সশস্ত্র জিহাদের পরিকল্পনা ছিল আল-কায়েদা মতাদর্শীদের: সিটিটিসি

আপডেট: January 2, 2023 |

রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিন্যাল, চট্রগ্রাম ও টেকনাফ এলাকায় অ‌ভিযান চা‌লি‌য়ে আল কায়েদা মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হিজরতকারী ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ (সি‌টি‌টি‌সি)। এই গ্রুপ‌টি জিহাদি সংগঠন আল-কায়েদার মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে সশস্ত্র জিহাদ করার পরিকল্পনা নিয়ে সংঘটিত হচ্ছিল ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছে সি‌টি‌টি‌সি।

গ্রেপ্তারকৃতরা হ‌লেন- সৌদি প্রবাসী দল নেতা আব্দুর রব, সাকিব, শামীম হোসেন, নাদিম শেখ, আবছার ও সাইদ উদ্দিন।

সোমবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএম‌পির অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান ব‌লেন, গ্রেপ্তারকৃত‌দের ম‌ধ্যে সৌ‌দি আরব প্রবাসী আব্দুর রব অনলাইন মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশে ফিরেন। বিমানবন্দর থেকে বাড়ি না গিয়ে চলে যান জঙ্গি ক্যাম্পে। আব্দুর রব সমন্বয়ক হিসেবে সবাইকে অনলাইনে একত্রিত করে শরিয়াহ ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন ও জিহাদ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতো। এরপর অনলাইনে বিদেশে অবস্থানরত এক বাংলাদেশি সহযোগীর সঙ্গে তাদের পরিচয় হয় এবং অডিও-ভিডিও কলের মাধ্যমে তারা ভার্চুয়ালি যোগাযোগ স্থাপন করে। বিদেশে অবস্থানরত ওই ব্যক্তি সবাইকে হিজরত করে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। প‌রে সেই সদস্য লিবিয়ায় অবস্থানরত আরও একজন বাংলাদেশি এবং টেকনাফের স্থানীয় একজনের সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দেয়। সম্মিলিত আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় আব্দুর রব, শামীম, সাকিব, নাদিম, সাইদসহ অন্য যারা হিজরতে রাজি তারা প্রথমে টেকনাফ গিয়ে তাদের স্থানীয় সহযোগীদের মাধ্যমে ট্রেনিং নেবে। পরে তারা বাংলাদেশে ইসলামী শাসন কায়েমের জন্য জিহাদ করবে।

আসাদুজ্জামান বলেন, গত বছর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সবাইকে নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় টেকনাফে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সে অনুসারে গত ১৬ নভেম্বর সাকিব ও নাদিম টেকনাফ যায় এবং স্থানীয় সহযোগী ও গ্রেপ্তার আবছার তাদের টেকনাফে ভাড়া বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন।

গ্রেপ্তার আব্দুর রব ছুটি না পাওয়ায় যথাসময়ে দেশে আসতে না পারায় তারা টেকনাফের বাসায় অবস্থান করে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। গত ২২ নভেম্বর আব্দুর রব দেশে এলে তার সহযোগী শামীম শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে রিসিভ করে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের অন্য সহযোগীর ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থানকালে তাদের মধ্যে বিভিন্ন শলাপরামর্শ হয়। দুদিন পর তারা দুজন গ্রেপ্তার সাকিবদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তাদের অন্যান্য সহযোগীদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইনভিত্তিক অ্যাপসে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দল গঠন করে। পরে স্থানীয় সহযোগীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে জঙ্গিবাদের জন্য টেকনাফে হিজরত করে অবস্থান করছিল।

তারা সংঘটিত হচ্ছিল, সশস্ত্র জিহাদের প্রস্তুতি নিচ্ছিল এটা কি কোনো সাংগঠনিক ব্যক্তি ছাড়া সম্ভব সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, এখনো তারা সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করাতে পারেনি। এটা ছিল তাদের প্রথম প্রচেষ্টা। তারা নিজেদের মধ্যে সশস্ত্র জিহাদের আলোচনা করে, এভাবে হিজরত করছিল। এদের প্রথমই তেমন সদস্য সংখ্যা থাকে না, এরা আস্তে আস্তে সদস্য সংখ্যা বাড়ায়। তারা টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান নেয়ার পরিকল্পনা করে।

আল-কায়েদার সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃতদের কোনো যোগাযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, আল-কায়েদার সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। গ্রেপ্তারকৃতরা আল-কায়দার মতাদর্শ অনুসরণ করে। অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও কনটেন্ট দেখে তারা মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।

গ্রেপ্তার আব্দুর র‌বের বিষ‌য়ে সি‌টি‌টি‌সি জানায়, আব্দুর রব একজন কোরআনে হাফেজ এবং কওমি মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। ২০১৯ সালে জুনে সৌদি-আরব যান। সেখানের আবা শহরের একটি মসজিদের ইমাম পদে চাকরি নেন। ইমামতির পাশাপাশি হেফজ শিক্ষা দিতেন। সৌদিতে অবস্থানকালে তিনি অনলাইনে বিভিন্ন জিহাদি পোস্ট ও ভিডিও দেখে জিহাদের জন্য অনুপ্রাণিত হন। একটা ভিডিও চিত্রে দেখেন বিশ্বে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন। সেটা যাচাই না করেই তিনি উদ্বুদ্ধ হন। ওই ভিডিওতে এক ব্যক্তির সন্ধান পান। সেই ব্যাক্তিকেও আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই এরকম জিহাদের আলোচনা করতে থাকেন। যার সঙ্গে আলোচনা করতে থাকে তার নাম আবু সাঈদ। তিনি চট্টগ্রাম অধিবাসী। এই ব্যক্তি বাদেও যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা এবং আরও অনেক ব্যক্তির সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছেন। সসস্ত্র প্রশিক্ষণ ও হামলার পরিকল্পনা করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা সিদ্ধান্ত নেয় টেকনাফ অঞ্চলে হিজরত করে একটি পাহাড়কে বেছে নেয়া হবে। সেখানে তারা প্রশিক্ষণ নিবে। সংগঠিত হবে ও সসস্ত্র জিহাদ করবে।

সাংবা‌দিক‌দের অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ডিএম‌পির অতি‌রিক্ত ক‌মিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের ৭০ শতাংশের বয়স ১৭ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে। এই বয়সীদের দ্রুত রডিক্রালাইজড করা যায়। তাই জঙ্গিরা কম বয়সী তরুণদের খোঁজে থাকে। সাইবার ওয়ার্ল্ডে জঙ্গিদের দেয়া ভিডিও কনটেন্টে লাইক কমেন্ট করলেই তাদের টার্গেট করে জঙ্গিরা।

তি‌নি বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো সাইবার স্পেসে অনেকটাই সক্রীয়। তারা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জঙ্গি সদস্য নির্বাচন করেন। তারা সাইবার স্পেসে তাদের যে নিজস্ব সাইট ও প্লাটফর্ম আছে সেখানে ইনক্রিপমেন্ট অ্যাপসের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন রেডিক্যালাইজড কনটেন্ট ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা চালায়। এই প্রচার-প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যারা লাইক বা কমেন্ট করে তাদের মধ্যে থেকে টার্গেট গ্রুপকে এক্সপার্ট জঙ্গিরা সদস্য নির্বাচন করে। এই তরুণদের দ্রুত রেডিক্যালাইজড করা যায় বলেই জঙ্গিরা তাদের টার্গেট করে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর