চীনের বিরুদ্ধে উইঘুর মুসলিম নির্যাতনের ‘গুরুতর’ অভিযোগ যুক্তরাজ্যের

আপডেট: September 10, 2020 |

উইঘুর মুসলিমদের উপরে কয়েক দশক ধরে চলা চীনা নির্যাতন-নিপীড়ন অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার (০৮ সেপ্টেম্বর) ব্রিটেনে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লিউ শিয়াওমিংয়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ১৩০ জন ব্রিটিশ সাংসদ। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন হাউস অব কমন্স এবং হাউস অব লর্ডসের সদস্যরা।

চিঠিতে সরাসরিই বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ‘জাতিগত’ নিধনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। একসঙ্গে শতাধিক ব্রিটিশ সাংসদের চিঠি বেইজিংয়ের উপরে অনেকটাই চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন কূটনীতিবিদরা।

ব্রিটিশ সাংসদরা চিঠিতে লিখেছেন, ‘উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চীন যে আচরণ করে চলেছে তা অবশ্যই জাতিগত নির্মূলের উদ্দেশে করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবেই এই ধরনের নির্যাতন চালানো হচ্ছে। জার্মানিতে না‍ৎসিরা যে ধরণের অত্যাচার চালিয়েছিল, উইঘুর মুসলিমদের উপরেও সেই ধরণের অত্যাচার চলছে। জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমরা কীভাবে বসবাস করছেন সে সম্পর্কে সব কিছু প্রকাশ্যে আনতে হবে। বিশ্ববাসীর উদ্বেগ দূর করতেই এই পদক্ষেপ নিতে হবে বেইজিংকে।’

এর আগে গত ১৯ জুলাই চীনের বিরুদ্ধে উইঘুর মুসলিমদের উপর নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ করেছিল যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমেনিক রাব চীনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উত্থাপন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের মত যুক্তরাজ্যও এ ঘটনায় জড়িত চীনা কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে বলে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেন তিনি।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘উইঘুর মুসলিমদের জোর করে বন্ধ্যাকরণ এবং নানা ধরনের নিপীড়নের যে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এটা দীর্ঘ দিন ধরে চলতে দেওয়া যায় না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাজ্য মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করবে।’

যদিও যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লিউ শিয়াওমিং উইঘুরদের ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে’ রাখার খবর ‘মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রচলিত আইন মেনে তার দেশে অন্যান্য আদিবাসীর সঙ্গে যে আচরণ করা হয়, উইঘুরদের সঙ্গেও একই আচরণ করছে সরকার।’

সম্প্রতি ড্রোন দিয়ে তোলা কিছু ভিডিওতে উইঘুরদের চোখ বেঁধে ট্রেনে তুলেতে দেখা যায়। যা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হইচই পড়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার সিকিউরিটি সার্ভিস ওই ফুটেজ যাচাই করে তা সত্য বলে নিশ্চিত করেছে।

ভিডিও সম্পর্কে চীনা রাষ্ট্রদূত লিউ বলেন, ‘ওই ভিডিওতে কি দেখানো হয়েছে তা তিনি জানেন না। হতে পারে কারাবন্দিদের স্থানান্তর করা হচ্ছিল। জিনজিয়াংয়ে এ ধরনের কোনো কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প নেই।’

‘প্রশিক্ষণ ক্যাম্প’ এর নামে চীন গত কয়েক বছরে প্রায় ১০ লাখ উইঘুরকে ধরে নিয়ে বন্দি করে রেখেছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ পেয়েছে। তবে চীন বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, জিনজিয়াংয়ে জঙ্গিবাদ বেড়ে যাওয়ায় সন্ত্রাস দমনে তারা কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে মাত্র।

উইঘুরদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সম্প্রতি জন্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করতে উইঘুর নারীদের জোর করে বন্ধ্যা করা হচ্ছে বা শরীরে জন্ম নিয়ন্ত্রণের নানা ডিভাইস বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েক বছরে উইঘুরদের জন্মহার অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে।

উইঘুরদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ আন্তর্জাতিক আইনে গণহত্যার যে বর্ণনা দেওয়া আছে তার সঙ্গে মেলে কিনা জানতে চাইলে রাব বলেন, ‘এ ধরনের দাবি করার আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও বেশি ‘সতর্ক’ হতে হবে। তবে আইন যাই বলুক, সেখানে বৃহৎ আকারে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি স্পষ্ট।’

সূত্র : বিবিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।

বৈশাখী নিউজজেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর