আজ ক্রিকেট খেলতে পারছি মায়ের জন্য : তৌহিদ হৃদয়

আপডেট: October 13, 2020 |

ক্রিকেটার তৌহিদ হৃদয় বগুড়া থেকে ঢাকায় এসেছিলেন বুকভরা আত্মবিশ্বাস, দুই চোখে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে । উদ্দেশ্য মুশফিকুর রহিমের মতো বড় মাপের ক্রিকেটার হবেন। কিন্তু স্বপ্নপূরণের পথে পা বাড়িয়ে প্রতারণার শিকার হন হৃদয়।

মায়ের জমানো টাকা দিয়ে রাজধানীর বনশ্রীতে এক ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন পরই উধাও সেই একাডেমি। ভাঙে হৃদয়ের হৃদয়! পুঁচকে ফিরে যান বগুড়ায়। ২০১২ সালের সেই ঘটনায় ওলটপালট হয়ে যেতে পারতো হৃদয়ের স্বপ্ন। তবে তেমনটা হয়নি। বিধাতা যার নামের পাশে ক্রিকেটার শব্দটি যুক্ত করে দিয়েছেন তার তো ক্রিকেটার হতেই হবে। বছর চারেক পর খালেদ মাহমুদ সুজনের তত্ত্বাবধানে রাজশাহীর বাংলা ট্র্যাক একাডেমিতে পুনরায় পথচলা শুরু হৃদয়ের।

ব্যাস সেখানেই বাজিমাত। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বহু ক্রিকেটারের গুরু সুজনের হাত ধরে বড় মঞ্চে পথচলা শুরু করেন হৃদয়। প্রথমে যুক্ত হন বয়সভিত্তিক দলে। পরবর্তীতে ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিয়মিত হয়ে পড়েন ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।

এ বছর যুব বিশ্বকাপ জিতেছেন হৃদয়। এখন খেলছেন বড়দের ক্রিকেটেও। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের প্রথম ম্যাচে ৫২ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন। মুশফিক, সৌম্য, শান্তরা যেখানে কিছুই করতে পারেননি সেখানে হৃদয় ছিলেন ধ্রুপদী।

তার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সবচেয়ে বড় অবদান মায়ের। তাইতো প্রথম ম্যাচের ম্যাচসেরার পুরস্কার মা-কেই উৎসর্গ করেছেন হৃদয়।

হৃদয় বলেন, ‘প্রতারণার কথা চিন্তা করলে আমার এখনো খুব খারাপ লাগে। একেবারে শুরুতেই এমন একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম। আমার মা, বাবার কাছ থেকে আমাকে বাঁচিয়েছিলেন। নয়তো আমার ক্যারিয়ার, ভবিষ্যৎ অন্যরকম হতো। আজ ক্রিকেট খেলতে পারছি মায়ের জন্য। পুরস্কারটা তার জন্য। মায়ের জন্য কিছু করতে পারার অনুভূতিটা আসলে ভিন্ন।’

সাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন খালেদ মাহমুদ সুজনেরও, ‘উনার ভূমিকার কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমার মায়ের জন্য ক্রিকেটে যুক্ত হতে পেরেছি। এরপর সবকিছুই নেপথ্যে সুজন ভাই। হয়তোবা উনি না থাকলে আমার এতোদূর আসা হতো না।’

মিরপুরে প্রথম ম্যাচে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সোজাসুজি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন হৃদয়। এরপর পুল করে এবাদতকে উড়ান মিড উইকেট দিয়ে। এছাড়া রিভার্স সুইপে লেগ স্পিনার বিপ্লবকে পাঠান বাউন্ডারিতে।

দীর্ঘ বিরতির পর মাঠে নেমে ব্যাটিং করা ছিল চ্যালেঞ্জিং। সেখানে ম্যাচসেরা ইনিংস খেলায় হৃদয় বেশ তৃপ্ত।

‘খেলাটা কঠিন ছিল। কারণ, অনেক দিন আমরা ক্রিকেটের বাইরে ছিলাম। তবে স্কিলে ঘাটতি থাকলেও মানসিকতায় কোন ঘাটতি ছিল না। মাথায় ছিল ইতিবাচক থাকতে হবে, সেটা থাকার চেষ্টা করেছি এবং সফল হয়েছি।’ – বলেন হৃদয়।

তবে থেমে থাকতে চান না নাজমুল একাদশের এ ক্রিকেটার। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে দ্যুতি ছড়িয়ে নজর কাড়তে চান জাতীয় দলের কোচিং স্টাফদের। তাতে জাতীয় দলের দুয়ার খুলবে তা খুব ভালোভাবেই বোঝেন যুব বিশ্বকাপ জয়ী এই ক্রিকেটার।

‘এখানে ভালো করা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। জাতীয় দলের নিয়মিত ক্রিকেটাররা খেলছেন। তাদের ছাপিয়ে আমাদের পারফরম্যান্স ভালো হলে অবশ্যই প্রশংসিত হবে। সামনে আমার যে সুযোগ আসবে সেটা ভালোভাবে কাজে লাগাতে চাই।’

 

বৈশাখী নিউজ/ফারজানা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর