দেশে দেশে রাজনৈতিক সংকট

সময়: 9:30 am - July 19, 2022 | | পঠিত হয়েছে: 3 বার

অন্ন বস্ত্র বাসস্থান-মানুষের এই মৌলিক চাহিদা যখন পূরণে হিমশিম খেতে হয়। তখন স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভ জেগে ওঠে, ধীরে ধীরে তা একসময় বিস্ফোরণ হয়। দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। এমনই এক নানামুখী সংকটের ফলে দেখা দিয়েছিলো আরব বসন্ত।

বর্তমানেও দেশে দেশে একই ধরনের সংকট চলছে। দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক সংকট। আরব বসন্তের আন্দোলনে চারজন প্রেসিডেন্টকে সরে যেতে হয়েছিল। সে সময় সিরিয়া ও লিবিয়ায় দেখা দেয় ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ।

এদিকে বিশ্বজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক মন্দায় জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু মানুষ খাওয়া বন্ধ করতে পারে না। একইভাবে পরিবহণ খরচও মানুষকে ভোগায়। যখন খাদ্য ও জ্বালানির দাম বেড়ে যায়, জীবনযাত্রার মান তখন হঠাৎ করে পড়ে যায়।

সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে দরিদ্র দেশগুলোর শহরে বসবাস করা মানুষ। খাবার ও পরিবহণ-খাতে তাদের আয়ের বড় একটা অংশ ব্যয় করতে হয়। জীবনযাত্রা দুর্বিসহ হয়ে ওঠায় দেশে দেশে বিক্ষোভ দেখা দেয়, শুরু হয় রাজনৈতিক সংকট।

করোনা মহামারির ভয়াবহতা কমে আসার পরে চলমান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ইউক্রেনে হামলা করে বসে রাশিয়া। এতে বিশ্বজুড়ে চরম খাদ্য ঘাটতির পাশাপাশি জ্বালানি-সংকট দেখা দিয়েছে। এরফলে চলতি বছর বিভিন্ন দেশে অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ শ্রীলঙ্কা। দেশটির অর্থনৈতিক সংকট জোরালো ভাবে রাজনৈতিক সংকটে মোড় নিয়েছে। তুমুল বিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন এবং প্রাণ বাঁচাতে দেশ থেকে পালিয়ে যান।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট করা হয়। এতে গণরোষের আগুনে যেন ঘি এসে পড়ে। জনতার রোষের মুখে পুরো শ্রীলঙ্কা অচল হয়ে পড়ে। রাজধানী কলম্বোয় বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দখলে নেয়। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেন। রাজধানী কলম্বো ও দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করার জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন। উচ্ছৃঙ্খল আচরণে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করারও নির্দেশ দেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা কোনো কিছুরই পরোয়া করছে না। তারা রনিলের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করে চলেছে।

এর আগে রাজনৈতিক সংকটে পড়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দেশ পাকিস্তান। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে মেয়াদ পূর্ণ করার ১৫ মাস আগেই বিদায় নিতে হয়েছে। যদিও ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেষ্টার কোনো কমতি করেননি ইমরান খান।

কিন্তু তার শেষ রক্ষা হয়নি। কারণ দেশটির উচ্চ আদালত ডেপুটি স্পিকারের সংসদ ভেঙে দেয়াকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করে। তাই ইমরান খান ও তার দল পিটিআইকে ক্ষমতা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এই কার্যটি সংঘটিত হওয়ার পরেই পাকিস্তানজুড়ে এক নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সংসদ থেকে একযোগে পদত্যাগ করার হুমকি দেয় পিটিআই সদস্যরা।

ইমরান খানের পতনের পর ক্ষমতায় এসেছে পিএম-এর প্রধান শাহবাজ। যিনি কিনা পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ভাই, এই শাহবাজ পাকিস্তানের বৃহৎ প্রদেশ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

এর আগে ২০২১ সালে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ আফগানিস্তানেও সরকার পতন হয়। সে সময় তালেবানের সশস্ত্র অভিযানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। আফগানিস্তান ছেড়ে প্রতিবেশী দেশ তাজিকিস্তানে হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে যান তিনি।

এরপর চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি মধ্য এশিয়ার তেলসমৃদ্ধ দেশ কাজাখস্তানে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে দেখা দেয়া বিক্ষোভ-সহিংসতার মুখে প্রধানমন্ত্রী আসকার মমিনের নেতৃত্বাধীন সরকার পদত্যাগ করে। প্রেসিডেন্ট কাসেম জোমার্ট তোকায়েভ প্রধানমন্ত্রী আসকার মমিনের নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করেন।

এদিকে চলতি বছরের ২০ জুন দিনের প্রথম ভাগে ইসরাইলের জাতীয় সংসদে সরকার আস্থা ভোটের মুখে পড়েন। সেখানে সরকার জিততে না পারার পর সংসদ ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন বেনেট ও লাপিদ। তার আগে দুই ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়াই সরকার চালিয়ে আসছিলেন নাফতালি বেনেট।

২০২১ সালের জুন মাসে ইসরাইলে সর্বশেষ আট দলীয় জোট সরকার গঠিত হয়। এই জোটে নাফতালি বেনেটের উগ্র ডানপন্থি দল যেমন ছিল, তেমনি ছিল লাপিদের মধ্যপন্থি ইয়েশ আতিদ পার্টি। তাদের সঙ্গে সরকারের যোগ দিয়েছিল আরব ইসলামি পার্টি। মূলত দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ঠেকাতে তারা এই জোট গঠন করেন।

এর আগে ২০১৯ সালে টানা দুই সপ্তাহের বিক্ষোভ-আন্দোলনে লেবাননে সরকারের পতন হয়। দেশজুড়ে নজিরবিহীন বিক্ষোভের মুখে নতি স্বীকার করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন দেশটির মিডিয়া মুঘল প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি।

সে সময় টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘সংকট সমাধানে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। আমি এখনই পদত্যাগপত্র জমা দিতে বাবদা প্যালেসে (প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন) যাচ্ছি।’ হারিরির এই ঘোষণাকে আনন্দোল্লাসের সঙ্গে স্বাগত জানান রাজধানী বৈরুতে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা। হারিরির জোট সরকারের অন্যতম প্রধান শরিক হিজবুল্লাহ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছে। তাদের মতে, বিদেশি শক্তি গৃহযুদ্ধ লাগানোর চেষ্টায় এ বিক্ষোভে মদদ দিচ্ছে।

বৈশাখী নিউজ/ এপি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর