কারাগারে কিশোরের ওপর নির্যাতনের কোন ঘটনা ঘটেনি :স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশে কাটুর্নিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ১০ মাস বন্দি দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পরদিন শুক্রবার চিকিৎসার জন্য ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১০ মাস বন্দি থেকে বৃহস্পতিবার মুক্তি পেয়ে আহমেদ কবির কিশোর গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে তাকে আটকের সময় নির্যাতন করার অভিযোগ তুলেছেন।

সেখানে তিনি বলেছেন, গত বছরের ২রা মে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়েছিল ১৬/১৭ জনের একটি দল। ৬৯ ঘন্টা তাকে কোথায় রাখা হয়েছিল, তা তিনি বলতে পারেননি। সে সময় একটি স্যাঁতস্যাতে ঘরে আটকে রেখে চড় দিয়ে কান ফাটিয়ে দেয়াসহ তার ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছেন। কিন্তু মামলার এজাহারে বলা হয়, র্যাব তাকে গত বছরের ৫ই মে আটক করে।
এই কার্টুনিস্টের ভাই আহসান কবির কিশোর বলেছেন, তার ভাইয়ের ওপর নির্যাতনের সময় বন্দি অবস্থায় চিকিৎসা হয়নি।

“কিশোর স্পষ্ট করে বলেছে যে, কাকরাইলের বাসা থেকে ২০২০ সালে মে মাসের দুই তারিখে ইফতারের এক ঘন্টা আগে তাকে তুলে নেয়া হয়েছিল। তাকে রমনা থানায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল ৬ই মে ২০২০। এই গ্রেপ্তার দেখানোর আগে কোথায় ছিল, তা কিশোর ট্রেস করতে পারেনি। তাকে যে টর্চার বা নির্যাতন করা হয়েছিল, এরপরে জেলে অন্তরীণ হওয়ার পরে প্রোপার ট্রিটমেন্ট সে পায়নি,” বলেন আহসান কবির।

তিনি আরও জানান, জেলে প্রপার চিকিৎসা না পাওয়ায় দশ মাসে সমস্যাগুলো বেড়েছে। সেজন্য এখন আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জেলখানা থেকে যখন তাকে মুক্ত করে আনি, তখনও তার কান দিয়ে পুঁজ পড়ছিল। এখন হাসপাতালে কান-চোখ এবং অর্থোপেডিক ও ডায়াবেটিক বিশেষজ্ঞরা তাকে পরীক্ষা করবেন। তারা শনিবার বা রবিবার তার শরীরের অবস্থা সম্পর্কে আমাদের জানানো হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, কারাগারে আহমেদ কবির কিশোরের ওপর নির্যাতনের কোন ঘটনা ঘটেনি। অন্য কোথাও ঘটে থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
“ওনাকে কোথায় নির্যাতন করলো, আমরা জানবো কী – আটক অবস্থায়তো কোন নির্যাতন হয়নি। এখন কোথায় হয়েছে – আমি তাদের স্টেটমেন্ট। আমাদের জেলখানায় কোন নির্যাতন কাউকে করা হয় নাই। আমরা না দেখে বলতে পারবো না,” বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

কিন্তু ঐ কার্টুনিস্টকে বাসা থেকে যখন তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তারপর নির্যাতনের ভয়াবহ যে বর্ণনা তিনি দিয়েছেন এবং সংবাদমাদ্যমে যা প্রকাশিত হয়েছে,সেগুলো এবং তাকে কারা তুলে নিয়েছিল- এসব খতিয়ে দেখা হবে কিনা, এই প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেটা আমি দেখবো। আমাদের জানা মতে, আমাদের জেলখানায় তাকে কোন নির্যাতন করা হয়নি।

কিন্তু আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নেয়ার পরই তাকে নির্যাতন করা হয়েছে, সেই অভিযোগ তিনি করেছেন। এর জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মি. খান বলেন, ওটা আমাকে দেখতে হবে। না দেখে আমি কিছু বলতে পারবো না।

এদিকে কাটুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর পত্রিকার সাথে সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেছেন, তার আঁকা কিছু কার্টুন দেখিয়ে নানা প্রশ্ন করে তাকে নির্যাতন করা হয়েছিল। তাকে বার বার বলা হচ্ছিল, তার সব কার্টুনই ব্যাঙ্গাত্নক। তিনি গত বছর করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হলে কার্টুনগুলো এঁকেছিলেন।

তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে মামলায় এতদিন আটক ছিলেন, একই মামলায় বন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু হয়েছে ক’দিন আগে।
আহমেদ কবির কিশোর সাক্ষাৎকারে বলেন, বন্দি অবস্থায় তার সাথে লেখক মুশতাক আহমেদের দেখা হয়েছিল। তাকে লেখক মুশতাক আহমেদ জানিয়েছিলেন যে, তাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতন করার হয়েছিল।

মানবাধিকার কর্মী এলিনা খান বলেছেন, এ ধরনের আটক ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে অনেকেই তা প্রকাশ করতে সাহস পান না। দুয়েকজন তা প্রকাশ করলেও তার পর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বৈশাখী নিউজইডি