আজ মানবেতিহাসের কলঙ্কের হিরোশিমা দিবস

আপডেট: August 6, 2020 |
print news

আজ ৬ আগষ্ট, হিরোশিমা দিবস। ৭৫ বছর আগে এ রকম একটা দিনে পরমাণু বোমায় কেঁপে উঠেছিল জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা তখন জোরেশোরে বাজছে।

১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা শহরে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম পারমাণবিক বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় তখন সকাল ৮টা ১৫ মিনিট। আগেই নির্দেশনা দিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান। মার্কিন বি-টুয়েন্টি নাইন বোমারু বিমান থেকে হিরোশিমায় ফেলা হয় আণবিক বোমা ‘লিটল বয়’। বোমাটি প্রায় ৫০০ মিটার উঁচুতে বিস্ফোরিত হয়। এতে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় দেড় লাখ মানুষ নিহত হন। তখনও ঘুমের মধ্যেই ছিলেন বেশিরভাগ মানুষ। মাটির সঙ্গে মিশে যায় বেশির ভাগ স্থাপনা। ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয় একটি নগরী। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বছর শেষে আরও ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

আসল হামলার আগে ৪৯টি প্র্যাকটিস বোমা ফেলেছিল আমেরিকা। যাতে মৃত্যু হয়েছিল ৪০০ জনের। আহত হয় ১২০০।

জাপানের আসাহি শিমবুনের হিসাব অনুযায়ী বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগসমূহের ওপর হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য গণনায় ধরে হিরোশিমায় দুই লাখ ৩৭ হাজার এবং নাগাসাকিতে এক লাখ ৩৫ হাজার লোকের মৃত্যু ঘটে। দুই শহরেই মৃত্যুবরণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক ব্যক্তি।

জাপানের আত্মসমর্পণের পেছনে এ বোমার ভূমিকা এবং এর প্রতিক্রিয়া ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে অধিকাংশের ধারণা, এ বোমাবর্ষণের ফলে যুদ্ধ অনেক মাস আগেই সমাপ্ত হয়। যার ফলে পূর্ব-পরিকল্পিত জাপান আক্রমণ সঙ্ঘটিত হলে উভয় পক্ষের যে বিপুল প্রাণহানি হত, তা আর বাস্তবে ঘটেনি। অন্যদিকে জাপানের সাধারণ জনগণ মনে করে, এ বোমাবর্ষণ অপ্রয়োজনীয় ছিল, কেননা জাপানের বেসামরিক নেতৃত্ব যুদ্ধ থামানোর জন্য গোপনে কাজ করে যাচ্ছিল।

বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বিস্তারের নেশায় কথিত পরাশক্তিগুলো প্রতিপক্ষ তথা মানুষ মারার নেশায় বুঁদ হয়ে তৈরি করে চলেছে শত শত কোটি ডলারের মারণাস্ত্র। কিন্তু বর্তমান করোনাভাইরাস মহামারির কাছে এসব যে কত তুচ্ছ তা টের পাচ্ছে মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যায় শীর্ষে থাকা আমেরিকা, কথিত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতসহ পরাশক্তির দাবিদার দেশগুলো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯৪৯ সালে হিরোশিমাকে ঘোষণা করা হয় শান্তির শহর। নির্মিত হয় শান্তি স্মৃতি পার্ক। প্রতিবছরই শোক আর বেদনায় দিনটিকে স্মরণ করে বিশ্ব। সঙ্গে চলে যুদ্ধ বিরোধী প্রচার।

তারপরও থেমে নেই পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বলছে, অন্তত ৯টি দেশের কাছে রয়েছে ৯ হাজার পরমাণু বোমা। কঠোর গোপনীয়তায় পরমাণু অস্ত্রের ভান্ডারসমৃদ্ধ করা হচ্ছে। চলছে আরো বিধ্বংসী বোমা তৈরির পরিকল্পনা। যদিও যুদ্ধ নয় শান্তির বার্তা প্রচারেই অগ্রগামী বিশ্বের এসব ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনায়করা।

হিরোশিমা ট্র্যাজেডির ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে জাপানের রাষ্ট্রদূত আইটিও নাওকি বাংলাদেশের জনগণকে শান্তির বার্তা দিয়েছেন। ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, ‘গত বছর আমি বাংলাদেশে এসে অবাক হই যে, হিরোশিমা এবং নাগাসাকির ট্র্যাজেডির বিষয়ে এত বেশি বাংলাদেশি জানেন। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমা হামলার গল্প এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করে। এছাড়াও অনেকে কয়েক দশক ধরে হিরোশিমা এবং নাগাসাকির ট্র্যাজেডিকে স্মরণ করে চলেছেন। বাংলাদেশের নাগরিকরা জাপানের ট্র্যাজেডির প্রতি যে মমত্ববোধ দেখিয়েছিল আমাদের কাছে অনেক অর্থপূর্ণ। সুতরাং আমাদের এ দীর্ঘদিনের অংশীদারিত্বের জন্য বাংলাদেশের এ ‘হিরোশিমা দিবস’ তাৎপর্যপূর্ণ।

তিনি আরো বলেন, হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা ফেলে দেওয়ার ৭৫ বছর হয়ে গেছে। যেহেতু প্রতি বছর বেঁচে যাওয়া লোকের সংখ্যা কম হচ্ছে, তাই আমাদের সকলের পক্ষে ট্র্যাজেডির কথা স্মরণ করা এবং আমরা যে শিক্ষাটি শিখেছি তা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে আশা প্রকাশ করেন যে, জাপান এবং বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বকে আরও শান্তিপূর্ণ করতে একসাথে কাজ করবে।

বৈশাখী নিউজজেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর