ডেল্টার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে ওমিক্রন! গবেষণায় নতুন তথ্য

আপডেট: January 27, 2022 |
print news

ওমিক্রন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এমন এক রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হয়, যা ওমিক্রন সহ ডেল্টা এবং অন্যান্য করোনা প্রজাতি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।

চলুন ফিরে যাওয়া যাক গত বছরে। সেই সময় বিশ্বজুড়ে উত্তাল হয়ে ফিরে এসেছে করোনা। এক ধাক্কায় আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন রোগে।

অনেকের দরকার হয়েছিল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু সকলে হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেননি। কারণ হাসপাতালে তখন রোগীর ছড়াছড়ি। নেই বেড। এদিকে চারিদিকে লেগে রয়েছে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার।

সব হয়ে গিয়েছিল স্তব্ধ। বিশেষজ্ঞদের একাংশের কথায়, করোনার এই ভয়াবহ রূপের নেপথ্যে ছিল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। করোনার এই ভ্যারিয়েন্ট শুধু সংক্রামকই ছিল না, পাশাপাশি ছিল ভীষণই সমস্যার। তাই হাসপাতালে রোগীর লাইন লেগে গিয়েছিল।

তবে সেই পরিস্থিতি পেরিয়ে কিছুদিন ভালোই ছিল। এর মাঝে আবার এসেছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। এই ভ্যারিয়েন্টের স্পাইক প্রোটিনে ঘটে গিয়েছিল অনেক পরিবর্তন। তাই এই ভাইরাস হয়ে উঠেছে অত্যন্ত সংক্রামক।

এক্ষেত্রে ভারতে এখন করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির নেপথ্যেও ওমিক্রনের কারসাজি আছে বলেই জানাচ্ছেন একদল বিশেষজ্ঞ। তবে এবারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও তেমন জটিলতা দেখা যায়নি। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রনের সমস্যা তৈরি করার ক্ষমতা অনেকটাই কম।

সম্প্রতি আইসিএমআরের গবেষণায় উঠে এসেছে আশার আলো, ওমিক্রন সুরক্ষা দেবে ডেল্টা সহ অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের থেকে। ওমিক্রন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এমন এক রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হয়, যা ওমিক্রন সহ ডেল্টা এবং অন্যান্য করোনা প্রজাতি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।

গবেষণায় ওমিক্রন-নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন কৌশলের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বুধবারই স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুসারে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ২ লক্ষ ৮৫ হাজারের কিছু বেশি।

একদিনে মৃত্যু হয়েছে ৬৬৫ জনের। পজিটিভিটি রেট ১৬.১৬ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯৩.২৩ শতাংশ।

এখনও পর্যন্ত ভারতে মোট টিকা দেওয়া হয়েছে ১৬৩ কোটির বেশি। কয়েকটি মেট্রো শহরে সংক্রমণ বাড়লেও অনেক শহরেই সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক দেশের প্রধান প্রধান শহরে মোট আক্রান্তের সংখ্যা। মুম্বই (১,৮৫৮), দিল্লি (৭,৪৯৮), বেঙ্গালুরু (২২,৪২৭), কলকাতা (৬৫৪), এবং চেন্নাই (৫,৯৭৩)।

গবেষণায় ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট (B.1.1529 এবং BA.1) আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তের নমুনার সঙ্গে SARS-CoV-2 এর B.1, আলফা, বিটা, ডেল্টা এবং ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে IgG এবং অ্যান্টিবডি (NAbs) বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ফলস্বরুপ দেখা গেছে ওমিক্রন আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে যে ইমিউন রেসপন্স তৈরি করে তা অনায়াসেই কার্যকরভাবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে প্রতিরোধ করতে পারে।

গবেষণাটি ৩৯ জন ওমিক্রন-সংক্রমিত ব্যক্তির উপর পরিচালিত হয়েছিল, যার মধ্যে ২৫ জন অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের উভয় ডোজ গ্রহণ করেছিলেন, আটজন ফাইজার জাবের ডবল ডোজ গ্রহণ করেছিলেন, যখন ছয়জন টিকাহীন ছিলেন। ৩৯ জনের মধ্যে ২৮ জন বিদেশী প্রত্যাবর্তনকারী এবং বাকিরা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ সম্পন্ন ছিলেন।

অন্য একটি গবেষণাতেও উঠে এসেছে একই তথ্য। সেই গবেষণায় বলা হচ্ছে ডেল্টায় আক্রান্ত হওয়ার পরও ওমিক্রন হওয়ার আশঙ্কা কম দেখা দিচ্ছে। ওমিক্রনের হওয়ার পর সাধারণত ডেল্টার সমস্যা দেখা যাচ্ছে না।

এক্ষেত্রে টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে এই অবস্থা বেশি করে ফুটে উঠেছে। আফ্রিকা হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অ্যালেক্স সিগাল বলেন, ডেল্টা বোধহয় এবার আর থাকবে না। তার দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে ওমিক্রনই। এক্ষেত্রে টিকা নেওয়ার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এক্ষেত্রে টিকা না নেওয়া থাকলে ওমিক্রন থেকে পাওয়া সুরক্ষা ভালোমতো মিলবে না।দক্ষিণ আফ্রিকার ২৩ জন করোনা আক্রান্তের উপর এই গবেষণা করা হয়। এক্ষেত্রে গত বছরের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে এই মানুষগুলি করোনাতে আক্রান্ত হন।

এক্ষেত্রে গবেষকদল দেখার চেষ্টা করেন, ওমিক্রনের কারণে কি ডেল্টার বিরুদ্ধে সুরক্ষা মিলছে। এক্ষেত্রে টিকার ভূমিকাই বা কতটা! গবেষকদল বলছে, এক্ষেত্রে টিকা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে ভালোই কাজ করে। তবে ওমিক্রনের বিরুদ্ধে তা কতটা কার্যকর, এই নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। খবর- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

বৈশাখী নিউজ/ বিসি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর