পারমাণবিক প্রস্তুতি: কী করবেন পুতিন?

আপডেট: February 28, 2022 |
print news

ইউক্রেনে একদিকে যুদ্ধ, আরেকদিকে আলোচনার প্রস্তুতি। কিন্তু এর মধ্যেই নতুন দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের একটি আদেশ- পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুত রাখার।

দুশ্চিন্তা দেখা দিত না যদি পুতিনের ওপর আস্থা রাখা যেত। করব না, করব না করেও অতীতে এমন কিছু কাজ পুতিন করেছেন, যার কারণে পারমাণবিক অস্ত্রের বোতাম তিনি চেপে দিবেন না, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে।

ক্রিমিয়ায় অভিযান, দোনাবাসের যুদ্ধ, ইউক্রেনে পূর্ণাঙ্গ অভিযানের আগেও অনেকে আশায় বুক বেঁধেছিলেন, পুতিন হয়ত কোনোটাই করবেন না। কিন্তু কোনো অভিযান থেকেই শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসেননি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। ইউক্রেন যুদ্ধে এখন প্রশ্নের উদয় হয়েছে, পুতিন কি তবে পারমাণবিক অস্ত্রের বোতাম চাপবেন?

ইউক্রেন প্রসঙ্গে ন্যাটো নেতাদের ‘আগ্রাসী বিবৃতির’ কারণ দেখিয়ে রুশ নেতা পারমাণবিক প্রস্তুতি রাখার নির্দেশ দেয়ার পরই নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়।

গত বৃহস্পতিবার পুতিন টেলিভিশনে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ (বাস্তবে পুর্ণাঙ্গ অভিযান) শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন তার দিকে একটু খেয়াল করলেই তার মনোভাব বোঝা যাবে। মূলত তার ওই ভাষণেই ছিল একধরনের ‘ঠাণ্ডা হুমকি’।

“যারাই বাইরে থেকে হস্তক্ষেপ করার কথা ভাববে অথবা করবে, তাদেরকে অতীতের চেয়েও বড় ধরনের পরিণতি ভোগ করতে হবে,” এমনটাই বলেছিলেন পুতিন।

শান্তিতে নোবেলজয়ী সাংবাদিক নোভায়াগেজেতা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক দিমিত্রি মুরাতভের মতে, “পুতিনের ওই মন্তব্য সরাসরি পারমাণবিক যুদ্ধেরই হুমকি।”

মুরাতভ বলেন, “টিভিতে পুতিনকে ক্রেমলিনের নয়, মনে হচ্ছিল যেন পৃথিবীর প্রভু। গাড়ি প্রদর্শনীর মালিক যেভাবে হাতের আঙুলে চাবির রিং ঘোরাতে থাকেন, পুতিনও যেন পারমাণবিক অস্ত্রের বোতাম সেভাবে নাড়াচাড়া করছেন। তিনি আগেও বলেছেন, রাশিয়া না থাকলে পৃথিবীর প্রয়োজনই বা কী? কেউ তার এসব কথায় পাত্তা দিচ্ছে না। কিন্তু রাশিয়াকে যদি তার চাওয়া মতো দাম দেয়া না হয়, তাহলে সবকিছু ধ্বংস করে দেয়া হবে, এটা আসলে এক ধরনের হুমকি।”

২০০৮ সালে এক প্রামাণ্যচিত্রে পুতিন বলেছিলেন, “কেউ রাশিয়াকে ধ্বংসের চিন্তা করলে, আমাদেরও পাল্টা জবাব দেওয়ার অধিকার আছে। হ্যাঁ, সেটা হয়ত মানবতা এবং পৃথিবীর জন্য ধ্বংসাত্মক হবে, কিন্তু আমি রাশিয়ার একজন নাগরিক এবং রাষ্ট্রপ্রধানও। রাশিয়াকে ছাড়া পৃথিবীর দরকারটা কী।”

কয়েকদিন হলো পুতিন ইউক্রেনে পুরোদমে যুদ্ধে নেমেছেন। কিন্তু ইউক্রেন বাহিনীর শক্ত প্রতিরোধের মুখেও পড়ছে রাশিয়ান বাহিনী। অন্যদিকে ক্রেমলিনকে বিস্মিত করে পশ্চিমা দেশগুলো একাট্টা হয়ে মস্কোর ওপর একের পর অর্থনৈতিক ও আর্থিক এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে। ফলে তার নেওয়া ব্যবস্থাগুলো আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান অনেক বিশ্লেষক।

মস্কোর প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক পাভেল ফেলগেনহরে মতে, পুতিন কঠিন অবস্থায় রয়েছেন।

তিনি বলেন, “তার হাতে খুব বেশি সুযোগ নেই। পশ্চিমারা যদি রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ আটকে দেয় এবং রাশিয়ার আর্থিক ব্যবস্থাপনা সত্যিকার অর্থেই ভেঙে পড়ে, তাহলে তার পুরো ব্যবস্থাই অকার্যকর হয়ে পড়বে।

putin 2 2202280640

ইউক্রেনে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে আরো মরিয়া পদক্ষেপ নিতে দেখা যেতে পারে পুতিনকে। ছবিটি ২০০৫ সালে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মহড়ায় রুশ নেতা। ছবি: এএফপি

“তার জন্য একটি সুযোগ হচ্ছে, ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া। এটি করলে ইউরোপের সুর নরম হতে পারে বলা যায়। আরেকটি হচ্ছে ব্রিটেন এবং ডেনমার্কের মাঝামাঝি সাগরে একটি পারমাণবিক বোমা ফাটিয়ে অপেক্ষায় থাকা যে, কি ঘটে।”

প্রশ্ন হচ্ছে পুতিন যদি পারমাণবিক অস্ত্রই বেছে নেন, তাহলে তার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের মধ্যে কে তাকে নিরস্ত করবে, কে তাকে থামাবে?

নোবেলজয়ী দিমিত্রি মুরাতভ বলেন, “রাশিয়ার অভিজাত রাজনীতিকরা কখনই জনগণের সাথে থাকে না। তারা সব সময়ই শাসকদের পক্ষই নেয়।”

আর পুতিনের রাশিয়ায় শাসকই সবচেয়ে শক্তিধর। এখানে অতটা যাচাইবাছাইয়ের সুযোগ নেই, ক্রেমলিনই সব।

“কেউ পুতিনের পক্ষে দাঁড়াতে প্রস্তুত নয়। আমরা বিজ্জনক অবস্থায় আছি,” বলেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক পাভেল ফেলগেনহর।

ইউক্রেন যুদ্ধ আসলে পুতিনের যুদ্ধ। ক্রেমলিন নেতার সামরিক লক্ষ্য অর্জিত হলে সার্বভৌম দেশ হিসেবে ইউক্রেনের অস্তিত্ব থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

আর যদি বোঝা যায় পুতিন ব্যর্থ হতে যাচ্ছেন এবং যুদ্ধে তাকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি শিকার হতে হচ্ছে, তাহলে আরো মরিয়া পদক্ষেপ নিতেও পারে ক্রেমলিন।

পুতিন ‘কখনও তেমনটা করবেন না’- এমন আশা তখন অন্তত আর করা যাবে না।

তথ্য ও ছবি সহায়তা: বিবিসি

বৈশাখী নিউজ/ বিসি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর