সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত টেম্পারিংয়ের অভিযোগ ইবিতে

আপডেট: October 21, 2023 |
inbound900223620284801999
print news

ইবি প্রতিবেদক : একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক যাবতীয় বিষয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেট। দুদক থেকে বাঁচতে এবার সেই সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তই টেম্পারিং করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) কর্তৃপক্ষ।

এমনই অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এমন খবর জানাজানি হওয়ার পর ক্ষোভে ফুঁসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, যে প্রশাসন সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত টেম্পারিং করেন তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপদ নয়।

আর প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলছেন, এই প্রশাসন সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত টেম্পারিং করে ভয়াবহ অপরাধ করেছে, জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখা যায় না।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, গতবছরের ৩০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫৬ তম সভায় ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক পদে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ উত্থাপন করা হয়।

সেখানে দুই প্রার্থী মিঠুন বৈরাগীকে ও ফিরোজ খানকে প্রভাষক পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এই নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্তে আসেন ইউজিসির প্রতিনিধি দল। এরপর বিষয়টি গড়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পর্যন্ত।

নিয়োগ না পেয়ে সংক্ষুব্ধ প্রার্থী মো. শাহবুব আলম লিখিত অভিযোগ জমা দেন দুদকে।

অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণীতে বলা হয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম এর বিরুদ্ধে ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ গ্রহণ, দুর্নীতি ও অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।

দুদকের অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণীতে বলা হয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম এর বিরুদ্ধে ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ গ্রহণ, দুর্নীতি ও অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি ড. বখতিয়ার হাসানের অভিযোগ, দুদকের হাত থেকে বাঁচতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন টেম্পারিং করেছেন সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত।

আর টেম্পারিং করে সংযুক্ত করা সিদ্ধান্তে যোগ করা হয়েছে ‘ক’ ও ‘খ’ নামে দুটি উপধারা। আর সেই ধারায় যুক্ত করা হয়েছে তার নাম।

সেখানে বলা হয়েছে, এই নিয়োগে ড. বখতিয়ার হাসানের নির্দিষ্ট একজন প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া যায়নি বলে তিনি চূড়ান্ত শীটে সাক্ষর করেননি।

ড. বখতিয়ার হাসানের আচরণ অশোভনীয় ছিল মর্মে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

পরে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় ড. বখতিয়ার হাসানকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বখতিয়ার হাসান শোকজের জবাব দিলেও তা সন্তোষজনক নয় বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফের তদন্ত কমিটি করে এই বিষয়ে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তদন্ত কমিটিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছেন ড. বখতিয়ার হাসান।

অধ্যাপক ড. বখতিয়ার হাসান বলেন, ১৯ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে শুনানি ছিল। আমার আইনজীবি উচ্চ আদালতকে সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত টেম্পারিংয়ের বিষয়টি জানালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এ ব্যাপারে ব্যাখা চাওয়া হয়েছে।

বখতিয়ার হাসান আরও বলেন, ২৫৬ তম সিন্ডিকেটে নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে আমার বিষয়ে কোন অভিযোগের বিষয় উল্লেখ ছিল না।

পরবর্তীতে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত টেম্পারিং করে উপধারা ‘ক’ ও ‘খ’ যোগ করে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে কর্তৃপক্ষ এবং আমাকে শোকজ করে। আমাকে হয়রানির জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত এসব করা হয়।

ড. বখতিয়ার হাসানের অভিযোগ, দুদকের হাত থেকে বাঁচতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন টেম্পারিং করেছেন সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত। আর টেম্পারিং করে সংযুক্ত করা সিদ্ধান্তে যোগ করা হয়েছে ‘ক’ ও ‘খ’ নামে দুটি উপধারা। আর সেই ধারায় যুক্ত করা হয়েছে তার নাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, এই প্রশাসন নিজে বাঁচার জন্য সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত টেম্পারিং করেছে, যা ভয়াবহ অপরাধ।

জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখা যায় না। তারা ভবিষ্যতে যেসব নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করবে সেখানেও এমন লজ্জাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে বলে শিক্ষকরা আশঙ্কা করছেন।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ বর্তমান কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপদ নয়।

সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এড়িয়ে যান উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম। তিনি বলেন, ড. বখতিয়ার হাসানের বিষয়ে কোন এজেন্ডাই ছিল না সিন্ডিকেটে।

তবে সিলেকশন বোর্ডে কি হয়েছিল এটা অনেকে জানতে চেয়েছিলেন। এরপর উপ-উপাচার্য (অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান) ঘটনাটি সবাইকে পরিস্কার করেন। তখনই অধ্যাপক বখতিয়ারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সুপারিশ করা হয়।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর