বুড়িমারী মসজিদের খাদেমসহ আরও ৫ জন গ্রেফতার

আপডেট: November 2, 2020 |

লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে গণপিটুনিতে নিহত শহীদুন্নবী জুয়েলকে হত্যা ও মরদেহ পোড়ানোর দায়ে তিন মামলায় বুড়িমারী মসজিদের খাদেম জোবেদ আলীসহ (৬১) আরও ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট গ্রেফতার হলেন ১০ জন।

আজ সোমবার (২ নভেম্বর) সকালে মসজিদের খাদেম গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেন পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন্ত কুমার মোহন্ত।

ঘটনার পর থেকে প্রথম দফায় ৫ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে রবিবার (১ নভেম্বর) আদালতে নেয় পুলিশ। এর পর সোমবার আরও ৫ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলায় মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তবে প্রথম দফায় গ্রেফতার ৫ জনকে হত্যা মামলায় ৫ দিন করে রিমান্ড আবেদন জানায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পরিদর্শক মাহমুদুন্নবী।

আদালত সোমবার রিমান্ড আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করে গ্রেফতারকৃতদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। দ্বিতীয় দফায় গ্রেফতারকৃত খাদেমসহ ৫ জনকে সোমবার (২ নভেম্বর) বিকেলে আদালতে উঠানো হতে পারে বলে জানা গেছে।

প্রথম দফায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ওই এলাকার ইসমাইল হোসেনের ছেলে আশরাফুল আলম (২২) ও বায়েজিদ (২৪), ইউসুব আলী ওরফে অলি হোসেনের ছেলে রফিক(২০), আবুল হাসেমের ছেলে মাসুম আলী(৩৫) এবং সামছিজুল হকের ছেলে শফিকুল ইসলাম (২৫)। এই ৫ আসামিকে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

গত বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্ত বুড়িমারী বাজারের একটি মসজিদে জামাতে আসরের নামাজ আদায় করেন রংপুর থেকে আগত আবু ইউনুস মো. শহিদুন্নবী জুয়েল।

তবে মানসিক সমস্যা থাকায় মসজিদ থেকে সব মুসল্লি চলে গেলেও এক বন্ধুসহ তিনি রয়ে যান এবং মসজিদের খাদেমকে হুট করে র‌্যাব কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মসজিদের ভেতর অস্ত্র আছে, খুঁজতে হবে বলতে থাকেন।

খাদেম তাকে খুঁজে পেলে নিয়ে যান বললে তিনি মসজিদে তল্লাশি শুরু করেন। এ সময় মসজিদের বাইরে থেকে কয়েকজন ব্যক্তি এসে কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে জুয়েলকে মারতে থাকেন। এ খবর স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি বাইরে থাকায় একজন মেম্বারকে ডেকে নিতে বলেন।

এর পর একজন মেম্বার এসে জুয়েল ও তার বন্ধুকে মারধর করে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে গেলেও ততক্ষণে এ ঘটনা ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম, ফোন ও মুখে মুখে রটে যায়। ফলে চারপাশ থেকে মানুষ ছুটে আসতে থাকে।

তারা ইউনিয়ন পরিষদের দরজা ভেঙে জুয়েল ও তার সঙ্গীকে ধরে নিয়ে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় ইউএনও, ওসি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে গেলেও তারা কেবল জুয়েলের সঙ্গীকে উদ্ধার করতে পারেন। জুয়েলকে উদ্ধারের চেষ্টার সময় তাদেরও উন্মত্ত জনতা ধাওয়া দেয়।

এর পর ১৯ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেও জনতার উন্মত্ততাকে ঠেকানো যায়নি। অনুমানের ওপর ভর করে কোরআন অবমাননার অভিযোগ এনে এবং বাকি সবাই অন্ধের মতো সে কথা বিশ্বাস ও মনগড়াভাবে নানা কথা রটিয়ে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা করে।

এর পর তারই মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে তার দেহ সে আগুনে ছুড়ে মারে। আগুন নেভার পর জুয়েলের শরীরের মাত্র চারটি হাড় সেখান থেকে উদ্ধার হয়। পরে গোয়েন্দা সংস্থা ও মানবাধিকার সংস্থার তদন্তে জানা যায় সেখানে কোরআন অবমাননার মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি।

বৈশাখী নিউজ/ জেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর