নবাবগঞ্জ থানা হাজতে এক আসামির গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা

আপডেট: October 14, 2020 |

হত্যা মামলার এক আসামির ঝুলন্ত মরদেহ ঢাকার নবাবগঞ্জ থানা হাজতের টয়লেটের ভেতর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে থানা হাজতের টয়লেটের ভেতরের গ্রিলের সঙ্গে লুঙ্গি দিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া ওই যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহত মো. মামুন হোসেন (৩১) মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার লস্করপুর গ্রামের আবুল হোসেন মিস্ত্রীর ছেলে। সে পেশায় একজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক।

জানা যায়, রোববার (১১ অক্টোবর) নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের দেওতলা খ্রিস্টানপাড়া গ্রামের একটি নির্জন স্থানের বাঁশঝোপ থেকে অজ্ঞাতনামা এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তার পরিচয় মেলে। নিহত ওই নারীর নাম রাজিয়া সুলতানা (৩৫)। মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার লস্করপুর গ্রামের প্রবাসী ইয়াকুব ঢালীর স্ত্রী সে। ওই হত্যাকাণ্ডের সাথে মামুনের সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে তাকে আটক করে পুলিশ।

নবাবগঞ্জ থানার ওসি সিরাজুল জানান, রাজিয়ার লাশ উদ্ধারের পর প্রাথমিক তদন্তে ওই নারীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে সন্দেহে সেদিনই পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ওই নারীর লাশ উদ্ধারের বিষয়টি তাৎক্ষণিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শ্রীনগরের লস্করপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা মামুনকে আটক করে পিটুনি দিয়ে শ্রীনগর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

পরে তারা নবাবগঞ্জ থানা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করেন। মামুনকে আমাদের হেফাজতে নিয়ে এসে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসময় তার কথাবার্তায় ব্যাপক অসঙ্গতি পেলে তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল। এসময় মামুন হাজতের টয়লেটে গিয়ে ভেতর থেকে লক করে টয়লেটের গ্রিলের সঙ্গে লুঙ্গি পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। যে ঘটনা থানার সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়েছে।

সংবাদ পেয়ে ঢাকা জেলার দুইজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরেজমিনে এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। লাশ উদ্ধারের পর উপজেলার ইউএনও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে বিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্ত ও লস্করপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে ওসি সিরাজুল আরও জানান, নিহত ওই নারীর সঙ্গে মামুনের বাবা আবুলের পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। যা নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশও হয়েছে। বাবার এমন সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে রাগে-ক্ষোভে মামুনই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এছাড়াও যে গ্যারেজে সিএনজি রাখা ছিল ঘটনার দিন রাতে মামুনই গ্যারেজ থেকে সিএনজি বের করেছিল বলে আমরা প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পেয়েছি।

‘সুতরাং মামুনই রাজিয়াকে হত্যা করে লাশ সিএনজিতে করে ওই নির্জন স্থানের বাঁশঝোপে ফেলে গিয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকেই মামুনের বাবা-মা ও অন্যান্য স্বজনরা পলাতক রয়েছেন। ওই নারীকে হত্যার ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

বৈশাখী নিউজ/ফারজানা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর