নেত্রকোনায় ছিদ্দিকুর রহমান পাঠাগারের উদ্বোধন ও চারা রোপন

আপডেট: November 26, 2024 |
inbound2408720266548678298
print news

কামরুল হাসান, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: নেত্রকোনা সদর উপজেলায় ঢুলিগাতী গ্রামে ছিদ্দিকুর রহমান পাঠাগারের ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন ও তালের চারা রোপন করেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আসমা বিনতে রফিক।

ঢুলিগাতী গ্রামের বিভিন্ন ফাঁকা রাস্তায় দুই শতাধিক তালের চারা রোপন করা হয়।

inbound5806650692528812755

পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে এবং সবুজায়নকে এগিয়ে নিতে স্থানীয় পাঠাগার “ছিদ্দিকুর রহমান পাঠাগার” ও উজ্জীবক যুব সংগঠন একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

সম্প্রতি তারা পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তালের চারা রোপণের একটি কার্যক্রম শুরু করেছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে পাঠাগারের সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের অংশগ্রহণে এলাকায় দুই শতাধিক তালের চারা রোপণ করা হয়েছে।

এতে অংশগ্রহণ করেন স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবেশকর্মী, মিডিয়া কর্মী ও কৃষক, শ্রমিক তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা।

উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আসমা বিনতে রফিক বলেন, “পাঠাগারের পক্ষ থেকে তালের চারা রোপণের উদ্যোগ সত্যিই অনন্য এবং প্রশংসার যোগ্য।

পাঠাগার শুধু জ্ঞান ও শিক্ষার আলো ছড়ায় না, প্রকৃতি সংরক্ষণেও ভূমিকা রাখছে—এটি একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত।

তালের চারা রোপণ পরিবেশ রক্ষা, ঝড়প্রতিরোধ, এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা যেমন বইয়ের মাধ্যমে মানুষকে আলোকিত করছেন, তেমনি এই সবুজায়নের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলার প্রচেষ্টাও করছেন।

inbound6521674036411801194

এই মহতী উদ্যোগে আন্তরিক শুভকামনা এবং কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা সত্যিই একটি উদাহরণ স্থাপন করেছেন।”

পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক জনাব ছিদ্দিকুর রহমান উপস্থিত সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানান।

তিনি বলেন, আমরা এখানে সমবেত হয়েছি একটি মহৎ উদ্যোগে—বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানের জন্য। এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ তালবৃক্ষ রোপন অনুষ্ঠান।

তিনি বলেন, আমরা সবাই জানি বৃক্ষ শুধু আমাদের পরিবেশ নয়, আমাদের জীবনের জন্যও অপরিহার্য।

গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়, যা ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও বাঁচতে পারি না। বৃক্ষ পরিবেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, মাটি ক্ষয় রোধ করে এবং বন্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

আজকের পৃথিবীতে যেখানে দূষণ ও বনভূমি ধ্বংসের কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়ছে, সেখানে বৃক্ষরোপণ অত্যন্ত জরুরি একটি পদক্ষেপ।

আমাদের পাঠাগার শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ব পালনেও অগ্রগামী। এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি তারই একটি অংশ।

আমরা চাই পাঠাগারের শিক্ষার্থীরা শুধু বইয়ের জ্ঞানেই সীমাবদ্ধ না থেকে প্রকৃতির সুরক্ষায় নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হোক।

তিনি উপস্থিত সবাইকে বিভিন্ন প্রকার গাছ লাগানো ও রক্ষনাবেক্ষনের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন আসুন, শুধুমাত্র আমরা আজকের এই উদ্যোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে নিয়মিত গাছ লাগানোর এবং তার পরিচর্যার দায়িত্ব নিয়ে ফুল, ফল, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষ রোপন করি।

এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আজকের এই ছোট উদ্যোগ একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

স্থানীয় পরিবেশবিদরা বলছেন, তালগাছ আমাদের পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এটি বজ্রপাত প্রতিরোধে সহায়ক এবং বন্যপ্রাণীর আশ্রয়স্থল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া, তালগাছ থেকে প্রাপ্ত ফল ও অন্যান্য পণ্য স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে।

এই প্রকল্পের সমন্বয়কারী ও উজ্জীবক যুব সংগঠনের সভাপতি ইকবাল হাসান বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু বৃক্ষরোপণ নয়, বরং গাছগুলোর যত্ন নেওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।”

স্থানীয় বাসিন্দা ও উজ্জীবক যুব সংগঠনের উপদেষ্ঠা আবুল হোসেন বলেন, “তালের চারা রোপণের এমন উদ্যোগে আমরা গর্বিত। আমরা আশা করছি, এটি আমাদের এলাকার পরিবেশকে আরও সুন্দর ও নিরাপদ করবে।”

এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো স্থানীয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, মাটির ক্ষয় রোধ, এবং গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী তালগাছকে পুনরুজ্জীবিত করা।

প্রকল্পের আয়োজকরা জানান, তালগাছ পরিবেশের জন্য অত্যন্ত উপকারী, কারণ এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বজ্রপাত প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।

প্রকল্পের কার্যক্রমের প্রথম ধাপে পাঠাগার থেকে স্থানীয় স্কুল ও গ্রামবাসীদের মধ্যে বিনামূল্যে তালের চারা বিতরণ করা হয়েছে।

তালের চারা বিতরনের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা ও গাছের গুরুত্ব নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে।

তালের চারা রোপণ অভিযান হিসাবে পাঠাগারের সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের নেতৃত্বে বিভিন্ন খোলা জায়গা, বিদ্যালয় মাঠ, ও রাস্তার ধারে তালের চারা রোপণ করা হচ্ছে।

স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি আব্দুস সেলিম চৌধুরী এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, একসময় গ্রামে প্রচুর তালগাছ ছিল, যা বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে।

এই প্রকল্প তাদের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে বলে তাদের বিশ্বাস।

পাঠাগারের সভাপতি জানান, এটি একটি চলমান প্রকল্প। ভবিষ্যতে তারা শুধু তালের গাছ নয়, অন্যান্য উপকারী গাছ যেমন হিজল, আমলকী এবং অর্জুন গাছ রোপণের পরিকল্পনাও করছেন।

এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ, যা শুধু পরিবেশ নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও সবুজ পৃথিবী উপহার দেওয়ার পথে সহায়ক হবে।

এই ধরনের উদ্যোগ আরও বিস্তৃত হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ ও সুন্দর পৃথিবী নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর