হুমায়ুন আহমেদের স্বপ্নের ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মান আমার একার পক্ষে সম্ভব না: শাওন

মাছুদ পারভেজ, গাজীপুর প্রতিনিধি: কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন বলেছেন, ক্যান্সার হাসপাতাল নিয়ে হুমায়ুন আহমেদের যে স্বপ্ন ছিল সেটা পূরণ করার জন্য যে শক্তি যে সামর্থ্য দরকার হয় সেটা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়।

আজ হুমায়ুন আহমেদের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গাজীপুরের নূহাশ পল্লীতে স্থানীয় দুইটি মাদ্রাসার এতিম ছাত্রদের নিয়ে কোরআখানি, মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন শেষে তিনি এ কথা বলেন।

আজ মঙ্গলবার সকালে হুমায়ুন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও তার দুই ছেলে নিশাত হুমায়ুন ও নিনিত হুমায়ুনসহ হুমায়ুনের ভক্ত, হিমু পরিবহনের সদস্যদের সাথে নিয়ে হুমায়ুন আহমেদের কবরে নূহাশ পল্লীর লিচু তলায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এ সময় তিনি আরও বলেন, এতে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তা আমার নেই। সমষ্টিগতভাবে আমরা সবাই যদি চেষ্টা করি হয়তো বা হবে। সে ধৈর্যটা আমার আছে, সে ধৈর্য ধরে আমি ১০ বছর অতিক্রম করেছি। সে স্বপ্নটা আমি দেখেছি, দেখছি। এটা কম সময় না। যাদেরকে সঙ্গে নিয়ে সে স্বপ্নটা পূরণ করা দরকার, আমি চাইলে একটা ছোটখাট হাসপাতাল করতে পারি। সেটা ৮/১০ টা হাসপাতাল বাংলাদেশে যেরকম আছে সেটা সেরকম হবে না, সেই জোড় আমার নেই। আমার কাছে মনে হয়েছে অনেক বড় স্বপ্নের আগেও অনেকগুলো ছোট ছোট স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্নগুলো যে একটু একটু করে পূরণ হচ্ছে সেটার ভাল একটা খবরটা দেই।

শাওন বলেন, হুমায়ুন আহমেদের নিজ গ্রামে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠটি যেটার কথা আমি প্রতিবারই বলেছি সেটি নিয়েও তার একটি স্বপ্ন ছিল। এ স্কুলটি ২০২০ সালে নিম্ন মাধ্যমিক (অষ্টম শ্রেণী) পর্যন্ত এমপিওভুক্ত ছিল। কিন্তু সু-খবর হলো ওই স্কুলটি হুমায়ুন আহমেদের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকীর মাসেই ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হয়েছে। সে স্কুলের শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার পাশাপশি বিভিন্ন বিষয়ে জেলা পর্যায়ে প্রতিযোগীতায় প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানের মধ্যে মেধার স্বাক্ষর রাখছে। এটা আমাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া। এরকম ছোট ছোট স্টেপ দিয়ে আমরা সামনের দিকে আগাব। কিন্তু আমি এখানো শক্তি অর্জন করতে পারিনি , যে আমি একটা ডাক দিব বা আমি কাউকে বলব। আমি বিভিন্ন জনকে বলবার চেষ্টা করছি বা সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশের সরকার তথা নীতিনির্ধারকদের প্রতি হুশায়ুন আহমেদ যে ধরনের ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপনের স্বপ্ন দেখছিলেন তা নির্মানের উদ্যোগ নেবার জন্য অনুরোধ করছি। আমি এটুকু নিশ্চত করে বলেতে পারি হুমায়ুন আহমেদের পরিবার এবং তার ভক্ত পাঠক তাদের সবাইকে যখন যেভাবে ডাক দিবেন তারা প্রত্যেকে সেভাবে ছুটে আসবে। আমার পক্ষ থেকে যদি এমন হয় হুমায়ুন আহমেদের সম্পদ পরিবারের সবার সম্পদ। তার পরিবারের কেউ পিছ পা হবে না হুমায়ুন আহমেদের সে স্বপ্ন পূরনের জন্য। এজন্য সরকার যদি উদ্যোগ নেয় পরিবারের পক্ষ থেকে যেভাবে যা করা দরকার হয় তা আমরা করব।

হুমায়ুন আহমেদের স্মৃতি যাদুঘর স্থাপন নিয়ে শাওন সাংবাদিকেদর বলেন, এটা নির্মাণ আমাদের পক্ষে সম্ভব। এটা হবে। এটা নূহাশ পল্লীতেই হবে। হুমায়ুন আহমেদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র সেগুলো খুব সুন্দরভাবে সংগৃহীত আছে। তার হাতে আঁকা ছবিগুলো অনেকদিন ধরে নিউইয়র্কের এক ব্যাক্তির কাছে আটকে ছিল। অতি সম্প্রতি সেই ছবিগুলো আমাদের হাতে এসে পৌছেছে। আমরা সব ছবিগুলো হাতে পেয়েছি। এর মধ্যে হুমায়ুন আহমেদের সন্তানদের কাছে, আমার কাছে যা কিছু ছবি আছে এগুলো হুমায়ুন আহমেদের স্মৃতি যাদুঘরে থাকবে। হুমায়ুন আহমেদের হাতের লেখা স্ক্রিপটগুলো যেগুলো বিভিন্ন প্রকাশকদের কাছে ছিল সেগুলো তারা যাদুঘরে দান করবে বলে আমাদের দান করবেন। আমরা আশা শীঘ্রই হুমায়ুন আহমেদের যাদুঘর নির্মাণরে কাজ শুরু করতে পারব।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি ও অন্য প্রকাশের স্বত্তাধিকারী মাজহারুর ইসলাম বলেন, হুমায়ুন আহমেদের পরিবার থেকে ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হলে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি তাদের পাশে থাকবে।

তিনি দাবী করেন নূহাশ পল্লীতে হুমায়ুন আহমেদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকারি, বে-সরাকরি আথবা পারিরবারিক উদ্যোগে একটি স্মৃতি যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা জরুরী প্রয়োজন। এ উদ্যেগটির সাথেওবাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি পাশে থাকবে। ওই সমিতির কেন্দ্রীয় এবং রাজধানী কমিটির কমপক্ষে ২০ জন প্রকাশক তিনটি প্রকাশক সমিতির পক্ষ থেকে হুমায়ুন আহমোদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবদেন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন মিলেনিয়াম পাবলিকেশন্সর স্বত্তাধিকারী এস এম লুৎফর রহমান, ধ্রæব পদ প্রকাশণীর স্বত্তাধিকারী আবুল বাশার ফিরোজ শেখ, মাতৃভাষা প্রকাশের স্বত্তাধিকারী নেছার উদ্দিন আইয়ুব, অনিক পাবলিকেশন্সর স্বত্তাধিকারী মাহতাব উদ্দিন প্রমুখ।