জ্বালানি তেলের দাম আবারও পড়তে শুরু করেছে

আপডেট: November 28, 2021 |
print news

আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বমুখী হওয়া জ্বালানি তেলের দাম আবারও পড়তে শুরু করেছে। এবার এক দিনেই প্রতি ব্যারেলে কমেছে ১০ ডলার (প্রায় ৮৭০ টাকা), যা ২০২০ সালের এপ্রিলের পর থেকে সর্বোচ্চ পতন। করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ শনাক্ত হওয়ায় তেলের চাহিদা কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ফলে সপ্তাহ ধরে নিম্নমুখী থাকা তেলের দামে গত শুক্রবার এক দিনেই সর্বোচ্চ পতন ঘটল।

দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া করোনার এই ধরন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। তারা মহামারি আবারও খারাপের দিকে মোড় নেওয়ার আভাস দিচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বেগের ফলে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেনসহ ইউরোপীয় দেশগুলো নতুন করে ভ্রমণের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্ব প্রবৃদ্ধি নতুন করে ব্যাহত হতে পারে, সেই সঙ্গে কমবে জ্বালানির চাহিদা। এসব কারণে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে, একই সঙ্গে বড় বড় শেয়ারবাজারেও দরপতন হয়েছে।

গত শুক্রবার অগ্রিম বাজারে অশোধিত ব্রেন্ট তেলের দাম ৯.৫০ ডলার বা ১১.৬ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল হয় ৭২.৭২ ডলার। ফলে এক সপ্তাহে দাম কমল ৮ শতাংশের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ডাব্লিউটিআই অশোধিত তেলের দাম ১০.২৪ ডলার বা ১৩.১ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল হয় ৬৮.১৫ ডলার। এক সপ্তাহে এ তেলের দাম কমল ১০.৪ শতাংশের বেশি।

গত মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার ধরনটি প্রথম শনাক্ত হয়। এটি অধিকসংখ্যকবার জিনগত রূপ বদল এবং মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন। মূলত এ দুটি কারণেই নতুন ধরনটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক হৈচৈ ফেলে দিয়েছে।

মিঝুহোর এনার্জি ফিউচার পরিচালক বব ইয়াগার বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে জ্বালানির তেলের বাজার। করোনার নতুন এ ধরনে তেলের চাহিদা ব্যাপক কমতে পারে।’ এ বিষয়ে ওয়ান্দার সিনিয়র বাজার বিশ্লেষক ক্রেইগ আরলেম বলেন, ‘সবচেয়ে বড় ভয়ের বিষয় হচ্ছে নতুন এ ধরন টিকা প্রতিরোধক, অর্থাৎ টিকা কোনো কাজে আসবে না। ফলে যেসব দেশ আগের ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, তাদের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।’

বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার শুরু হওয়ায় গত মাসে বিশ্ববাজারে অশোধিত তেলের দাম বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলারের ওপরে উঠে যায়, যা ছিল সাত বছরে সর্বোচ্চ। চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় বাড়তে থাকে তেলের দাম, যা দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি করে।

এতে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে তেল রপ্তানিরকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেককে উৎপাদন বাড়াতে একাধিকবার অনুরোধ করার পরও না শোনায় যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারতসহ বড় ক্রেতা দেশগুলো নিজস্ব মজুদ ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানায়।

জ্বালানি সংকট দেখা দিলে নির্দিষ্ট সময়ের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন দেশের তেলের ভাণ্ডার আছে, যা স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ (এসপিআর) নামে পরিচিত। এ ভাণ্ডার থেকে ৫০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল বিক্রির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর পরই জাপান, ভারতও তাদের জরুরি ভাণ্ডার থেকে তেল ছাড়ার ঘোষণা দেয়। ফলে গেল এক সপ্তাহ তেলের দাম কিছুটা কমে ৭৮ ডলারে নেমে আসে।

এ ব্যাপারে কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার বিশ্লেষক ভিভেক ধার করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপ লকডাউনে যাচ্ছে এমন ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘৩০ দিনের মধ্যে যদি ৬০ মিলিয়ন ব্যারেলের ওপর তেল বাজারে ছাড়া হয় তবে দাম ব্যাপকভাবে কমে যেতে পারে।’ কিন্তু করোনার নতুন ধরন শনাক্ত হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ থেকে তেলের বাজারে বড় পতন ঘটল। ফলে জ্বালানির বাজার আবারও পতনের দিকে যাচ্ছে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স।

বৈশাখী নিউজ/ ইডি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর