস্ত্র বাহিনীর পেছনে রয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই আগ্রাসনের জবাব দেব।’

এর আগে, ইরানের রাজধানী তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হামলা চালায় ইসরায়েল। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা নূর নিউজের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

এদিকে, এক বিবৃতিতে খামেনি বলেন, ভোরবেলায় ইহুদিবাদী সরকার আমাদের প্রিয় দেশের বুকে তার রক্তাক্ত ও কলুষিত হাত বিস্তার করেছে, আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়ে আগের থেকেও স্পষ্টভাবে তার বর্বর স্বভাব প্রকাশ করেছে। এর জন্য তাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতেই হবে।

তিনি বলেন, এই হামলার মাধ্যমে ইহুদিবাদীরা নিজেদের জন্য এক তিক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক পরিণতি ডেকে এনেছে এবং তা তাদের ভোগ করতেই হবে।

তিনি বলেন, ‘শত্রুর এই আক্রমণে আমাদের কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী শহীদ হয়েছেন। তবে ইনশাআল্লাহ, তাদের স্থলাভিষিক্তরা দ্রুতই সেই দায়িত্ব তুলে নিয়ে কাজ শুরু করবেন। ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনী আল্লাহর ইচ্ছায় ইসরায়েলের মতো শত্রুদের কখনো ছাড় দেবে না।’

এর আগে, ইরানের রাজধানী তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হামলা চালায় ইসরায়েল। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা নূর নিউজের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

সংবাদ সংস্থা তাসনিমের খবরে আরও বলা হয়েছে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি এবং দুজন পারমাণবিক বিজ্ঞানীও নিহত হয়েছেন। নিহত দুই পরমাণু বিজ্ঞানী হলেন- মোহাম্মদ মেদহি তেহরানচি ও ফেরেইদুন আব্বাসি।

এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর একটি আবাসিক ভবনে চালানো হামলায় নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েল এ হামলাকে ‘রাইজিং লায়ন’ নাম দিয়েছে। ইরানের কমান্ডার এবং ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানোর পর পাল্টা হামলার আশঙ্কায় রাজ্যজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

ইসরায়েল জানিয়েছে, তেহেরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা ঠেকাতে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। ইরানের সংবাদমাধ্যম এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অঞ্চলে ইসরায়েলের হামলা চালানোর বিষয়টি জানানো হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু রেকর্ডকৃত এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের ইতিহাসের একটি নির্ণায়ক মুহূর্তে আছি।’

তিনি বলেন, ইসরায়েল একটি অভিযানে ইরানের পারমাণবিক বোমা নির্মাণে যুক্ত বিজ্ঞানী, তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং নাতাঞ্জের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এবং এই অভিযান আরও কয়েক দিন চলবে।

এদিকে, বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের হামলা ‘চমৎকার’ ও ‘অত্যন্ত সফল’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা সব জানতাম। আমি ইরানকে অপমান ও ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম। আমি খুব চেষ্টা করেছি। কারণ, আমি চাইতাম, একটা চুক্তি হোক। আমি ইরানকে ৬০ দিন সময় দিয়েছিলাম, আজ ৬১তম দিন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হামলা পিছিয়ে দিতে বলেছিলাম। আমি চেয়েছি কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি (ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া সংকট) সমাধান হোক।

যদিও আলোচনায় ব্যর্থ হলে ইরানকে হামলার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি ইসরায়েলকে সমর্থন করেন। তবে এ হামলার জেরে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলেননি।

তিনি বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের খুব ঘনিষ্ঠ। আমরা তাদের সবচেয়ে বড় মিত্র,’ ‘দেখা যাক, কী হয়।’

তিনি বলেন, এ হামলা তার কৌশলের অংশ। একদিকে তিনি প্রকাশ্যে সোজাসাপটা কথা বলেন, অন্যদিকে আড়ালে দর-কষাকষি চালিয়ে যান।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর