সোহরাওয়ার্দী কলেজে বৈষম্যবিরোধী নেতার ওপর দলবদ্ধ হামলা


রাজধানীর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক লিখন ইসলামের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে কলেজ ছাত্রদলের নেতা- কর্মীদের বিরুদ্ধে।
বুধবার (২৮ মে) সকাল ১১ টায় কলেজ ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
অধ্যক্ষের কক্ষের ভেতর থেকে তাকে নিয়ে এসে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে, সহ- সম্পাদক তৌহিদ ইসলাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিব হামলা চালায় তাদের সাথে আরো ৮-১০ জন ছিল।
ওই সময় কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক তরিকুল ইসলাম তাকে নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে যায় এবং অধ্যক্ষও ছুটে আসে তাকে রক্ষা করার জন্য।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি জিডি সূত্রাপুর থানায় হয়েছে এবং লিখন ইসলাম লিখিতভাবে কলেজে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখন ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন,একটা পোস্টটা ছিল,যেখানে আমি লিখেছিলাম যে আমাদের সবকিছু যদি প্রিন্সিপাল করে তাহলে আমাদেের কলেজের ওয়েবসাইটের কাজ কি? আমাদের হচ্ছে দপ্তরের কাজ কি? এখন পর্যন্ত আমাদের কোন অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ নাই,যদি ফেসবুকে পোস্ট করা হয় তাহলে অথেনটিক একটি ফেসবুক ভেরিফাইড পেজ থাকা দরকার।
তাছাড়া তো আমরা এগুলো বিশ্বাস করতে পারি না। আমার প্রশ্ন ছিল এরকম এরকম কমেন্টটা ছিল।
এইসব নিয়ে প্রিন্সিপাল ম্যাডামের এসব কথা বলতেছিলাম ঠিক দুই থেকে তিন মিনিট পর প্রিন্সিপাল রুমের ভিতরে ছাত্রদলের সেক্রেটারি রুবেল ও সভাপতি জসিম সাথে তাদের সাথে আরো 15-20 জন সন্ত্রাসী কায়দার রুমে ঢুকে, ঢুকেই তারা বলে “তুই প্রিন্সিপাল কে বলার কে, আমাদের কলেজের ওয়েবসাইট নিয়ে বলার তুই কেন বলবি? এসব বলতে থাকে। আমি বলি ভাই, আমি তো কলেজের ছাত্র।
আমি ছাত্র হিসেবে তো কলেজের উন্নতি চাই। তারপর তারা বলে ” ম্যাডামের সাথে কথা বলতে পারবি না।” তারপর তারা আমাকে নিয়ে সামনে থেকে ধরে নিয়ে পিটাইতে পিটাইতে বাইরে নিয়ে যায়।
আপনারা চাইলে কে প্রিন্সিপাল রুমে সিসি ফুটেজ দেখতে পারেন। তারা কিভাবে আমাকে সন্ত্রাসী খাতায় আতর্কিতভাবে পিটায়।
এর আগেও আমি ছাত্রলীগের হাতে এই কলেজে মার খেয়েছিলাম ঠিক তাদের মতই মব সৃষ্টি করার জন্য তাদের মতো হিংস্রভাবে আজকে আমাদের আমাকে মারছে।
তাদের চিন্তাভাবনা ছিল তারা আমাকে মেরে ফেলবে। তারা আমাকে এভাবে মারতে থাকে। তখন আমি চিল্লায় বলি যে, “জুলাই একবার আমি মরে এসেছি, আমি আর মরার ভয় পাই না”।
তখন আমাদের কলেজের তরিকুল স্যার তিনি আমাদের ম্যাডামের রুমে ছিল তিনি আমাকে সেভ করে নিয়ে ম্যাডামের রুমে চলে যায়।
ম্যাডাম ও বাহিরে চলে আসছিল।ম্যাডাম ও স্যার আজকে যদি সেভ না করতো তাহলে তাহলে আজকে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যেত।
কারণ তাদের এই ঘটনাটা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। এর আগেও তারা আমার সদস্য সচিব কে হুমকি দিয়েছিল,” তার কলিজা ছিড়ে হাতে নেবে,।
এরকম অনেক স্ক্রিনশট আমাদের কাছে আছে। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে তার এমনও হুমকি দিয়েছে যে তারা আমাকে মেরে এখানে গাছে ঝুলায় রাখবে।
তরিকুল স্যার আমাকে সেভ দিয়ে ম্যাডামের ভিতরে নিয়ে যায়, আমিও বাঁচার জন্য ভিতরে ঢুকি আর দরজা বন্ধ করে দিই।আমি যেহেতু একাই ছিলাম বাইরে বের হয়নি।
এই বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ড.কাকলী মুখোপাধ্যায় জানান,আমার সাথে কথা বলতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিখন ইসলাম আসছিল।
তখন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রুবেল এসে উত্তেজিতভাবে লিখন কে বলল, ম্যাডাম পিয়ন কিনা। লিখন আমার একটা পোষ্টের কমেন্টে কিছু লেখা লেখছিল ওগুলান কথা একটু দুঃখজনক।
এই বিষয়ে আমি লিখন কে কোন বকাবকিও করিনি, সবচেয়ে বড় কথা যে আমি কাউরে কিছু বলিওনি। আমি সব কিছু বুঝে ওঠার আগে ওরা লিখন কে টেনে নিয়ে বাইরে গেল।
এখানে তরিকুল স্যার ছিল, তিনিও বের হয়ে যান কিন্তু রক্ষা হয়নি। ততক্ষণে আর কি গায়ে তার হাত উঠে গেছে। আমি মনে করি এই ঘটনা একটা ইস্যু মাত্র। এটা পূর্বের জের থাকতে পারে।
অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে মারধর করা, এটা কাঙ্ক্ষিত না,এটা আইন অজ্ঞ না, এটার আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের কলেজের গেটে একটা নোটিশ লাগায় দিচ্ছি।
যাতে আইডি কার্ড ব্যতীত আর কেউই কলেজে না ঢুকতে পারে। বহিরাগত বা অছাত্র কেউ যদি আসতে চান তাহলে কর্তৃপক্ষকে অনুমতি নিবেন।
শুধু দরজার গার্ড যারা আছে তারাই না এছাড়াও বিএনসিসি, স্কাউট, রাখার চেষ্টা করব। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমি সূত্রাপুর থানা কে খবর দিয়েছি। তারা একটা পুলিশ ফোর্স কলেজের সামনে রাখছে।
নিরাপত্তার জন্য আমি এটা করছি। আমি এ বিষয়ের জন্য লজ্জা প্রকাশ করছি কারণ আমার উপস্থিতি এই ঘটনাটি ঘটেছে আমি আমার অপারগতা স্বীকার করছি।