অনিয়মের অভিযোগে বেরোবির ওয়াজেদ রিসার্চে দুদকের হানা

আপডেট: March 12, 2025 |
inbound5505825686270251698
print news

মাসফিকুল হাসান,বেরোবি প্রতিনিধি: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ছাড়া ড.ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সিটিউটের কার্যক্রম এবং এই ইন্সটিটিউটের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অফিসে অনিয়মিত এবং তেমন কোন কাজ ছাড়াই বসে বসে প্রতি মাসে বেতন পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর অভিযান পরিচালনা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (১২ মার্চ) দুদক রংপুরের সহকারী পরিচালক মো.হুসাইন শরিফের নেতৃত্বে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল এই অভিযান পরিচালনা করে।

এসময় দুদক রংপুরের সহকারী পরিচালক মো.হুসাইন শরিফের বলেন, সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. জলিল মিয়ার ইচ্ছা ২০০৯ সালে ড.ওয়াজেদ মিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

প্রতিষ্ঠার পর এখানে তিনি কয়েকজন রিসার্চ অফিসার ও ফেলো ভর্তি করান কিন্তু এইটি কোনো অনুমোদন ও নীতিমালা না থাকায় সেই ফেলোরা আর ডিগ্রী সম্পন্ন করতে পারেনি।

আর এই ইনস্টিটিউটে ১১ জন কর্মকর্তা -কর্মচারীরা কোনো কাজ ছাড়াই বেতন ভাতা নিচ্ছেন। আমি এইটি অভিযান চালিয়ে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পেয়েছি।

আমরা এই রিপোর্টগুলো কমিশনে প্রেরণ করব সেখান থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সূত্র জানায়, ড.ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সিটিউটের গবেষক ভর্তির অনুমোদন না পাওয়ায় বিষয়টি ২০২২ সালে জানাজানি হলে এর পর থেকে  তেমন কোন কাজ নেই এই ইন্সিটিউটে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, ইন্সিটিউটে সর্বমোট সাত জন কর্মকর্তা ও একজন কম্পিউটার অপারেটর এবং একজন এমএলএস এস কর্মরত আছেন।

সাত জন কর্মকর্তার মধ্যে আছেন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার খন্দকার গোলাম মোস্তফা, প্রিন্সিপ্যাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড.প্রসন্নজিৎ সরকার, সাবেক উপাচার্য আবদুল জলিলের মেয়ে রুমানা ফেরদৌসী জলীল, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রফিউল আজম খানের স্ত্রী ডেপুটি রেজিস্ট্রার সিরাজুম মুনিরা, সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আবু সায়েম, সিনিয়র রিসার্চ অফিসার ও মুখতার ইলাহীর বোন মেহজাবিন ইলাহী এবং রংপুর বিভাগের জিয়া পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রিসার্চ অফিসার ড. মো. রোকনুজ্জামান।

জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর দশম সিন্ডিকেট সভার নবম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই ইনস্টিটিউট থেকে এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রি দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর ২০১১ সালের ৩ নভেম্বর ২০তম সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১২ সালের ৭ মার্চ  একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে এমফিল, পিএইচডিতে ভর্তি করানো হয়।

গবেষণার জন্য অনুমোদন না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল জলিল মিয়া নিজের মেয়ে রুমানা ফেরদৌসী জলীলকে নিয়োগ দেয়ার জন্য ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই এই ইন্সিটিউটে গবেষক ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন বলে কথিত আছে এবং তার আমলেই এই ভর্তি শুরু হয়।

এরপর ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ২০৫ জন গবেষক ভর্তি হন। তখন এই ইন্সটিটিউটে ভর্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়, ২০২২ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ ইন্সটিটিউটে কর্মরত প্রায় সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী এখন বসে বসেই বেতন পাচ্ছেন বলে কয়েকজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন।

কাজ না থাকায় অফিসেও নিয়মিত দেখা যায় না এসকল কর্মকর্তাকে। এর মধ্যে রিসার্চ অফিসার ড. মো. রোকনুজ্জামানের গবেষণা কার্যক্রমে তেমন না থাকলেও সক্রিয় রয়েছেন বি এন পির রাজনীতিতে।

কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্ট ও সাম্প্রতিক সময়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অমাণ্য করে এভাবে প্রকাশ্যে রাজনীতিতে জড়ানোর পরেও প্রশাসন থেকে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ভবিষ্যৎ এখানকার কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে রাজনীতিতে জড়াবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এই অফিসারদের গবেষণা কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে গিয়ে দেখা যায়, কোন কর্মকর্তারই কোন গবেষণা নেই।

গবেষণা বিষয়ক ওয়েবসাইট রিসার্চ গেইটে খুঁজে মাত্র ড.প্রসন্নজিৎ সরকার ও সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আবু সায়েম এর দুই তিনটি গবেষণা সংক্রান্ত আর্টিকেল পাওয়া যায়, বাকিদের কোন গবেষণা খুঁজে পাওয়া যায় নি।

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.মো. শওকাত আলী বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয় যোগদানের পর জানতে পারি এই ইনস্টিটিউটের পরিচালক আমি নিজে।

পরে নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমি ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট সম্পর্কে খোঁজ খবরনি। এটির প্রথম দিকে অনুমোদন ছিল না মে ২০২৪ সালে এই ইনস্টিটিউটের অনুমোদন দেওয়া হলেও নীতিমালা তৈরি করা হয়নি।

আমি নিজ উদ্যোগে নীতিমালা তৈরি করার জন্য কাজ করছি।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর