মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় নিহত ২৫ জন

মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। দেশটির রাজধানী নেপিদোর প্রায় দুইশ মাইল উত্তরে সাগাইং অঞ্চলে হঠাৎ হামলা শুরু করে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। পরে স্থানীয়দের সাথে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। রবিবার দেশটির স্থানীয় বাসিন্দা ও মিয়ানমারের সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

যদিও মিয়ানমারের দাবি, শুরুতে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালায়। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য নিহত ও ছয়জন আহত হয়। এরপর নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা গুলিতে পিছু হটে হামলাকারীরা।

নাম প্রকাশে না করা শর্তে সাগাইংয়ের এক বাসিন্দা জানান, গত ২ জুলাই ভোরে চারটি সামরিক ভ্যান প্রবেশ করে অঞ্চলটিতে। পরে জান্তাবিরোধী গণতন্ত্রকামীদের সাথে সেনাদের সংঘর্ষ বাধে। তবে এসময় স্থানীয়দের সঙ্গে শুধু দেশীয় অস্ত্র ছিল। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী ভারী অস্ত্র নিয়ে তাদের প্রতিহত করে। সংঘর্ষের পর সেখান মোট থেকে মোট ২৫টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত সবাই জান্তাবিরোধী ও গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষ।

এদিকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের জেরে গত ২ জুলাই মিয়ানমার সামরিক জান্তার ওপর আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এবারে জান্তা সরকারের চার মন্ত্রী, স্টেট কাউন্সিলের তিন সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যসহ মোট ২২ জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মার্কিন প্রশাসন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিতে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হবে এবং তাদের সঙ্গে কোনো মার্কিন নাগরিক বাণিজ্য করতে পারবেন না।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এক বিবৃতিতে বলেন, এই নিষেধাজ্ঞায় মিয়ানমারের সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। বরং দেশটিকে দ্রুততম সময়ে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে নিতে সামরিক বাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবর অনুসারে, এই দফায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন মিয়ানমার জান্তার তথ্যমন্ত্রী চিট নাইং, বিনিয়োগমন্ত্রী অং নাইং ও, শ্রম ও অভিবাসন মন্ত্রী মিন্ট কিয়ায়িং এবং সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রী থেট থেট খাইন।

দেশটির প্রভাবশালী স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিলের তিন সদস্যও রয়েছেন নিষেধাজ্ঞার তালিকায়। এছাড়া কর্মকর্তাদের স্ত্রী-সন্তানসহ আরও ১৫ জনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে মার্কিন প্রশাসন। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি, মার্চ এবং মে মাসে কয়েক দফায় মিয়ানমার জান্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তারা।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও পশ্চিমা বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশ সামরিক অভ্যুত্থানের জেরে মিয়ানমারের ওপর বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক তথ্যমতে, গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে কমপক্ষে ৮৮৩ জনকে হত্যা করেছে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী। এদের মধ্যে অন্তত ৪০ জন মারা গেছেন বন্দি অবস্থায়। এছাড়া অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ থেকে অন্তত ৫ হাজার ২০২ জনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

এদিকে মিয়ানমারের চলমান সেনা শাসনের বিরুদ্ধে জনঐক্যের ডাক দিয়েছেন দেশটির ক্ষমতাচ্যুত গণতন্ত্রপন্থী নেতা অং সান সু চি। ২৯ জুন আদালতে হাজির হয়ে নিজের আইনজীবীকে এমনটা জানান তিনি।

গৃহবন্দি অং সান সু চির বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণায় স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ, লাইসেন্স ছাড়া ওয়াকিটকির ব্যবহারসহ মোট ছয়টি অভিযোগের বিচার চলছে। যা শেষে হতে সময় লাগতে পারে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত।

গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর আটক করা হয় ৭৫ বছর বয়সী সু চিকে। পরে তাকেসহ গৃহবন্দি করা হয় ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে। সু চির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো আর্থিক দুর্নীতি। এর দায়ে ১৫ বছরের জেল হতে পারে তার। সূত্র: রয়টার্স

বৈশাখী নিউজ/ জেপা