ইউক্রেন ইস্যুতে পূর্ব ইউরোপে ৩ হাজার সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

আপডেট: February 3, 2022 |
print news

ইউক্রেন-রাশিয়া উত্তেজনার মধ্যে ন্যাটোর হাত শক্তিশালী করতে পূর্ব ইউরোপে আরও তিন হাজার সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এটিকে ‘ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ’ মন্তব্য করে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। খবর এএফপি’র।

ইউক্রেন সীমান্তে মোতায়েন লাখ খানেক সেনা প্রত্যাহারে রাজি হয়নি রাশিয়া। পুতিন বাহিনী যেকোনো সময় সাবেক সোভিয়েত দেশটি আক্রমণ করতে পারে বলে বারবার আশঙ্কাপ্রকাশ করছে পশ্চিমারা। এ অবস্থায় পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর শক্তি বাড়াতে আরও তিন হাজার সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিলো ওয়াশিংটন।

এ তিন হাজারের মধ্যে জার্মানিতে থাকা এক হাজার মার্কিন সেনা পাঠানো হচ্ছে রোমানিয়ায় এবং আরও দু’হাজার সেনা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র থেকে জার্মানি ও পোল্যান্ডে যাবে।

বাড়তি সেনা মোতায়েনের ঘোষণার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যতক্ষণ আগ্রাসী আচরণ করবেন, আমরা পূর্ব ইউরোপে আমাদের ন্যাটো মিত্রদের আশ্বস্ত করতে থাকবো যে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাশে রয়েছে।

বাইডেন প্রশাসনের এমন ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মস্কো। রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেক্সান্দার গ্রুশকো সতর্ক করে বলেছেন, এটি দুই পক্ষের সমঝোতার পথ আরও কঠিন করে তুলবে। পূর্ব ইউরোপে বাড়তি মার্কিন সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্তকে ‘ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে সামরিক উত্তেজনা বাড়বে ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সুযোগ কমে আসবে।

রাশিয়াকে ইউক্রেন আক্রমণ থেকে বিরত রাখতে হুমকি-ধামকির পাশাপাশি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে পশ্চিমা দেশগুলো। যদিও মস্কো বারবার বলে আসছে, কেউ বাধ্য না করলে তাদের ইউক্রেন আক্রমণের কোনো ইচ্ছা নেই।

বুধবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ ঘোষণা দিয়েছেন, এ বিষয়ে আলোচনার জন্য তিনি শিগগির মস্কো সফরে যাবেন। একই আগ্রহের কথা জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁও। তবে তার বিষয়টি নির্ভর করছে অন্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আসন্ন ফোনালাপের ওপর।

9k=

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি ইউরোপে মার্কিন সেনা পাঠানোর কথা বুধবার সাংবাদিকদের কাছে জানান। তিনি বলেন, রুশ আগ্রাসন মোকাবিলা ও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অবশ্য এটি কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয় বলেও জানান তিনি।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্দেশনা অনুযায়ী মার্কিন অঙ্গরাজ্য নর্থ ক্যারোলিনার ফোর্ট ব্র্যাগ থেকে প্রায় ২ হাজার সেনাকে পোল্যান্ড ও জার্মানিতে পাঠানো হবে। অন্যদিকে, ইতোমধ্যেই জার্মানিতে অবস্থান করা এক হাজার সৈন্যকে রোমানিয়ায় পাঠানো হবে।

ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় এক লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। এর মধ্যে ট্যাংক ও কামানসহ যুদ্ধবিমানের বহরও ইউক্রেন সীমান্তে পাঠিয়েছে দেশটি। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।

যদিও ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো। এছাড়া ইউরোপে মার্কিন সেনা মোতায়েনের এই সিদ্ধান্তকে ‘ধ্বংসাত্মক’ বলেও আখায়িত করেছে রাশিয়া।

অবশ্য ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা বরাবরই বলে আসছে যে, পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে হামলা হলে তারা রাশিয়ার অর্থনীতিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে। এছাড়া ইউক্রেনে হামলা হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেজ্ঞা আরেপের হুঁশিয়ারি বরাবরই দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

এছাড়া সম্ভাব্য যেকোনো সংকট মোকাবিলায় সাড়ে ৮ হাজার মার্কিন সেনাকে ইউরোপে মোতায়েন করার জন্য উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে বাইডেন প্রশাসন। স্বল্প সময়ের নোটিশে এসব সেনাকে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে আগেই জানিয়েছিল মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর।

উল্লেখ্য, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ও রাশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেন কয়েক বছর আগে ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করার পর থেকেই উত্তেজনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় আরও বেড়েছে এই উত্তেজনা।

বৈশাখী নিউজ/ বিসি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর