শাহজালাল ইক্যুইটির প্লেসমেন্ট শেয়ার দুর্নীতির সমর্থন দিচ্ছে বিএসইসি!


স্বপ্ন রোজ, নিজস্ব প্রতিবেদক:পুঁজিবাজারে কিউআইও’র মাধ্যমে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের (কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর) কাছে শেয়ার বিক্রি করে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন পায় এগ্রো অর্গানিকা।পাবলিক ইস্যু রুলস ভেঙ্গে শেয়ারবাজারে আসছে কোম্পানিটি।কোম্পানিটি আইন লঙ্গন করলেও কোন ধরনের জবাবদিহি ছাড়া পুঁজিবাজারে আসছে।
প্রসপেক্টাসের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, এগ্রো অর্গানিকায় প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডার তালিকায় রয়েছে -১/-মোঃ মতিউর রহমান শেয়ার সংখ্যা -১৫০,০০০, ২/-সিনার্জি ট্রেডিং লিঃ শেয়ার সংখ্যা -১,৫০০,০০০, ৩/-মোঃ আফজলুর রহমান শেয়ার সংখ্যা -৬৫০০০, উক্ত ব্যক্তিগণ ও প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে ১৭ লক্ষ ১৫ হাজার প্লেসমেন্ট শেয়ার।উপরোক্ত শেয়ারের ফেস ভ্যালুর মূল্য প্রায় -১ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট এর পরিচালক আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের পিতা-মোঃ মতিউর রহমান ও সিনার্জি ট্রেডিং লিঃ কোম্পানিটি মালিক আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বোন-মিসেস ফারজানা রহমান ইপশিতা এবং মোঃ আফজালুর রহমান হলেন শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট এর জনসংযোগ কর্মকর্তা।
প্রসপেক্টাসে ১৫ লাখ প্লেসমেন্ট শেয়ারধারী সিনার্জি ট্রেডিং কোম্পানির ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের ১৫৯/সি। তবে উক্ত ভবনের কোন ফ্লোরেই সিনার্জি ট্রেডিং নামের কোন কোম্পানির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অস্তিত্বহীন এই কোম্পানিটির মালিক শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট এর পরিচালক আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বোন মিসেস ফারজানা রহমান ইপশিতা। অস্তিত্ব না থাকা এই প্রতিষ্ঠানটির নামে রয়েছে-১কোটি ৫০ লক্ষ টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার।শাহজালাল ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের সিইও জনাব মোঃ আলমগীর হোসাইন জানান-আপনার সংবাদে উল্লেখিত মোঃ মতিউর রহমান, সিনার্জি টেডিং লিঃ এবং মোঃ আফজালুর রহমান-এর সাথে শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড-এর শেয়ারহোল্ডার, শেয়ারহোল্ডার পরিচালক, পরিচালক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী হিসেবে কোনো সম্পর্ক নেই বা এনারা কোনোভাবেই Connected Person বা Related Party না।
নানান অবৈধ কর্মকাণ্ডে জর্জরিত শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। গুঞ্জন উঠেছে বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যানের সাথে সখ্যতা করে দুর্নীতির মাধ্যমে প্লেসমেন্ট শেয়ার নেওয়াসহ নানা ধরনের অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট।
অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগে বহুবার শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট কে জরিমানা করা হলেও একের পর এক কোম্পানির আইপিও অনুমোদন নিয়ে সেই সখ্যতার জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটাচ্ছে শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিঃ।
শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট এর বিরুদ্ধে ইস্যু ফি এর পরিবর্তে প্লেসমেন্ট শেয়ার নেওয়ার অভিযোগ উঠলেও কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এমনকি সেই অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি ও গঠন হচ্ছে না। যেন যা ইচ্ছে তাই করার ক্ষমতা পেয়ে গেছে শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিঃ।
সাবেক বিএসইসির চেয়ারম্যানের সময়কালে ইসু ম্যানেজমেন্টে তেমন কোন অবদান না থাকলেও বর্তমান চেয়ারম্যানের আমলে একের পর এক আইপিও অনুমোদন নিয়ে অবৈধ উপায়ে প্লেসমেন্ট শেয়ার হাতিয়ে শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এর পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডারগণ হয়ে গেছেন শত কোটি টাকার মালিক, এ যেন আঙুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার গল্প। শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট এর বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে প্লেসমেন্ট শেয়ার দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও আমলে নিচ্ছে না বিএসইসি।
২০১৫ সালের পাবলিক ইস্যু রুলসের ৩(২)(ডি)-তে বলা হয়, ইস্যু ম্যানেজার ইস্যুয়ারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবে না এবং শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। একই কথা বলা আছে কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর রুলসের ৮ এর ৩-এতেও।
ইস্যু ম্যানেজার বলতে কাকে বোঝায় ব্যক্তি নাকি প্রতিষ্ঠান? এই প্রশ্ন করলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইস্যু ম্যানেজমেন্ট এর সম্পৃক্ত থাকা একজন কর্মকর্তা জানায়-মূলত ইস্যু ম্যানেজার হল কোম্পানি, কোম্পানির সাথে জড়িত ব্যক্তিগণ ও তাদের পরিবারের সদস্যগুলোকে সংযুক্ত ব্যক্তি বোঝায়।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, এই কোম্পানির অনুমোদনের ক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি। আইন ও নিয়ম কানুন মেনেই আবেদনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে কোনো আইন লঙ্ঘন হয়নি।
এ বিষয়ে প্রতিবেদক এগ্রো অর্গানিকার ব্যবস্থাপক পরিচালক মোহাম্মদ আজহার খানের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার সত্বেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এগ্রো অর্গানিকার সিএফও শরীফ আহমেদের সাথে মুঠোফোন একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
২০১৫ সালের পাবলিক ইস্যু রুলসের ৩(২)(ডি) ধারা ভঙ্গের দায়ে বানকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও তার পরিবার এবং আত্মীয় স্বজনকে কোটি কোটি টাকা জরিমানা ও এমডি হামদুল ইসলামকে চাকরীচ্যুত করে ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। যেহেতু একই কথা বলা আছে কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর রুলসের ৮ এর ৩-এতেও। তাহলে কি এই আইন শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের সংযুক্ত ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য নয়? আইন কি তাহলে কেবল দুর্বলের উপরে প্রয়োগ হয়? এসব প্রশ্নের উত্তর অজানাই থেকে যাবে।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের এসএমই প্ল্যাটফর্ম থেকে অর্থ সংগ্রহের অনুমোদন পাওয়া এগ্রো অর্গানিকা পিএলসির কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফারের (কিউআইও) আবেদন গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। কোম্পানির কিউআইও আবেদন গ্রহণ আগামী ২৭ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে। চলবে ৩ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। গত রোববার (১২ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের অবৈধ প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়ে বিস্তারিত আসছে।
চলবে……