তীব্র গরমে ধুঁকছে ভারতীয় উপমহাদেশ

সময়: 3:07 pm - May 8, 2022 | | পঠিত হয়েছে: 5 বার

ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে সহ্য ক্ষমতার পরীক্ষায় ফেলে দেয়া তীব্র তাপপ্রবাহ বাংলাদেশেও চড়িয়ে দিচ্ছে থার্মোমিটারের পারদ; জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এক সঙ্কট জনস্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনকে ফেলছে ঝুঁকিতে।

এ বছর ভারত ও পাকিস্তানের কিছু অংশে বয়ে যাওয়া তাপদাহ থার্মোমিটারের পারদকে নিয়ে গেছে রেকর্ড উচ্চতায়; তীব্র গরম ঝুঁকিতে পড়েছে দুই দেশের লাখ লাখ মানুষের জীবন। দিল্লিতে ১২ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে। ৭২ বছরের মধ্যে এপ্রিলে এমন তাপদাহ দেখেনি দিল্লিবাসী। আর মে মাসের শুরুতে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের জেকোবাবাদে তাপমাত্রা ওঠে রেকর্ড ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

বার্তাসংস্থা সিএনএন- এর আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই দিনগুলির তাপমাত্রা ছিল এপ্রিল মাসের গড়ের চেয়েও তিন ডিগ্রী এগিয়ে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অস্বাভাবিক আবহাওয়ার কারণে এই তাপপ্রবাহ আরও বাড়বে এবং ‘প্রচণ্ড গরমে’ দেশ দুটির হাজার হাজার মানুষ মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষ জলবায়ু বিজ্ঞানী। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ওই জলবায়ু বিজ্ঞানীর রবার্ট রোহডের বরাতে এএফপি জানিয়েছে, তিনি বার্কলে আর্থ নামের একটি অলাভজনক পরিবেশবাদী সংস্থায় শীর্ষ বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেন। এ সপ্তাহে প্রকাশিত একটি গবেষণার ভিত্তিতে রবার্ট রোহডে এক টুইটার পোস্টে বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ও বায়ুর তাপমাত্রার মধ্যে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। সূর্যকিরণে বালু যেমন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, তেমনি ভূপৃষ্ঠের মাটিও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।আবহাওয়ার প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, বায়ুর তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে গেছে। এই ভয়ংকর তাপপ্রবাহের কারণে হাজার হাজার মানুষ মারা যেতে পারে।’রবার্ট রোডহে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্যালিফোর্নিয়া যেমন ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে, তেমনি দক্ষিণ এশিয়াও তীব্র তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে আছে।’

গ্রীষ্ম কেবল পা রেখেছে, আর তাতেই দাবদাহে পুড়ছে উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ভারত ও পাকিস্তানের কিছু কিছু জায়গায় এরমধ্যেই রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছে গেছে তাপমাত্রা। খরতাপ এত অসহনীয় যে তাতে প্রাণের ঝুঁকিতে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ, আর এসব কিছুর জন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আর জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শুধু একটি তথ্যই যে কারো টনক নড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তা হলো- গত এপ্রিলে উত্তরপশ্চিম ও মধ্য ভারতে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১২২ বছর আগে তাপ রেকর্ড শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ, এত সুদীর্ঘ বছরের ইতিহাসে এমন ছাড়খার করা উত্তাপের দেখা মেলেনি। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের তথ্যমতে, এপ্রিলে আলোচিত দুই অঞ্চলে তাপমাত্রা যথাক্রমে ৩৫.৯ ও ৩৭.৭৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে পৌঁছায়।

গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে ভারত ও পাকিস্তানে তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বলা হচ্ছে, বছরের উষ্ণতম মাস এই অঞ্চলে এখনো আসেনি। ভারতের পরিবেশবিজ্ঞান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৯৮০ সাল থেকে ভারতে তাপপ্রবাহে মৃত্যুর হার ৬০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার প্রধান পেটেরি তালাস এ সপ্তাহে বলেছেন, ‘কৃষি, পানি, জ্বালানি সরবরাহ এবং অন্যান্য খাতে ইতিমধ্যে ‘জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব’ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।’

হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্যামিলো মোরা বলেছেন, ‘এ ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় দেখে বেশির ভাগ মানুষ হতবাক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হতবাক হওয়ার কিছু নেই। আমরা বহু বছর ধরে পরিবেশের এই বিপর্যয়ের ব্যাপারে সতর্ক করে আসছি।’ তাপপ্রবাহের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চল (ভারত ও পাকিস্তান) এবং অন্যান্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে দেশটির দক্ষিণপূর্ব সিন্ধু প্রদেশের জ্যাকোবাবাদ ও সিবি শহরে গত শুক্রবার তাপাঙ্ক রেকর্ড হয়েছে ৪৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা ১১৬.৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট। পাকিস্তনের আবহওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ওইদিন উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত বিশ্বের যেকোনো শহরের তুলনায় বেশি তাপমাত্রা ওই দুটি শহরেই রেকর্ড করা হয়।

পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শেরী রেহমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথমবার ‘বসন্তহীন’ একটি বছর পাকিস্তানে দেখা যাচ্ছে। সে তুলনায় ভারতের বরাত ভালো। চলতি সপ্তাহেই সেদেশে তাপমাত্রা কমে আসার আভাসা দিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি)। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু সংকট আরও ঘন ঘন ও দীর্ঘ তাপদাহের জন্ম দিবে, এতে ভারত ও পাকিস্তান এ দুই দেশের শত কোটির বেশি জনতার জীবনধারণ দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) তথ্যমতে, জলবায়ু সংকটে সবচেয়ে বাজেভাবে প্রভাবিত দেশ দেশগুলোর মধ্যে ভারতও থাকবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। আইপিসিসি প্রতিবেদনের শীর্ষ লেখক এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট ফ্র হিউম্যান সেটেলমেন্টস- এর জ্যেষ্ঠ গবেষক ডক্টর চাঁদনী সিং বলেন, ‘আমরা গরমের তীব্রতা বাড়তে দেখছি, তাপদাহ শুরুর সময়ও এগিয়ে আসছে, থাকছে আগের চেয়ে দীর্ঘসময় ধরে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা এই আশঙ্কাই করেছিলেন, জনস্বাস্থ্যের ওপর যার ধারাবাহিক প্রভাব পড়তে চলেছে।’ সূত্র: সিএনএন, এএফপি।

বৈশাখী নিউজ/ জেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর