জাবিতে পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবিতে বৈষম্যবিরোধীদের আমৃত্যু গণঅনশন

আপডেট: February 2, 2025 |
inbound2853086683691871756
print news

জাবি প্রতিনিধি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভর্তি পরীক্ষা থেকে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আমৃত্যু গণঅনশন শুরু করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার নেতাকর্মীরা।

রবিবার বেলা ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন অনশনকারীরা। সর্বশেষ বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তারা অনশনরত আছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ৮ জন শিক্ষার্থী গণঅনশন পালন করছেন। তারা হলেন, নৃবিজ্ঞান ৫০ ব্যাচের নাজমুল ইসলাম  লিমন, সরকার ও রাজনীতি ৪৯ ব্যাচের নাহিদ হোসেন ইমন, মার্কেটিং ৫০ ব্যাচের মোহাম্মদ রায়হান, গণিত ৫০ ব্যাচের গালিব হোসেন, ম্যানেজমেন্ট ৫১ ব্যাচের নাদিয়া রহমান অন্বেষা, ইংরেজি ৫৩ ব্যাচের মোহাম্মদ আলী চিশতি, ম্যানেজমেন্ট ৫১ ব্যাচের মেহরাব তূর্য, আইন ও বিচার ৫১ ব্যাচের জাইবা জাফরিন এবং ভূগোল পরিবেশ ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মুয়িদ মুহম্মদ ফাহিম।

অনশনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে লড়াইয়ের মূলমন্ত্র ছিল বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি বাতিল ও যৌক্তিক সংস্কার করা।

সেজন্য অনেককে রক্ত দিতে হয়েছে। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পর সেই কোটা নিয়ে আবারও অনশনে বসতে হচ্ছে, যা হতাশা ও লজ্জার বিষয়।

ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক পোষ্য কোটার জন্য বঞ্চিত হচ্ছে গরীব  কৃষক ও শ্রমিকের সন্তান। তাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে চিরতরে অযৌক্তিক পোষ্য কোটার কলঙ্ক থেকে মুক্ত করার জন্য আমাদের আমৃত্যু অনশনে বসা।

অনশনরত ইংরেজি বিভাগের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী চিশতী বলেন, দেশের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা।

এজন্য দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু এই বৈষম্যমূলক পোষ্যকোটার কারণে অনেকে নামমাত্র নাম্বার পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, যার ফলে মেধাবীরা যোগ্য স্থান হারায়।

ফলশ্রুতিতে জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। আমরা চাই এ ধরনের অযৌক্তিক কোটা নিপাত যাক এবং মেধাবীরা তাদের মেধার ভিত্তিতে ক্যাম্পাসে আসার সুযোগ পাক এবং তাদের মেধা দিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করুক।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদ হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি রয়েছে, তা গোড়া থেকে উপড়ে দিতে আমরা অনশনে বসেছি।

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আমাদের প্রাণের দাবি ছিল— মেধা দিয়েই আমাদের মূল্য যাচাই হবে, কোনো কোটা দিয়ে নয়। কিন্তু অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এমন অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি জাবিতে বিদ্যমান থাকা আমাদের জন্য লজ্জার।

এমনকি আমাদের ভাইবোনদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে থাকা প্রশাসনের জন্যও লজ্জার। অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বাতিল না হলে আমাদের কর্মসূচি চলবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সংগঠক মোহাম্মদ রায়হান বলেন, জুলাইয়ে কোটা পদ্ধতি বাতিলের জন্য আবু সাইদ, মুগ্ধসহ অসংখ্য ভাইবোন শহীদ হয়েছেন।

এতো রক্ত কোটা পদ্ধতি বাতিলের জন্য দেওয়া হলো এরপরও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অযৌক্তিক পোষ্য কোটা রয়ে গেছে।

যা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার  ও হতাশার বিষয়। অযৌক্তিক এ কোটার জন্য বঞ্চিত হচ্ছে গরীব কৃষক, শ্রমিকের সন্তান। তাই বিশ্ববিদ্যালয়কে অযৌক্তিক পোষ্য কোটার কলঙ্ক থেকে মুক্ত করার জন্য আমরা আমৃত্যু গণঅনশনে বসেছি।

অনশনে বসা নৃবিজ্ঞান ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, পৌষ্য কোটার মত বৈষম্য আর নেই। আমরা বৈষম্যহীন এক নতুন বাংলাদেশের জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছি।

অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য গলার কাঁটা নামক পোষ্য কোটা চালু রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। যা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণের অন্তরায়।

এসময় আইবিএ ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফারহানা বিনতে জিগার ফারিন বলেন, আমাদের গণঅভ্যুত্থানের ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন দাঁড় করানো হয়েছে।

কিন্তু সেই প্রশাসন থেকে আমরা দেখছি যে আমাদের প্রতিনিয়তই আমাদের শুরুর দিকের যে দাবিগুলো ছিল সেগুলো আদায় করার জন্য আমাদের বারবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে, এবং তারই একটি অংশ হিসেবে আমরা এই পোষ্যকোটা নিয়ে আজকে আমরা বসেছি।

আমরণ অনশনের ডাক দিতে হচ্ছে এবং সেখানে দেখা যাচ্ছে ভিসি স্যার এখনো আমাদের সাথে অফিশিয়ালি কোনো কথা বলেননি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে যদি আমরা আশানুরূপ ফলাফল না পাই, তাহলে হয়তো আমাদের এই আমরণ অপশনের কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে। এবং আমাদের যদি কিছু হয় তার দায়ভার প্রশাসনকে নিতে হবে।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সদস্য সচিব তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বিদ্যমান।

আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের কাছে এই পোষ্য কোটা সম্পূর্ণরূপে বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছি। যেহেতু এই কোটার কোনো যৌক্তিকতা নেই, সেহেতু এটি সংস্কারের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। এটা সম্পূর্ণরূপে বাতিল করতে হবে।’

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর