রোদ উঠতেই ‘করোনাভাইরাস’ মারতে রাস্তায় ফরাসিরা!

আপডেট: May 14, 2020 |

বিশ্বজুড়ে প্রলয় সৃষ্টি করেছে আনুবিক্ষণীক জীব নভেল করোনাভাইরাস। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের থাবায় বিপর্যস্ত দেশগুলোর মাঝে অন্যতম ফ্রান্স। দেশটিতে এরই মধ্যে করোনায় প্রাণ গেছে ২৬ হাজার ৯৯১ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৭৮ হাজারেরও বেশি। ফরাসিরাও আর পারছেন না। দু’মাসেরও অধিক সময় ধরে দেশটিতে চলছে কঠোর লকডাউন।

প্যারিস থেকে ৩০০ কিলোমিটার পশ্চিমের এই অঁজ়ে শহরটা যেমন স্যাঁতসেতে, তেমনি ঠান্ডা। মাসে দু’একটা দিন চার দিক হেসে রোদ ওঠে, যেমন পরশু। সে কী হইচই! ছেলে-বুড়ো নির্বিশেষে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে হুটোপাটি করছেন। বাড়ির মালকিন আমাকেও ডাক দেন, ‘এসো, রোদে শরীর সেঁকলে করোনাভাইরাস মরে যাবে!’ মাস্কের খোঁজে রবিবার ওষুধের দোকানে যেতে হল। এ দিনও পেলাম না। তবে দেখলাম নানা অজুহাতে কম লোক রাস্তায় বেরোননি!

বিশ্বভারতী থেকে ফাইন আর্টসের পড়াশোনোর শেষলগ্নে দু’দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তির সৌজন্যে ফ্রান্সে এসেছি জানুয়ারিতে। শহরটা একটু বুঝে ওঠার আগেই শুরু হয়ে গেল করোনা-আতঙ্ক। ১৪ মার্চ আচমকাই শুরু লকডাউন। খুব দুর্ভোগে কাটিয়েছি প্রথম কয়েকটা সপ্তাহ। পাঁউরুটি খেয়ে চার বেলা কাটাতে হয়েছে। অঁজ়ে-তে ভারতীয় হাতে গোনা, আর বাঙালি সম্ভবত আমি একা। সুপারমার্কেটে ভারতীয় রান্নার সামগ্রী কিছুই মেলে না। শেষ পর্যন্ত এক দক্ষিণী পরিবার দেবদূতের মতো আমাকে কিছুটা চাল-ডাল জোগাড় করে দেওয়ায় এখন স্বস্তি।

অঁজ়ে-র মানুষ খুব মিশুকে। বিনা কারণেই সবাই সবাইকে উইশ করেন। সেটাও একটা কারণ তাঁদের হাঁফিয়ে ওঠার। ঘরবন্দি থাকা তাদের ধাতে নেই যে। আমারও কি আছে? বোলপুর-বিশ্বভারতী সাইকেলে চরকি পাক দিয়ে আসা মেয়ে দু’মাস ঘরবন্দি! অনলাইনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, কোন্নগরের বাড়ির খোঁজখবর রাখা। আজ অনলাইনে পরীক্ষাও দিলাম।

প্রথম প্রথম স্থানীয় লোকেদের বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখতাম। অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর ভরসা ছিল খুব। ভেবেছিলেন, কয়েকটা সপ্তাহের লকডাউনেই করোনা রুখে দেওয়া যাবে। কিন্তু এত সংক্রমণ, এত মৃত্যুর ভার— সেই আত্মবিশ্বাস এখন উধাও।

অনলাইনে দেশের খবর পাই। শুনি অনেকেই নানা অছিলায় সামাজিক দূরত্ব-বিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন। কোথাও মদের দোকানে লম্বা লাইন, তো কোনো বাজারে হামলে পড়া ভিড়। চিন্তা হয় বাড়ির মানুষগুলোর জন্য।

আপাতত লকডাউন সয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় কী? এখানে দিনটা খুব বড়। রাত ১০টার পরে সন্ধ্যা নামে। সারাটা দিন ঘরের জানলা দিয়ে রাস্তা দেখি। ছবি আঁকি। টুকটাক নকশা তুলি সাদা কাপড়ে। আর অপেক্ষা করি কখন ‘বিকেল’ ৮টা বাজবে। সবার সঙ্গে আমিও জানলায় দাঁড়িয়ে হাততালি দিই। রোজ। মিনিট পাঁচেকের এই ব্যাপারটা আমাকে এনার্জি দেয়। মনে হয়, একা নই। সবাই কেমন বেঁধে বেঁধে আছি! সেটাই যে সব চেয়ে প্রয়োজন।

লেখক- শ্রবণা চক্রবর্তী, ফ্রান্সের অধ্যয়নরত ভারতীয় শিক্ষার্থী।

সূত্র- আনন্দবাজার।

বৈশাখী নিউজএপি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর