সাতদিনে রামেকে ১৫ শিশুর মৃত্যু

গত এক সপ্তাহে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ও বার্ণ ইউনিটে ভর্তি হয়েছে তিন শতাধিকের বেশি রোগী। ভর্তি হওয়া এসব রোগীর মধ্যে সাতদিনে ১৫ শিশু ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। যাদের সবার বয়স ১ মাস থেকে চার বছরের মধ্যে।

এছাড়া শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ দুই নারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

বুধবার (৪ জানুয়ারি) রংপুর সিভিল সার্জন ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছায়ফুল ইসলাম বলেন, পৌষের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রংপুর অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। দিন দিন তাপমাত্রা কমে আসাতে শীতে শিশু ও বয়স্করা কাবু হচ্ছেন।

তবে চলতি সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল। এখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে।
রমেক হাসপাতালের তৃতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি শয্যায় একাধিক শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে।

শয্যা না পেয়ে মেঝেতে বিছানা পেতে রাখা হয়েছে অনেক শিশুকে। প্রতি শয্যায় মায়েরা সন্তান নিয়ে বসে আছেন। কোনো শয্যায় দুজন, কোথাও তিনজন।

অনেকে সন্তানের চিকিৎসা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন। শিশুর সঙ্গে অভিভাবকের এমন ভিড়ে নার্স ও চিকিৎসকরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।

হাসপাতালের শিশু বিভাগের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স মোছা. শিখিলী খাতুন জানান, এবার কোল্ড ডায়রিয়ায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। চলতি মাসে প্রতিদিন কম বেশি ৫০-৬০টি শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে।

হাসপাতালে সেবা প্রদানে ব্যস্ত নার্স ও চিকিৎসকদের দাবি, শুধু শীতজনিত রোগে এসব শিশুর মৃত্যু হয়নি। শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, অপরিপক্ক ও কম ওজনের নবজাতক এবং জন্মের সময় মস্তিষ্কে আঘাতজনিত কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। সাধারণত শীতকালে শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর বেশির ভাগই গ্রাম থেকে আসা।

শিশু ওয়ার্ডে নবজাতকসহ শিশুর স্বাভাবিক মৃত্যুর হার অনেক কম। সপ্তাহে কখনো সাত-আটজনের মৃত্যু হয়। শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে অন্যান্য রোগে শিশুমৃত্যুর হার একটু বেশি মনে হচ্ছে। তবে অন্যান্য সময়ের চেয়ে শীতজনিত কারণে শিশু রোগী প্রতি বছরের মতো এবারও বেড়েছে।

শিশু বিভাগ সূত্র জানায়, দুটি শিশু ওয়ার্ডে গত দুই সপ্তাহ ধরে শিশু রোগী ভর্তির সংখ্যা শয্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। যাদের বয়স একদিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত। শীতের আগে এই ওয়ার্ডে এভাবে এত রোগী থাকতে দেখা যায়নি বলে চিকিৎসক ও নার্সরা জানান। শীত যতই বাড়ছে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাও বাড়ছে।

হাসপাতালের শিশু বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. তানভীর চৌধুরী জানান, গত সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা কম রয়েছে। আগের সপ্তাহে ৪ শতাধিক রোগী সেখানে চিকিৎসা নিয়েছে।

রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. শামীম আহমেদ বলেন, শীতের কারণে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের মধ্যে যাদের অবস্থা সংকটাপন্ন মনে হচ্ছে, তাদের ভর্তি করা হচ্ছে। তবে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

অন্যদিকে শীত নিবারণে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে রমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আফরোজা (৩৭) ও পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার নছিমন বেওয়া (৬৮) নামের দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে।