ইরাকে মোসাদের সদর দপ্তরে ইরানের বিপ্লবী গার্ডসের হামলা

আপডেট: January 16, 2024 |

 

ইরাকের আধা-স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি অঞ্চলে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দপ্তরে হামলা চালানোর দাবি করেছে ইরানের বিপ্লবী গার্ডস বাহিনী। ইরানের এই এলিট ফোর্স সিরিয়ায় আইএস’র বিরুদ্ধেও হামলা চালিয়েছে।

দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

ইরানের বিপ্লবী গার্ডস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জায়োনিস্টদের সাম্প্রতিক নৃশংসতার প্রতিক্রিয়ায়, বিপ্লবী গার্ডস ও অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্সের কমান্ডারদের হত্যার কারণে… ইরাকের কুর্দি অঞ্চলে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সদর দপ্তর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।’

রয়টার্স স্বাধীনভাবে ইরানের সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনটি যাচাই করতে পারেনি। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বলেও জানিয়েছে রয়টার্স।

ইসরায়েল গত মাসে সিরিয়ায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইরানের বিপ্লবী গার্ডসের তিন কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিল। যার মধ্যে একজন সিনিয়র কমান্ডারও ছিলেন, যিনি সেখানে সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ ঘটনায় সেসময় প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ইরান।

বিপ্লবী গার্ডসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আমাদের জাতিকে আশ্বস্ত করছি, শহিদদের রক্তের শেষ বিন্দুর প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত গার্ডসদের আক্রমণাত্মক অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

মার্কিন কনস্যুলেটের কাছে একটি আবাসিক এলাকায় কুর্দিস্তানের রাজধানী ইরবিলের উত্তর-পূর্বে হামলার পাশাপাশি সিরিয়াতেও বেশ কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। বিপ্লবী গার্ডস বলেছে, সিরিয়ায় আইএসকে লক্ষ্য করে তারা এসব হামরা চালিয়েছে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কেরমান শহরে দুটি বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে আইএস। ওই বিস্ফোরণে প্রায় ১০০ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছিল।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ইরবিলের কাছে ইরানের হামলার নিন্দা করেছে। তারা এ ঘটনাকে ইরানের ‘বেপরোয়া’ কাজ বলে অভিহিত করেছে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, হামলায় মার্কিন কোনও স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি ও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ট্র্যাক করেছি, যেগুলো উত্তর ইরাক এবং উত্তর সিরিয়ায় আঘাত হেনেছিল। কোনও মার্কিন কর্মী বা স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি।’

অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেছেন, ‘আমরা পরিস্থিতির মূল্যায়ন চালিয়ে যাচ্ছি। তবে প্রাথমিক ইঙ্গিত হলো, এটি একটি বেপরোয়া ও ভুল হামলা ছিল।’

তিনি আর বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সমর্থন করে।’

ইরাকি কুর্দি প্রধানমন্ত্রী মাসরুর বারজানি ইরবিলে হামলাকে ‘কুর্দি জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলে নিন্দা করেছেন।

ইরবিলে ইরানের হামলায় অন্তত চারজন বেসামরিক মানুষ নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছে। কুর্দিস্তান সরকারের নিরাপত্তা পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেছে, হামলাটিকে একটি ‘অপরাধ’।

ইরাকি নিরাপত্তা ও চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, হামলায় নিহতদের তালিকায় কোটিপতি কুর্দি ব্যবসায়ী পেশরাউ দিজাই ও তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছেন। তাদের বাড়িতে একটি রকেট বিধ্বস্ত হলে তারা নিহত হোন।

নিরাপত্তা সূত্র আরও জানায়, ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র কুর্দি একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার বাড়িতে ও আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র কুর্দি গোয়েন্দা কার্যালয়ে এসে পড়েছিল। ইরাবিল বিমানবন্দরে বিমান চলাচল বন্ধ ছিল।

ইরান এর আগেও বেশ কয়েকবার ইরাকের কুর্দি অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে। দেশটির দাবি, ওই এলাকা ইরানের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর পাশাপাশি চিরশত্রু ইসরায়েলের এজেন্টদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর