ইউক্রেনে থমকে আছে রুশ বাহিনী: ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী

আপডেট: March 23, 2022 |

গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনের রাশিয়ার সামরিক অভিযান সব ফ্রন্টে মোটাদাগে থমকে আছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে এবং স্থল, সাগর বা আকাশে তাদের অগ্রগতি খুব সামান্য।

গত কয়েক দিন ধরে পশ্চিমা দেশগুলো যে পর্যালোচনা তুলে ধরছে তা মোটামুটি যুক্তরাজ্যের বক্তব্যের কাছাকাছি। পশ্চিমারা বলছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু অভিযানের প্রায় এক মাস পূর্ণ হতে চললেও রাশিয়া ইউক্রেনে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।

ইউক্রেনে আক্রমণের কয়েক মাস আগে থেকে সীমান্তে দুই লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছিল রাশিয়া। ক্রেমলিন ধারণা করেছিল, অভিযান মসৃণভাবে এগোবে। কয়েকজন বিশ্লেষক বলছেন, লজিস্টিকস, সরবরাহ, সেনাদের স্থানান্তর ও তথ্য-প্রযুক্তির বিবেচনায় রাশিয়ার হয়তো দীর্ঘমেয়াদি সামরিক সংঘাতের প্রস্তুতি ছিল না।

ইউএস আর্মি ওয়ার কলেজ’স স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের গবেষণা অধ্যাপক জন আ. ডেনি বলেন, অগ্রগতির নিরিখে মনে হচ্ছে রাশিয়ার সামরিক অভিযান বড় ধরনের প্রতিকূলতায় পড়েছে। সম্ভবত দুর্বল পরিকল্পনা, দুর্বল মনোবল, দুর্বল রসদ ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর দৃঢ় প্রতিরোধের কারণে এমনটি হয়েছে।

দৃশ্যত, রাশিয়ার দ্রুত জয়লাভের প্রাথমিক পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে।

ইউক্রেনে চলমান এই সংঘাতের সঙ্গে ১৯৩৯-৪০ সালের সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ফিনল্যান্ডের মধ্যকার যুদ্ধের অনেক মিল পাওয়া যাচ্ছে। ওই সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনারা সীমান্তবর্তী অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফিনল্যান্ড দখলে অগ্রসর হলে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে। যুদ্ধ চলে প্রায় এক বছর।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ইউক্রেনের প্রতিরোধ দৃঢ় এবং কার্যকরভাবে সমন্বিত। বড় গুরুত্বপূর্ণ শহরসহ ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের বেশিরভাগ এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

পশ্চিমা কয়েকজন বিশ্লেষকের মতে, মস্কো ইউক্রেনের সক্ষমতা ও লড়াইয়ের প্রস্তুতিকে খাটো করে দেখেছে।

জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির সহযোগী অধ্যাপক আলেক্সান্ডার বি. ডাউনেস বলেন, পুতিনের মতো স্বৈরাচার নেতাদের সঙ্গে তার অধীনস্থ কেউ বিরোধে জড়াতে চায় না। কারণ, প্রায়ই নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ ও বেঁচে থাকা নেতার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে।

তিনি আরও বলেন, নেতা যদি আক্রমণের বিষয়ে মনস্থির করেই ফেলেন তাহলে কে চাইবে তার বিরোধিতা করতে? এই হিসেবে ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে রুশ শাসকদের মিল রয়েছে। ভুল তথ্য দিয়ে নেতার আত্মবিশ্বাস বাড়ানো হয়েছে, যাতে তিনি নিশ্চিতভাবে আক্রমণ করেন।

ইউক্রেনকে খাটো করে দেখা এবং নিজেদের সামর্থ্যের অতিমূল্যায়ন রাশিয়ার ব্যর্থতার কারণ হতে পারে।

কয়েকজন বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন, এই বাস্তবতায় মস্কো নিজেদের পরিকল্পনাকে খাপ খাইয়ে নিতে যাচ্ছে। যার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ, বিশেষ করে বেসামরিকদের জন্য।

ডাউনেস বলেন, রাশিয়ার আক্রমণ থমকে আছে বলে মনে হচ্ছে। রুশ শিবিরে সরবরাহ ও মনোবল সমস্যার খবর পাওয়া যাচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চল ছাড়া তারা খুব বেশি এগোতে পারছে না। তাদের অবরোধের যুদ্ধ কৌশল ও বেসামরিকদের ওপর অসম আক্রমণে যেতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ঐতিহাসিকভাবে যখন আক্রমণকারীরা যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত ও চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে ব্যর্থ হয়, তখন তারা হতাশ বা বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং দুর্বল মনোবলের কারণে বেসামরিকদের দিকে বন্দুক তাক করে ও বিরোধীদের ওপর শাস্তিমূলক কৌশল ব্যবহার করে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করতে চায়। কিন্তু বেসামরিকদের শাস্তি দেওয়ার কৌশলের সফলতা খুব বিরল।

মস্কো ভাড়াটে যোদ্ধা ও অন্যান্য বাহিনীর থেকে ইউক্রেনে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথের কৌশল বিষয়ক সিনিয়র প্রভাষক ও সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ফ্রাঙ্ক লেডউইজ বলেন, সামরিক সংজ্ঞায় আমার কাছে মনে হয় রুশ বাহিনী ‘চূড়ান্ত বিন্দুতে’ পৌঁছে গেছে। যেখানে তারা শুরুর দিককার প্রেরণা হারিয়ে হতাশায় পতিত হয়েছে এবং পুনরায় সংগঠিত ও রসদ না পাওয়া পর্যন্ত তারা আর সামনে এগোতে পারছে না। কোনও সন্দেহ নেই এখন তারা সেটিই করছে।

তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধশক্তির ৪০ শতাংশ হারানোর যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তা চরম ক্ষয়ক্ষতির প্রতিনিধিত্ব করছে। তিন সপ্তাহে তারা ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে, ইরাক ও আফগানিস্তানে ২০ বছরের অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্রদের এত ক্ষতি হয়নি।

লেডউইজ বলেন, আমি সন্দেহ করছি তারা এখন বিরতি নেবে এবং পরে আবার আগানোর সিদ্ধান্ত নেবে। অবশ্যই এটি নির্ভর করে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার ওপর। নিশ্চিতভাবে রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর চাপ প্রয়োগ বাড়াবে, যাতে আলোচনায় নিজের অবস্থান শক্তিশালী করা যায়।

যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রগতি তাৎপর্যপূর্ণ না হওয়ায় রাশিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পশ্চিমারা।

ডাউনেস বলেন, রাশিয়ার আক্রমণের বেপরোয়া পরিস্থিতি এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির পরও পুতিনের যুদ্ধ থামানোর অনিচ্ছার কারণে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সূত্র: আল-জাজিরা

বৈশাখী নিউজ/ জেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর