চীনের পরিবর্তে ভারত ও জাপানমুখী হচ্ছে শ্রীলংকা

আপডেট: March 4, 2021 |

ভারত মহাসাগরের পক পক প্রণালী অঞ্চলে এত দিন আধিপত্য বিস্তার করে আসছে চীন, যা আরেক প্রতিবেশী ভারত মোটেও ভালোভাবে নেয়নি। যদিও এর অবসান হতে যাচ্ছে। চীনের পরিবর্তে ভারত ও জাপানের দিকে অংশীদারিত্বের হাত বাড়াচ্ছে শ্রীলঙ্কা। খবর: এএফপি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

এর অংশ হিসেবে দেশটির কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি গভীর সমুদ্রবন্দরের অংশীদারিত্ব ভারত ও জাপানকে দেয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে শ্রীলঙ্কা। দেশটির সরকারি এক কর্মকর্তা জানান, চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে দ্বীপরাষ্ট্রটি ঐতিহ্যগতভাবে মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে।

শ্রীলঙ্কার সরকার গত মাসে হঠাৎ করে দিল্লি ও টোকিওর সঙ্গে আংশিকভাবে নির্মিত ইস্ট কনটেইনার টার্মিনাল যৌথভাবে উন্নয়নের জন্য করা একটি চুক্তি থেকে সরে যায়। রাজধানী কলম্বোর বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে গঠিত সমুদ্রবন্দরে চীন পরিচালিত ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি কনটেইনার জেটির পাশে বন্দরটি অবস্থিত।

চীনের মতো একই শর্তে ভারত ও জাপানকে ওই বন্দরের ৮৫ শতাংশের অংশীদার হওয়ার অনুমতি দেয়ার কথা জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার, যদিও মঙ্গলবার আগের অবস্থান থেকে সরে এসে কলম্বোর ওয়েস্ট কনটেইনার টার্মিনাল (ডব্লিউসিটি) ভারত ও জাপানকে ইজারা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বন্দরটি এখনও নির্মাণ করা হয়নি। ‘কলম্বো ইন্টারন্যাশনাল কনেটেইনার টার্মিনাল (সিআইসিটি)’ নামে চীনের পরিচালিত জেটির অপর পাশেই এ বন্দরের অবস্থান।

শ্রীলঙ্কা সরকারের মুখপাত্র কেহেলিয়া রামবুকওয়েলা মঙ্গলবার রাজধানী কলম্বোয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডব্লিউসিটি উন্নয়নের জন্য আলোচনা কেবল ভারত ও জাপানের সঙ্গে হবে।’ কলম্বো বন্দরের নিয়ন্ত্রণ একইসঙ্গে কৌশলগত বাণিজ্য ও ভূরাজনীতির জন্য ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে।

তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদ গত সোমবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ভারত ও জাপানকে ওয়েস্ট কনটেইনার টার্মিনালের (ডব্লিউসিটি) ৮৫ শতাংশের অংশীদার হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। কলম্বো ইন্টারন্যাশনাল কনেটেইনার টার্মিনাল (সিআইসিটি) নির্মাণের সময় চীনকেও একই রকম শর্ত ও অংশীদারত্ব দেয়া হয়েছিল।

তবে টোকিও ও নয়াদিল্লি কীভাবে তাদের অংশীদারত্ব ভাগাভাগি করবে, সেটা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। দেশটির সরকার জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার সর্বশেষ এই প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কলম্বোর ভারতীয় হাইকমিশন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এখনও কোনো মন্তব্য বা সাড়া পাওয়া যায়নি এবং শ্রীলঙ্কা সরকারের এক মুখপাত্র জানান, জাপানও তাদের নতুন এই প্রস্তাব নিয়ে এখনও কোনো সাড়া দেয়নি।

ভারত মহাসাগরে বিশ্ব বাণিজ্যের প্রধান দুই কেন্দ্র দুবাই ও সিঙ্গাপুরের মাঝামাঝি কলম্বোর অবস্থান। এর অর্থ হলো কলম্বো বন্দরের নিয়ন্ত্রণ একইসঙ্গে কৌশলগত বাণিজ্য ও ভূরাজনীতির জন্য ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে।

চীন পরিচালিত কলম্বো ইন্টারন্যাশনাল কনটেইনার টার্মিনালে চীনের দুটি সাবমেরিন মোতায়েন রয়েছে। ২০১৩ সালে এটি কার্যক্রম শুরু করার পর ২০১৪ সালে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল ভারতে। এর পর থেকে শ্রীলঙ্কা সেখানে আরও কোনো সাবমেরিন মোতায়েন করার অনুমোদন দিতে অস্বীকার করে আসছে।

ঋণ শোধ করতে না পেরে চীনকে ৯৯ বছরের জন্য হাম্বানটোটা বন্দর ইজারা দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। চীনের কাছ থেকে শ্রীলঙ্কা অনেক ঋণ নিয়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের ঘটনা। চীনের বিশাল এই ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত হাম্বানটোটা বন্দর চায়না মার্সেন্ট পোর্ট হোল্ডিংসকে ইজারা দেয় শ্রীলঙ্কা, যা বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম প্রাচ্য-পাশ্চাত্য শিপিং রুটকে আরও প্রসারিত করেছে।

চুক্তি অনুযায়ী ৯৯ বছরের জন্য হাম্বানটোটা বন্দরের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে চীনের হাতে। তারপর থেকে এ শঙ্কা আরও বেড়েছে যে, চীন বহির্বিশ্বে তাদের প্রভাব বাড়ানোর জন্য ঋণের ফাঁদে ফেলছে অনেক দেশকে।

ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রও তখন থেকে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে আসছে যে, শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরের ওপর চীনের শত বছরের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ভারত মহাসাগরে সামরিকভাবে আরও বেশি সুবিধা পাবে বেইজিং।

বৈশাখী নিউজজেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর