বগুড়ার তথাকথিত মিনি জাফলংয়ে গোসল করতে গিয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু

আপডেট: April 5, 2025 |
inbound3847739319449055502
print news

শাহজাহান আলী,বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে(ফেসবুক) মাত্র দুইদিনেই ভাইরাল হওয়া বগুড়ার “মিনি জাফলং খ্যাত নতুন একটি দর্শনীয় স্হান।

কথিত সেই জাফলং-এ গোসল করতে নেমে প্রাণ গেলো আবু সাদাত ইকবাল নামে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর।যা নিয়ে এবার সমালোচনার ঝড় উঠেছে সেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

সেই সঙ্গে বেড়িয়ে আসছে সস্তা ভাইরাল হওয়া ” মিনি জাফলং”- এর ভিন্নরুপ। পাশাপাশি প্রশাসনসহ অতি উৎসাহী উইটিউবারদের দায়িত্বহীন কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্হানীয় এলাকাবাসী।

তাঁদের অভিযোগ শেরপুর উপজেলার বেলগাছি ব্রিজকে ঘিরে কথিত ” মিনি জাফলং” হিসাবে অতিরঞ্জিত প্রচার-
প্রচারণা চালানো হলেও সেখানে লুকিয়ে থাকা মরণ ফাঁদ সম্পর্কে কেউই নুন্যতম সর্তকতা করেননি।

এছাড়া স্হানীয় দুইটি ভারি শিল্প কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য নদীতে ফেলায় নদীর পানি বিষাক্ত হয়।তাই এই বিষাক্ত পানিতি পা,ভেজালেই ঘা-পচড়াসহ চর্মরোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন।

বিষয়টি সবার জানা থাকলেও সে বিষয়ে কোনো প্রচার-প্রচারণাসহ সতর্ক করা হয়নি। ফলে কথিত” মিনি জাফলং-এ জলকেলিতে অংশ নেওয়া বিনোদনপ্রেমীরা ভয়স্কর স্বাস্থ্যঝুকিতে পড়তে পারেন বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল।

তাই গুজব উড়িয়ে ভ্রমণ পিপাসুদের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বরোপ করেন মহলটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলাধীন সুঘাট ইউনিয়নের জোড়গাছা নামক একটি গ্রাম রয়েছে।

ওই গ্রামটির মধ্য দিয়েই বহমান বাঙালী নদী।এই নদীটির ওপর একটি ব্রীজ রয়েছে। যার নাম বেলগাছী ব্রীজ। বছরখানের আগে বাঙালী নদী খনন করা হয়।

ফলে ব্রীজের নিচে নদীর তলদেশে বালুর স্তর ও ছোট ছোট কুচি পাথর জমে যায়।যাকে স্হানীয়ভাবে ” মিনি জাফলং” বা “গরীবের জাফলং”নাম দেওয়া হয়।

পরে ঈদের এক সপ্তাহে আগে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে নিজের ভেরিফাইড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেন স্হানীয় দুই যুবক।

এরপর মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে।এমনকি মাত্র দুইদিনেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে( ফেসবুক) ভাইরাল হয় বগুড়ার “মিনি জাফলং ” খ্যাত নতুন একটি দর্শনীয় স্হান।

যেখানে ঈদের দিন থেকে ঢল নেমেছে ভ্রমণ পিপাসুদের। নদীর জলধারায় স্নানোৎসবে মেতে উঠেছেন নানা বয়সী,মানুষ। প্রতিদিনিই এখানে ভ্রমণ পিপাসুদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন তারা।পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সময় কাটাতেও অনেকেই আসছেন ভাইরাল হওয়া ওই স্হানটি ঘুরতে।

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে সৃষ্টি হয়েছে এখানে। এমন পরিস্থিতিকে পুঁজি করে সেখানে অস্হায়ী খাবারের দোকান বসিয়েছেন স্হানীয়রা।

পাশাপাশি শিশুদের জন্য কিছু বিনোদনেরও ব্যবস্হা করেন তারা। ফলে ঈদ পরবর্তী প্রতিদিন সকাল থেকে এই স্হানটিতে ভ্রমণ পিপাসুদের ঢল নামে।

এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সকাল ৮ টার দিকে পাশের ধনুট উপজেলা বিলচাপড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমী ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের (আরডিএ) প্রভাষক ইকবাল হোসেন ও সূত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সানজিদা পারভিন রিতা দাম্পতির ছেলে সাদাত হোসেন ইকবাল ঈদের ছুটিতে শেরপুর উপজেলার সূত্রাপুর গ্রামস্হ নানা বাড়িতে বেড়াতে এসে স্থানীয় বেলগাছী ব্রীজ সংলগ্ন কথিত “মিনি জাফলং”খ্যাত স্হানে ঘুরতে যান।

একপর্যায়ে বাঙালী নদীতে জলকেলি করতে করতে ডুবে নিখোঁজ হন ওই শিশু। পরে স্হানীয় লোকজনের সহযোগিতায় প্রায় আধা ঘণ্টা পানিতে খোঁজাখুঁজি করে শিশু সাদাহ হোসেনকে উদ্ধার করা হয়।

এরপর তাকে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত সাদাত আরডিএ স্কুল এন্ড কলেজের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

ঘটনাটি ঈদ বিনোদন মুহুর্তেই রুপ নিলো তীব্র শোকে।এরপরও সেখানে বিনোদন প্রেমীদের ব্যাপক উপস্থিত লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

০৪ এপ্রিল (শুক্রবার) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই উপজেলা ছাড়াও আশেপাশের জেল-উপজেলা থেকেও পর্যটকরা এখনো ছুটে আসছে।

তাদের কেউ নৌকা ভ্রমণ করছেন,কেউবা নদীর পাড়ে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন। তবে বেশিরভাগই নদীর জলে স্নানোৎসবে মেতে উঠেছেন।

এসময় কথা হয় শাহবন্দেগী ইউনিয়নের সাধুবাড়ী থেকে আসা গোলাম রব্বানী সঙ্গে। তিনি বলেন,ঈদের ছুটিতে সময় কাটানোর জন্য এখানে এসেছি।

অনেক মানুষের সমসগম ঘটায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরী হয়েছে। এখানে এত মানুষের ভিড় আগে কখনো হয়নি।গাইবান্ধা থেকে আসা বাবু মিয়া বলেন, সিলেটের মতো এটি ” নতুন জাফলং” শোনে এখানে এসেছিলাম।

তবে নদীবেষ্টিত এখানকার প্রাকৃতিক সুন্দর্য ভালো লাগলেও বেশি মানুষের পদচারনায় কাদাযুক্ত হয়ে স্হানটি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এইখানে ভ্রমণে সাবধান থাকা দরকার।

এদিকে তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এই উপজেলার মির্জাপুর, ভবানীপুর ইউনিয়নে একাধিক ভারী শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে।

এরমধ্যে দুইটি কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য করতোয়া ও বাঙালী নদীতে ফেলা হয়। ফলে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে।

এই কারণে নদীর প্রাণী মরে যাচ্ছে। পানি খেয়ে মারা যাচ্ছে গবাদি পশু।নদীতে গোসল করার কারণে অসুস্হ হয়ে পড়েছে মানুষজন।নদীতে খোঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা মৎস্য চাষিরা ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন।

তাই নদীর পানি ব্যবহার না করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনাও দেওয়া আছে।আর “মিনি জাফলং” খ্যাত এলাকাটিও সেই বিষাক্ত নদীর আওতামুক্ত।

এমন পরিস্থিতিতে সেখানে বিনোদন প্রেমীরা স্নানোৎসবে মেতে উঠেছেন।ফলে তারা ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল।

এবিষয়ে শেরপুর উপজেলার স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা,সাজিদা হাসান সিদ্দিকী লিংকন বলেন,নদীতে রাসায়নিক বর্জ্য ফেলায় ওই বিষাক্ত পানি ব্যবহারে মানুষের শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বিশেষ করে ঘা-পচরাসহ বিভিন্ন চর্মরোগ।এছাড়া পেটের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই এই পানি ব্যবহারের বিষয়ে সচেতনা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বরোপ করেন তিনি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরো বলেন,ঈদের কয়েকদিনে সুঘাট ও ভবানীপুর এলাকার বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে এসে ভর্তি হন।পরে তারা চিকিৎসা নি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর