আজ প্রবারণা পূর্ণিমা, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব

আপডেট: October 6, 2025 |
inbound3853574573910708994
print news

বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা আজ সোমবার (৬ অক্টোবর) উদ্‌যাপন করা হচ্ছে। এদিন বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাসের বর্ষাবাস সমাপনী ঘটে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, প্রবারণা পূর্ণিমা পালনের মাধ্যমে ভিক্ষু ও গৃহীদের পাপমোচন হয়।

প্রবারণা পূর্ণিমার নানা আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বুদ্ধপূজা, সংঘদান, পিণ্ডদান, অষ্টপরিষ্কার দান, পঞ্চশীল প্রার্থনা, শীল গ্রহণ, প্রদীপপূজা এবং ফানুস ওড়ানো। পূর্ণিমার পরদিন বিভিন্ন বিহারে কঠিন চীবর দান উৎসব পালিত হয়।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান’ উপলক্ষে গত শনিবার বাণী দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব বৌদ্ধধর্মাবলম্বীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, বিশ্বে বিরাজমান অস্থিতিশীলতা দূরীকরণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধের শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় জানিয়েছেন, আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনের পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস তারা বর্ষাবাস পালন করেন। বর্ষাবাস শেষ হওয়ায় আজ প্রবারণা পূর্ণিমা উদ্‌যাপন করা হচ্ছে। প্রবারণা শব্দের অর্থ হলো খারাপ কাজকে বারণ করা এবং ভালো কাজকে বরণ করা। এটি বৌদ্ধধর্মের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব, যেখানে প্রথম বৃহত্তম উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমা।

উদ্‌যাপনসূচি অনুযায়ী, ঢাকার মেরুল বাড্ডায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে আজ সকাল সাড়ে ৬টায় জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টা ১০ মিনিটে ভিক্ষু সংঘের প্রাতরাশ, সকাল সাড়ে ৯টায় শীল গ্রহণ ও বুদ্ধপূজা, বেলা ১১টায় পিণ্ডদান, বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে আলোচনা সভা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আলোকসজ্জা ও বর্ণাঢ্য ফানুস উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।

sw 67.1759657379                             ছবি: সংগৃহীত

প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের প্রতিনিধিদল।

রোববার (৫অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতারা প্রবারণা পূর্ণিমার মাহাত্ম্য বর্ণনা করে প্রধান উপদেষ্টাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বিহার পরিদর্শনেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

এসময় রাজধানীর উত্তরায় বৌদ্ধদের শেষকৃত্যের জন্য জায়গা বরাদ্দ করে দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ।

বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দরা বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিষয়টি অবহিত করার পর ১০ দিনের মধ্যে শ্মশানের জন্য স্থান বরাদ্দ করে দেওয়া হয়েছে। এটা ইতিহাসে অনন্য। ঢাকায় বৌদ্ধধর্মের কেউ মারা গেলে শেষকৃত্যের জন্য বহু পথ পারি দিয়ে চট্টগ্রামে যেতে হতো। এখন মৃত্যুর পরে একটা জায়গা হলো।’

বৈঠকে এ বছর কঠিন চীবর দান উদযাপনের প্রস্তুতি সম্পর্কেও প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ।

পাশাপাশি, তীর্থযাত্রার জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনা, বৌদ্ধ পন্ডিত, ধর্মগুরু ও দার্শনিক অতীশ দীপঙ্করের নামে সরকারিভাবে একটি জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ।

বৌদ্ধ প্রবারণা পূর্ণিমার শিক্ষা                           ছবি: সংগৃহীত

এসময় উপস্থিত ছিলেন ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের অধ্যক্ষ বুদ্ধপ্রিয় মহাথের, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের ভিক্ষু কল্যাণ জ্যোতি, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ভবেশ চাকমা, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির ঢাকা অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক স্বপন বড়ুয়া চৌধুরী, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব জয় দত্ত বড়ুয়া এবং বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া, মং হলা চিং, সুশীল চন্দ্র বড়ুয়া, অধ্যাপক ববি বড়ুয়া, রুবেল বড়ুয়া ও রাজীব কান্তি বড়ুয়া।

পাশাপাশি ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর