শেষ পর্যন্ত বাবার আশ্রয়ে দুই ভাই বোন

পিংকি (১৩) ও বিপ্লব (১০) নামের দুই ভাই বোন শেষ পর্যন্ত তাদের বাবাকে খুঁজে পেয়েছে।

ওদের  মা বিউটি বেগম জর্দানে কাজ করছেন দেড় বছর ধরে। শিশু দুটির বাবা পিকুল বেপারী ঢাকায় থাকেন। স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ, তাই ছেলে-মেয়ে বা স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ নেই। এ অবস্থায় প্রবাসী মায়ের দুই সন্তান মাহিয়া আক্তার পিংকি ও বিপ্লব বেপারী খালার বাসায় আশ্রয় পায়। তবে খালা সালেহা বেগমের বকাঝকা সইতে না পেরে পালিয়ে দুই ভাই-বোন ঢাকা চলে আসে বাবার সন্ধানে। খুঁজতে থাকে বাপ-দাদার বাসা। এ সময় দিশেহারা হয়ে ঘুরতে থাকা দুই শিশুকে আশ্রয় দেন এক রিকশাচালক।

ওই রিকশাচালক শিশু দুটির বাবাকে একটি এসএমএস পাঠান। এরপর থেকে তাঁর মোবাইল ফোনটি বন্ধ ছিল। তবে তাঁর পাঠানো ওই মেসেজের সূত্র ধরেই এক মাস পর গত সোমবার দুই ভাই-বোনকে উদ্ধার করে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল্লাহেল বাকী জানান, শিশু দুটির বাড়ি ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার তালমা গ্রামে। বাবা-মায়ের সম্পর্ক ভালো না থাকায় তারা খালার বাসায় থাকত। কিন্তু কারণে অকারণে খালার বকাঝকা মানতে না পেরে তারা বাসা থেকে পালানোর পরিকল্পনা করে। গত ৯ সেপ্টেম্বর মাদরাসায় যাওয়ার কথা বলে তারা বাসা থেকে পালিয়ে রাজধানীর মেরাদিয়া এলাকায় চলে আসে। কিন্তু শত চেষ্টায়ও বাবা বা দাদার সন্ধান পায়নি তারা। একপর্যায়ে গুলশান এলাকায় গিয়ে কান্না করতে থাকলে এক রিকশাচালক মানবিক কারণে আশ্রয় দেন তাদের। পরে ওই রিকশাচালক ‘আপনার বাড়ি ফরিদপুর না ঢাকা’ লিখে পিকুল বেপারীর ফোন নম্বরে একটি এসএমএস পাঠান। এর পর থেকে রিকশাচালকের ফোন নম্বরটি বন্ধ ছিল। পরে ওই এসএমএসের সূত্র ধরে শিশু দুটিকে ভাটারা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। রিকশাচালকের ফোন বন্ধ রাখার পেছনে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল কি না তা তদন্ত করা হচ্ছে। সিআইডির সংবাদ সম্মেলনের সময়ে শিশু দুটির বাবা পিকুল বেপারী উপস্থিত ছিলেন।

অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া সিআইডির সিনিয়র এএসপি আমিনুল হক জানান, শিশু দুটি বিদেশে পাচার হওয়ার আশঙ্কায় ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় খালা সালেহা বেগম মামলা করেন। ২০ দিন পর তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। শিশু দুটি একটি দোকান থেকে তাদের বাবাকে ফোন করেছিল। ২০ সেকেন্ডের ওই কলে কয়েকবার আব্বু আব্বু বলেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে লাইন কেটে দেয় তারা। এরপর তাদের বাবার নম্বরে রিকশাচালক একটি এসএমএস পাঠান। সেই সূত্রে শিশু দুটির সন্ধান পাওয়া যায়।

এক প্রশ্নের জবাবে এএসপি আমিনুল বলেন, ‘আমাদের ধারণা, ওই রিকশাচালক প্রথমে মানবিক কারণে শিশু দুটিকে তাঁর বাসায় নিয়ে যান। কিন্তু পরে তাঁর মনে হয়তো তাদের পাচার করার চিন্তা আসে। সে জন্য তিনি তাঁর নিজের ফোন বন্ধ করে ফেলেন। আর সম্ভাব্য পাচারের আগেই আমরা তাদের উদ্ধার করি। তবে এখনো কাউকে আমরা আটক করিনি। তদন্তে পাচারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

বৈশাখী নিউজ/ফারজানা