অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে বড় হাতিয়ার শ্রমিকরা

আপডেট: May 1, 2025 |
inbound8420605418543595307
print news

ডিআইইউ প্রতিবেদকঃ যুগে যুগে দেশ জাতির উন্নয়নে শ্রমিকদের অবদান অনস্বীকার্য। আজকে এই সভ্য সমাজের উঁচু অট্টালিকা থেকে যা কিছু দৃশ্যমান সবকিছুতেই মেহনতি মানুষের পরিশ্রমের ফলস।

বিশ্বব্যাপী শ্রমিক আন্দোলনের অর্জনকে স্মরণ করার জন্য প্রতি বছর পহেলা মে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত হয়।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে বড় হাতিয়ার শ্রমিকরা। অথচ তারাই সমাজে অবহেলিত, উপেক্ষিত।

শ্রমিক, দিনমজুরদের জন্য নানান কথা ভেবে থাকে কিন্তু বলা হয়ে উঠে না। আজকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা শ্রমিকদের নিয়ে কথা বলছে।

শ্রমিকরা যে প্রতিনিয়ত শোষণ বঞ্চনা ও নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন শিক্ষার্থী।

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস, যা “মে দিবস” নামেও পরিচিত, বিশ্বজুড়ে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে উদযাপিত হয়।

এই দিনে আমরা স্মরণ করি সেই অগণিত শ্রমিক ও কৃষকদের যারা তাদের কঠোর পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে সমাজ ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন।

কৃষক ও শ্রমিকরা আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ফসলের ক্ষেত ভরে ওঠে সোনালী শস্যে, এবং শিল্পকারখানাগুলো সচল থাকে উৎপাদনের গতি ধরে রাখতে।

কিন্তু তাদের জীবনসংগ্রাম কখনোই থেমে থাকে না। কাজের অনিশ্চয়তা, অপ্রতুল মজুরি, স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং অনেক সময়ে মৌলিক অধিকার বঞ্চনার মধ্যেও তারা প্রতিদিন নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলেন।

শ্রমজীবী মানুষের প্রতিটি ঘামবিন্দু জাতির সমৃদ্ধি এবং অগ্রগতির মূল ভিত্তি। তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই টেকসই সমাজ ও অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব।

এই দিবসে আমাদের উচিত তাদের সংগ্রামের প্রতি সম্মান জানানো এবং তাদের অধিকারের জন্য আওয়াজ তোলা।

আমরা যেন ভুলে না যাই, কৃষক-শ্রমিকদের কল্যাণই একটি টেকসই ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ার মূল চাবিকাঠি।

এই বছরের আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক—কৃষক ও শ্রমিকদের প্রতি যথাযথ মর্যাদা, ন্যায়সঙ্গত মজুরি ও সুযোগ নিশ্চিত করা এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে সক্রিয় অংশগ্রহণ।

এটাই হতে পারে তাদের প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধার অর্ঘ্য।

এনায়েত হোসেন
আইন বিভাগ,
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

প্রতিবারের মতো এবারও এলো মে দিবস যা শ্রমিকের আত্মত্যাগের গৌরবগাথা অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের এক অনন্ত প্রেরণা। শ্রমিকের জীবন কেবল কর্ম নয় বরং একটা সংগ্রাম।

তাদের রক্তে,ঘামে গড়ে উঠেছে শহরের ইটপাথর, শিল্পের কারখানা, কৃষির স্সোনালি প্রান্তর। অথচ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার একদিনে আসেনি, এসেছে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের বিনিময়ে।

মে দিবস সেই রক্তাক্ত ইতিহাসের প্রতীক যা শ্রমিকের অধিকার আদায়ের অমর স্মারক।

১৮৮৬ সালের ১ মে, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে হাজার হাজার শ্রমিক ৮ ঘণ্টা শ্রম দিবসের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয়। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলাকালে পুলিশের গুলিতে অনেক শ্রমিক নিহত হন।

এই রক্তাক্ত ঘটনার ফলেই শ্রমিকদের আট ঘণ্টা কর্মদিবসের অধিকার বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত হতে শুরু করে।

বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবস্থা এখনও করুণ।২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৮৭% শ্রমিক অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন, যেখানে শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তা কার্যত নেই বললেই চলে।

পোশাক খাত, যেখানে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, সেখানে কর্মঘণ্টা, মজুরি ও শ্রমিক সুরক্ষার প্রশ্ন এখনও রয়েছে ।

বাংলাদেশে আজও শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি, কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তার জন্য লড়াই করছে।

গার্মেন্টস শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি, কিন্তু তাদের অধিকার এখনো উপেক্ষিত।অনেক শ্রমিক এখনও ৭,৫০০ টাকা মজুরিতে জীবনযুদ্ধ চালায়, যা দিয়ে একটি পরিবারের অর্ধেক চাহিদাও পূরণ হয় না। শ্রমিকরা যেন সব কিছুতেই বঞ্চিত।

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে শ্রমিকের প্রকৃত অধিকার নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।

২০২৫ সালের শুরুতে বাংলাদেশ সরকার ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনের ঘোষণা দিলেও বাস্তবে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে এখনো বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

মে দিবস কেবল একটি ছুটির দিন নয়, এটি শ্রমিকের অধিকার আদায়ের ইতিহাসের প্রতিধ্বনি।

এটি মনে করিয়ে দেয়, আজ যে ন্যূনতম মজুরি, কর্মঘণ্টার সীমা, শ্রমিক নিরাপত্তার আইন আমরা দেখি ,তা সংগ্রাম ছাড়া আসেনি, এসেছে হাজারো শ্রমিকের রক্তের বিনিময়ে।

শিকাগোর শ্রমিকদের আত্মদান বৃথা যায়নি, কিন্তু আজও বিশ্বজুড়ে শ্রমিকরা শোষণের শিকার। মে দিবসে আমাদের শপথ নিতে হবে – শ্রমিকের অধিকার মানবাধিকার, এ লড়াইয়ে আমরা সম্মিলিত।
শ্রমিকের ঘাম জাতির সম্মান ও অগ্রগতির ভিত্তি।

আরমিন
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর