অক্সফোর্ডে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপে পিএইচডি করার সুযোগ পেলেন জাবির সামিয়া

আপডেট: September 19, 2025 |
inbound4171402337267456347
print news

আমিনা হোসাইন বুশরা, জাবি প্রতিনিধি:  যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডে পিএইচডি করার সুযোগ পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামিয়া ইসলাম আনিকা।

তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে, এমফিল + ডিফিল প্রোগ্রাম ইন ইকোনমিক্স (মূলত পিএইচডি) কোর্সে অংশগ্রহন করবেন।

ক্ল্যারেনডন ফান্ড স্কলারশিপের আওতায় কোর্স ফি ও জীবনযাপনের ভাতা বাবদ বার্ষিক প্রায় ৫১,৮০০ পাউন্ড স্টার্লিং করে ৫ বছরের জন্য এই সুবিধা পাবেন সামিয়া।

সামিয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৪৮ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী।

সামিয়া ইসলাম অনার্সে ৩.৯২ সিজিপিএ পেয়ে বিভাগে ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন।

তার মাস্টার্সের সিজিপিএ ৩.৯১। তার জিআরই স্কোর ৩৩১ (কোয়ান্ট ১৭০/১৭০) ও আইইএলটিএস স্কোর ৮.৫/৯ পেয়েছেন৷

পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত গবেষণার কাজের সাথেও যুক্ত ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একটি গবেষণায় জামালপুরে কৃষকদের আচরণে জৈব সার বিষয়ক তথ্যের প্রভাব নিয়ে কাজ করেছেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের HER Power Project, সমবায় অধিদপ্তরের নারীদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পসহ নানা উদ্যোগে তিনি যুক্ত ছিলেন গবেষণা সহকারী হিসেবে।

আবার South Asian Network on Economic Modeling (SANEM)-এ কাজ করেছেন তরুণদের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা, এসএমই খাত, উৎপাদনশিল্প ও জেন্ডার বাজেটিং নিয়ে।

এছাড়াও তার কো-কারিকুলার এক্টিভিটি হিসেবে তিনি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি শিক্ষার্থী সংসদের শিক্ষা ও গবেষনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেট অর্গানাইজেশন (জুডোর) সহ-সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি তার অনুভূতি প্রকাশ করে ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, প্রথমত, এই সময়ে এই সুযোগ আমার কাছে ছিলো একেবারেই অপ্রত্যাশিত।

র‍্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের প্রথম ১০টা বিশ্ববিদ্যালয়ের (পার্টিকুলারলি, অ্যামেরিকান আইভি লীগ) কোনো একটাতে পিএইচডি করবো, এমন স্বপ্ন দেখি নাই বা প্ল্যান করি নাই বললে মিথ্যা বলা হবে।

তবে সেই প্ল্যানে পিএইচডির টাইমলাইনটা ছিলো বেশ দূরে। ভেবেছিলাম জাবি থেকে মাস্টার্স করে আগে বিদেশের মিডল টায়ার কোনো একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হতে হবে, ওখানে ভালো রেজাল্ট করতে হবে, হয়তো কোথাও প্রি-ডকও করতে হবে।

এতোকিছুর পর হয়তো কোনো একটা টপ টেনে পিএইচডি করার সুযোগ পাওয়া যাবে, যা আগামী ৫ বছরের মধ্যে সম্ভব না।

এবং এমন বিশ্বাসের কারণেই ফল’২৫ এ আমার পিএইচডি অ্যাপ্লিকেশনের কোনো পরিকল্পনা ছিলো না।

জিআরই স্কোর পাওয়ার পর একজন শিক্ষক বলেছিলেন অক্সফোর্ডের MSc in Economic Development এ অ্যাপ্লাই করতে।

সত্যি কথা বলতে, ডেভেলপমেন্ট নিয়ে আগ্রহ থাকলেও আপাতত আমার থিওরেটিকাল ইকোনমিক্স নিয়েই থাকার ইচ্ছা।

তাই ওয়েবসাইটে ঢুকে ভাবলাম, যেহেতু পিওর স্ট্রিমেই পড়তে চাই, আমি বরং MPhil in Economics এই আবেদন করি।

কিন্তু সেটা করতে গিয়ে দেখি যে ওরা M-DPhil (Master’s+PhD) এর সব অ্যাপ্লিকেশন এমনিতেই স্ট্যান্ড-অ্যালোন এম্ফিলের জন্য কন্সিডার করবে।

শুধুমাত্র এই কারণেই আমার পিএইচডি লেভেলের প্রোগ্রামে আবেদন করা, নাহলে ২০২৫ এর সেশনে কেবল মাস্টার্স ও প্রি-ডক অ্যাপ্লিকেশনেরই প্ল্যান ছিলো।

যাই হোক, আগে আগে হয়ে গেলো দেখে আফসোস একদমই নাই। সাব-কন্টিনেন্টের মানুষ হওয়ায় হার্ভার্ডের আগে আমার অক্সফোর্ড চেনা, তার ওপর আবার ব্রিটিশ শো গেলার বদ অভ্যাস।

হ্যারি পটার থেকে শুরু করে শার্লক হোমস, বা গেইম অফ থ্রোনস থেকে ব্রিজার্টন। It’s like getting the chance to visit my own Nerdvana XD.

সামনের জার্নিটা আসলেই এক্সপেক্টেশন ম্যাচ করতে পারবে কিনা, তা তো এখনো জানিনা। তবে অফার লেটার পাওয়ার পরের যেই জার্নিটা, তার জন্য আমার আজীবন কৃতজ্ঞতা থাকবে আমার বিভাগের কাছে।

আমি যখন অ্যাপ্লাই করি, তখন আমি জাবি অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী। মাস্টার্সের রেজাল্ট ছাড়াই অ্যাপ্লাই করি, ইন্টারভিউ দেই, ইনফর্মাল অফারও পাই।

কিন্তু অক্সফোর্ড যখন আমাকে ফর্মাল অফার লেটার দেয়, তখনই আমি প্রথম জানতে পারি যে ভিসা অ্যাপ্লিকেশনের আগে আমার মাস্টার্সের ট্রান্সক্রিপ্ট তাদেরকে পাঠাতে হবে।

অথচ বিভাগে তখনও ফাইনাল পরীক্ষা শুরুই হয় নি, অফিশিয়াল রেজাল্ট পাবলিশ তো অনেক পরের ব্যাপার।

এই অবস্থায় যখন আমার অফারের কথাটা সবাইকে জানাই, সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাতে আমি অফারটা অ্যাভেইল করতে পারি।

আমার ক্লাসমেটদের আন্তরিকতায় কোনোরকম বাধা-বিপত্তি ছাড়াই ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়, এবং এরপর আমার শিক্ষকগণ অতিরিক্ত ওয়ার্কলোড নিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই রেজাল্ট পাবলিশ করার ব্যবস্থা করেন।

ইয়েল ছেড়ে অক্সফোর্ড যাওয়ার যেই ডিসিশন আমি নিয়েছি, তার পেছনে সবার এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা একটি অন্যতম ক্যাটালিস্ট।

তবে বিভাগের শিক্ষকদের কাছে কেবলমাত্র দ্রুত ফলাফল প্রকাশের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে থামার সুযোগ আমার নাই।

গত ছয় বছর ধরে বিভাগের যে কজন শিক্ষকের সান্নিধ্য আমি পেয়েছি, তারা প্রত্যেকে তাদের গাইডেন্স ও মেন্টরশীপের মাধ্যমে আমাকে তৈরী করেছেন, গ্রো করার স্পেইস ও সুযোগ দিয়েছেন।

আমি এমন শিক্ষক পেয়েছি যিনি আমার অ্যাম্বিশনকে নার্চার করার সুযোগ করে দিয়েছেন, আবার খারাপ ফলাফল করার পর সেই ফ্রাস্ট্রেশনকে ট্যাকেল করতেও শিখিয়েছেন।

অসম্ভব ওয়ার্কলোড বা ভ্যাকেশনের মধ্যে আমার জন্য লেটার অফ রেকমেন্ডেশন লেখা থেকে শুরু করে যেকোনো প্রয়োজনে আমার পাশে থাকার আস্থা দেওয়া শিক্ষকদের কাছে আমার ঋণ অপরিসীম।

বিভাগের ছাত্রী থাকা অবস্থায় এই কথাগুলো কখনোই বলি নাই, পাবলিকলি বা প্রাইভেটলি, কারণ চাই নাই যে আমার এই কৃতজ্ঞতা স্বীকারকে কেউ অন্যভাবে ইন্টারপ্রেট করুক। এখন প্রাক্তন হওয়ায় হয়তো কাজটা সহজ হয়ে গেলো।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর