সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য বিকেলে
ভারতের প্রয়াত সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য আজ। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন গীতশ্রী।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রবীন্দ্র সদনে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে গুণী এ সংগীতশিল্পীকে।
বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সেখানে তার মরদেহ রাখা হবে। এরপর কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য হবে এ গায়িকার। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের খবর পেয়ে উত্তরবঙ্গ সফর মাঝপথে ছেড়েই কলকাতায় ফিরে আসেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কোচবিহারে ছিলেন তিনি।
সেখানেই গীতশ্রীর মৃত্যুর খবর পৌঁছায় তার কাছে। সেখান থেকে কলকাতায় প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নিজের সফরসূচি কাটছাঁট করেন মমতা। জানিয়ে দেন, বুধবার সরকারি তত্ত্বাবধানেই হবে সন্ধ্যার শেষকৃত্য।
কলকাতা পুলিশ এরইমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু করেছে। মমতা বলেন, ‘কোচবিহারে আমার সভা রয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যাদির মৃত্যুর খবর পেয়ে মন খারাপ হয়ে গেল। তাই বুধবার দ্রুত কাজ সেরে আমি কলকাতায় ফিরে আসছি।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে সন্ধ্যার শেষকৃত্য করবে। মঙ্গলবার রাতে তার মরদেহ রাখা হয় কলকাতা পুরসভার ‘পিস ওয়ার্ল্ড’-এ।
রাতে মুখ্যমন্ত্রী শোকবার্তায় লেখেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে ২০১১ সালে ‘বঙ্গবিভূষণ’, ২০১২ সালে ‘সঙ্গীত মহাসম্মান’ও ২০১৫ সালে ‘উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি বিশেষ সঙ্গীতসম্মান’ প্রদান করেছে। এ ছাড়া তিনি ভারত নির্মাণ অ্যাওয়ার্ড, ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড, বিএফজেএ অ্যাওয়ার্ডসহ বহু সম্মানে ভূষিত হন। তিনি আমৃত্যু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত একাডেমির সভাপতিও ছিলেন।
মমতা জানিয়েছেন, ‘স্বর্ণকণ্ঠী গীতশ্রী সন্ধ্যাদির সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের হৃদ্য সম্পর্ক ছিল। তার মৃত্যুতে আমি আমার অগ্রজাকে হারালাম। শোকবার্তার পাশাপাশি মমতা টুইট করেও সন্ধ্যার মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জানুয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রবাদপ্রতিম এই সংগীতশিল্পী। পর দিন তাকে গ্রিন করিডোর করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকরা জানান, তার ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছিল। তার দু’দিন আগেই পদ্মশ্রী সম্মান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি।
কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে মুগ্ধ কয়েক প্রজন্ম। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ভাষার সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন তিনি। সিনেমার গানের পাশাপাশি বাংলা আধুনিক গান ও ধ্রুপদী সংগীতে পারদর্শী ছিলেন তিনি।
তার গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে- ‘কে তুমি আমারে দেখো’, ‘তুমি না হয় রাখিতে কাছে’, ‘ঝিকিমিকি তাঁরা’, ‘ওগো মোর গীতিময়’ কিংবা ‘তীর বেঁধা পাখি’ ‘হয়ত কিছুই নাহি পাব’,’আয় বৃষ্টি ঝেপে ধান দেব মেপে’,’মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা’,’শঙ্খ বাজিয়ে মাকে ঘরে এনেছি’,’চম্পা চামেলি গোলাপেরই- গানের মতো অসংখ্য গান গেয়ে আজও বাঙালির মনে-অস্তিত্বে মিশে আছেন তিনি।