খোকসায় মোবাইলের সিমকার্ডের কৃত্রিম সংকট, উপবৃত্তির এ্যাকাউন্ট নিয়ে ভোগান্তি


আসাদুর রহমান, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা উপবৃত্তির এ্যাকাউন্ট খুলতে অভিভাবকদের মধ্যে নতুন সিমকার্ড কেনার হিড়িক পরে গেছে। এই সুযোগে মুঠো ফোন কম্পানি গুলোর সিমের সব অফার বন্ধ করে দিয়েছে।
অপর দিকে সিমকার্ডের কৃত্রিম সংকটের ফলে অভিভাবকরা ২০ টাকার সিমকার্ড ৪শ টাকায় কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এখনেই শেষ না, হয়রানি আছে ধাপে ধাপে।
খোকসা উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১৩ হাজার ৬শ জন শিশুরা লেখাপড়া করছে।
৭০ থেকে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির মোবাইল ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলা রয়েছে শিশুর বাবা’র নামে কেনা সিমকার্ডে।
সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের উপবৃত্তি সংক্রান্ত এক অফিস আদেশে মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে খরিদ করা সিমে একটি মোবাইল ব্যাংকে হিসাব খুলতে বলা হয়।
এই খবর ছড়িয়ে পরলে শিশুদের অভিভাবকরা সিমকার্ড কিনতে ব্যস্ত হয়ে পরেন। শুরু হয় সিমকার্ডের কৃত্রিম সংকট।
ফোন কম্পানির এজেন্টদের ঘরের মহিলাদের লম্বা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ইতোমধ্যে ফোন কম্পানি গুলো সিমের সব অফার তুলে দিয়েছে।
ফলে এক সপ্তাহ আগেও যে সিমকার্ড ২০ টাকার বিক্রি হচ্ছিল তা হঠাৎ করেই ৪শ টাকা দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
আবার বাবা পরিচয়পত্রে কেনা সিমে মায়ের পরিচয় পত্র দিয়ে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলা থাকলে সে ক্ষেত্রে জটিলতার অন্ত নেই।
চলতি সপ্তাহের রবিবার বিদ্যালয়ে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নম্বর সহ আনুষাঙ্গিক কাগজ জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়ে গেছে।
শোমসপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির ছাত্রী ইভা। তার মা হাসিনা বেগম নিজের এলাকায় সিম না পেয়ে বাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে উপজেলা সদরের মুঠোফোন কম্পানির এজেন্টের কাছে সিমকার্ড কিনতে এসেছিলেন।
সেখানেও মেলেনি সিমকার্ড। তাই ফেরিওয়ালা সিম বিক্রেতাকে হর্নে হয়ে খুজতে থাকেন। এক পর্যায়ে সিম বিক্রেতাকে পেলেও সিম পাননি।
উপজেলা সদরের কালীবাড়ি রোর্ডে শিশু শিক্ষার্থী ইভা ও মা হাসিনা বেগমের সাথে দেখা হয়ে যায়। তখন তারা সিমকার্ডের প্রচারম্যান ও বিক্রেতাকে খুজে পেয়েছেন।
শিশু শিক্ষার্থী মা হাসিনা জানান, কয়েক সপ্তাহ আগে স্বামীর আবুল কালামের জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে ২০ টাকায় একটি সিম কিনেছিলেন।
কিন্তু সে সিম কাজে আসছে না। তাই এবার নিজের নামে সিম কেনার জন্য হণেœ হয়ে ঘুরছেন। অবশেষে ওই ফোন কম্পানির হকার তাকে একটি সিম ম্যানেজ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
একটি সিমের জন্য দিতে হবে ৩৫০ টাকা। আর মোবাইল ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট খুলতে নেবেন ৫০ টাকা। সব মিলিয়ে একটি সিমকার্ডের জন্য তাকে (সিমবিক্রেতা) দিতে হবে ৪০০ টাকা।
মেয়ের উপবৃত্তি চালু রাখতে উপজেলা সদরে সিমকার্ড কিনতে এসেছিলেন রুপা খাতুন ওরফে এলাচ। তার বাড়ি পদ্মবিলা গ্রামে।
স্বামীর নামে কেনা সিমকার্ডে তার মেয়ের উপবৃত্তি চালু আছে। কিন্তু স্কুলের মাস্টাররা তাকে আবার নতুন করে নিজের নামে সিমকার্ড কিনতে বলেছেন।
তাই শিশুকে সাথে নিয়ে দোকানে দোকানে সিমকার্ড খুজে বেড়াচ্ছেন।
একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নতুন সিমকার্ডে খোলা ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ও মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করতে গেলে উপবৃত্তি এন্টি সার্ভার নিচ্ছে না।
ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে চেষ্টা করতে হচ্ছে। এ ছাড়া শিশুর মায়ের নামে মোবাইল ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট থাকলে নতুন এ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে না।
শোমসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোরান মোল্লা বলেন, ২৮ মে মধ্যে উপবৃত্তি সংক্রান্ত সার্ভারে এন্টি দিতে হবে।
তবে অভিভাবকদের আগেই কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। এখনো অনেক শিশুর অভিভাবক কাগজ জমা দেন নি।
শিশু শিক্ষার্থীর মা’য়ের নিজের জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে নিজের নামে মোবাইল ব্যাংকের হিসার খোলার বিষয়টি জটিল করেছে মোবাইল কম্পানি।
সিমকার্ড সংকটের ফলে অনেক অভিভাবকরা হয়রানি হচ্ছে। আবার যে মায়ের নামে অন্য সিমে মোবাইল ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট খোলা আছে তার নামে নতুন সিমে এ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে না।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আজহারুল ইসলামের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, মোবাইল সিমকার্ডের সংকটে অনেক অভিভাবককে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খুলতে সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি শুনেছেন।
কিন্তু উপবৃত্তি এন্টি সার্ভার সারাদেশে একযোগে কাজ করে। সময় বৃদ্ধির ব্যাপরটি উপর মহলের।