অভিনেতা আব্দুল কাদের আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছেন

আপডেট: December 21, 2020 |

‘‘আমাদের রেখে বাবা কখনো দেশের বাইরে যাননি। পরিবার ছাড়া কখনো কোথাও যাননি। ভারত থেকে ফেরার পথে বিমানে বসে বাবা কেঁদেছেন। বললেন, ‘এটাই মনে হয় তোমাদের সঙ্গে শেষ যাত্রা।’ আমি বললাম, ‘বাবা এটা কেন শেষ হবে? আমরা আরো একসঙ্গে দেশের বাইরে ঘুরতে যাব।’’—সাংবাদিকদের  সঙ্গে আলাপকালে কথাগুলো বলেন বরেণ্য অভিনেতা আব্দুল কাদেরের পুত্রবধূ জাহিদা ইসলাম।আব্দুল কাদের মানসিকভাবে কিছুটা ভেঙে পড়েছেন। মাঝেমধ্যে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছেন। বিষয়টি জানিয়ে জাহিদা ইসলাম বলেন, ‘‘সাবিনা ইয়াসমিন ম্যাম এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি তো এখন অনেকটা ভালো। এ বিষয়টি বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। বাবা কান্নাকাটি করেন। বাবা তার পুরোনো বন্ধু-পরিচিতজনদের সঙ্গে কথা বলতে চান। তারা ফোন করলে খুব খুশি হন। ভিডিও কলে কথা বলতে চান। বাবা বলেন, ‘ক্যামেরা অন করো, দেখে কথা বলি।’

ক্যানসারে আক্রান্ত আব্দুল কাদের। ভারতের চেন্নাইয়ের ক্রিস্টিয়ান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। রোববার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় দেশে ফেরেন তিনি। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখান থেকে নগরীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আব্দুল কাদেরকে। সেখানে ডা. ফেরদৌস শাহরিয়ার সাঈদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।

আব্দুল কাদেরের অসুস্থতার পর সবসময় পাশে রয়েছেন তার পুত্রবধূ জাহিদা ইসলাম। আব্দুল কাদের তাকে মেয়ের মতো ভালোবাসেন। বিষয়টি উল্লেখ করে জাহিদা ইসলাম বলেন, ‘‘আমি তো ছেলের বউ। কিন্তু বাবা কখনো আমাকে ছেলের বউ হিসেবে দেখেননি। আমার বাবা নেই। বাবা মারা যাওয়ার পরই আমার বিয়ে হয়। তারপর থেকে এই পরিবারই আমার সবকিছু। আসলে আমার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা সবকিছু তারাই করিয়েছেন। ভারত থেকে ফেরার পথে বিমানে পাইলট, এয়ার হোস্টেসরা বিশ্বাসই করতে চাননি আমি তার ছেলের বউ। সবাই ভেবেছিলেন আমি তার মেয়ে।’’

আব্দুল কাদেরের নাতনি সিমরিন লুবাবা শিশুশিল্পী হিসেবে মিডিয়াতে কাজ করছেন। তার অভিনয়ের হাতেখড়ি দাদু আব্দুল কাদেরের কাছে। দাদু অসুস্থ হওয়ায় তার কান্না যেন থামছেই না। এমনকি শুটিংয়ের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছে সিমরিন। দাদুকে ছাড়া শুটিংয়ে যাবে না সে। বিষয়টি স্মরণ করে জাহিদা ইসলাম বলেন, ‘আমাদের মেয়ে সিমরিন ও বড় ছেলেটা বাবার কলিজার টুকরা। সিমরিন তো সবসময় কান্নাকাটি করে। যখনই শুনেছে, তার দাদুর ক্যানসার তারপর থেকেই সে ইন্টারনেট ঘেঁটে নানা তথ্য সংগ্রহ করছে। কী খেলে তার দাদু শরীরে শক্তি পাবেন, কী খেলে দাদুর হিমোগ্লোবিন বাড়বে। এর মধ্যে একটি কাজের প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু দাদুকে ছাড়া শুটিং করবেন না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে সে।’

আব্দুল কাদেরের বর্তমান শারীরিক অবস্থা জানিয়ে রোববার (২০ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে জাহিদা ইসলাম বলেন, ‘এখন শারীরিক অবস্থা একটু ভালো। আমরা আগামীকাল দুপুরের পর বিস্তারিত জানতে পারবো। চিকিৎসকরা কি সিদ্ধান্ত নেন জানার অপেক্ষায় আছি। বাবা শারীরিকভাবে ভীষণ দুর্বল। যে কারণে অনেক সিদ্ধান্ত নিতেও সমস্যা হচ্ছে।’

এদিকে সম্প্রতি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জনপ্রিয় অভিনেতা আবদুল কাদেরের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। গতকাল ভারতের চেন্নাই থেকে তাকে দেশে নিয়ে আসা হয়। বিকেল ভর্তি করা হয় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে। আজ সোমবার বিকেলে তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

 

মঞ্চ থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে নাম লেখান আব্দুল কাদের। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে ‘বদি’ চরিত্রে অভিনয় করে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে যান তিনি। অভিনয় ক্যারিয়ারে কয়েকশ’ টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন। বেশিরভাগ হাস্যরসাত্মক চরিত্রে দেখা গেছে তাকে।

বৈশাখী নিউজফাজা

 

 

 

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর