ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটছে কেরোসিনের লাইনে

আপডেট: April 6, 2022 |

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর ব্যস্ত একটি এলাকার একটি পেট্রোল স্টেশনে তীব্র গরমের মধ্যে কেরোসিন কেনার জন্য আট ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ফাতিমা হুসেইন নামে এক নারী।

তিন সন্তানের মা ফাতিমা জানান, গত কয়েক মাস ধরে সপ্তাহে অন্তত দু’বার করে তাকে এমন লাইনে দাঁড়াতে হয়। আর যেদিন তিনি লাইনে দাঁড়ান সেদিন আর কাজে যেতে পারেন না। তিনি বলেন, কাজ না করলে আমি সেদিনের মজুরি পাই না। দিনে ১২০০ রুপির মতো পাই আর এ দিয়েই আমাকে পরিবারের সব খরচ মেটাতে হয়। আমার তিন বাচ্চাই স্কুলে পড়ে আর তাদের খরচ দিনে দিনে বাড়ছে।

জ্বালানি তেলের মধ্যে শ্রীলঙ্কাতে কেরোসিনই এখন সবচেয়ে সস্তা, ৮৭ রুপি প্রতি লিটার। এস্টেট ওয়ার্কার বা জেলেদের মতো মানুষদের জ্বালানির জন্য কেরোসিনই ভরসা। রান্নাবান্না, ঘরে আলো জ্বালা আর নৌকার ইঞ্জিন চালানোর জন্য জেলেরা কেরোসিন ব্যবহার করেন।

ফাতিমা বলেন, আমরা কেরোসিন দিয়ে রান্নার কাজ করি। বিদ্যুৎ খরচ বাঁচাতে কেরোসিন দিয়ে বাতিও জ্বালাই। গ্যাস আমাদের জন্য বিলাসিতা, এটা কেনার ক্ষমতা আমাদের নেই। যেদিন কেরোসিন কেনার প্রয়োজন হয় ফাতিমা সেদিন সকাল ৭টায় গিয়ে লাইনে দাঁড়ান। তিনি বলেন, অত সকালেও লম্বা লাইন থাকে।

তিনি বলেন, গরমের মধ্যে আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি। আমি একটা বোতলে পানি নিয়ে যাই। বাইরে থেকে খাবার কিনে খাওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। সবাই গা ঘেঁষাঘেষি করে আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি। তিনি আরও বলেন, সরকার বলছে, কোভিডের কারণে আমাদের অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। আমরা গরিব, তাই আমাদের কথা তারা ভাবে না। মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। জ্বালানি তেলের দাবিতে কয়েক দফা সড়ক অবরোধও করা হয়েছে।

এক মাসের মধ্যে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আগে যেখানে রান্নার জন্য মানুষের প্রথম পছন্দ ছিল এলপিজি গ্যাস, এ বছরের মধ্যেই সেই গ্যাসের দাম এখন আগের দামের তিনগুণ। ফলে বহু মানুষ রান্নার জন্য এখন কেরোসিন বেছে নিয়েছেন। ফাতিমার মতোই একইভাবে কেরোসিন কেনার জন্য লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে এইচ আর মোহাম্মাদ নামে ৪৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে। এই লাইনে দাঁড়ানো থাকা অবস্থায় বয়স্ক এক ব্যক্তিকে তিনি পড়ে যেতে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন।

রমজানে আরও বহু মানুষকে গরমের মধ্যে এই অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে বলেও আশঙ্কা তার। ২ এপ্রিল থেকে শ্রীলঙ্কায় রমজান শুরু হয়েছে। অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ বলেন, প্রতিদিন এই কেরোসিন কেনার লাইনে দাঁড়াতে গিয়ে তার অর্থনৈতিক সঙ্কট আরও বাড়ছে।

৬৬ বছর বয়সী এস এ উইজেপালা বলেন, কেরোসিরে রান্না করা খাবারের স্বাদ তার ভালো না লাগলেও এ ছাড়া তার কিছু আর করার নেই। শ্রীলঙ্কান রেলওয়ের সাবেক এই কর্মচারী বলেন, তিনি যা পেনশন পান তা দিয়ে কোনোভাবেই তার চলে না। তিনি বলেন, গত বছরের শেষের দিকে আমরা কেরোসিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। গ্যাসের দাম তখনও আকাশ ছোয়নি। এখন একটা গ্যাস সিলিন্ডারের দা ৪ হাজার রুপি আর তা কেনার ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই আমাকে লাইনে দাঁড়িয়ে এই কেরোসিনই কিনতে হবে।

ব্যাংক কর্মী নিরোশানি পেরেরা বলেন, আমি তো অফিসেই কন্টেনার নিয়ে যাই। যখনই শুনি কোনো স্টেশনে কেরোসিন পাওয়া যাচ্ছে, গিয়ে লাইনে দাঁড়াই। নিরোশানি বলেন, কোনো কোনো সরকারি কর্মকর্তারা বলেন, লাইনে দাঁড়িয়ে কেরোসিন কিনে তা কালোবাজারে বিক্রির জন্য নাকি বেশিরভাগ মানুষ লাইনে দাঁড়ান। তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ কেবল দুঃখজনকই নয়। এতে মানুষ ক্ষুব্ধও হয়। আমাদের এই দুর্ভোগ নিয়ে মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের আরও যৌক্তিক আচরণ করা উচিৎ।

বৈশাখী নিউজ/ জেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর