৯/১১ হামলার দু’দশক পর কোথায় দাঁড়িয়ে আল কায়দা?

আপডেট: September 11, 2021 |

৯/১১- শুনলেই ভেসে ওঠে ভয়াবহ সন্ত্রাসের ছবি। একে একে হামলা হয়েছিল আমেরিকার টুইন টাওয়ারে। সন্ত্রাসের সেই ভয়াবহতায় শিউরে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। তারপর থেকে এই দিনটি যেন সন্ত্রাসের সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি জটিল করে ফের আফগানিস্তানের মসনদে ফিরেছে তালেবান।

শেষ হয়েছে আমেরিকার ‘মিশন আফগানিস্তান’। তবে দোহা চুক্তি মেনে আল কায়দাকে আশ্রয় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে তালেবরা।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমানে আল কায়দার পরিস্থিতি কেমন? এই প্রতিবেদন সেই প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা।

দুই দশক আগে আজকের দিনে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ভয়াবহ হামলার পরই শোনা গিয়েছিল একটি বিশেষ সংজ্ঞা–গ্লোবাল জিহাদ। সামনে এসেছিল আরও কয়েকটি নাম যেমন-আল কায়দা, ওসামা বিন লাদেন।

ওই অভিশপ্ত দিনটির পর থেকেই পালটে যায় বিশ্ব। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের নেতৃত্বে শুরু হয় বিশ্ব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমেরিকার লড়াই। বাকিটা ইতিহাস। ওই হামলার পর কেটে গিয়েছে প্রায় দুই দশক। আজও সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন আল কায়দা। তবে বর্তমানে অনেকটা শক্তি খুইয়েছে সংগঠনটি।

টুইন টাওয়ারে হামলার পর উল্কাগতিতে উথ্থান হয়েছিল আল কায়দার, পশ্চিমের দেশগুলির কাছে রীতিমতো বিভীষিকা হয়ে উঠেছিল আফগানিস্তানে তালেবানের ছত্রছায়ায় ফুলেফেঁপে ওঠা ওসামা বিন লাদেন।

তবে তারপর পরিস্থিতি পালটেছে অনেকটাই, মার্কিন বাহিনীর হাতে পাকিস্তানের জমিতে নিকেশ হয়েছে লাদেন। দলীয় কোন্দল ও ইসলামিক স্টেটের মতো আরও উগ্র জেহাদি সংগঠনের আসরে প্রবেশ করায় জমি খুইয়ে কার্যত দিশেহারা আল কায়দা।

যে আফগানিস্তানে একদিন একচ্ছত্র দাপট ছিল সংগঠনটির, সেখানেও জমি দখল করেছে ইসলামিক স্টেট। তাছাড়া, আমেরিকা ও আফগান সরকারের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে চলেছে তালেবান। তাই তারাও আপাতত আল কায়দাকে মাথা তুলতে দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আঘাত হানবে না।

এদিকে, লাদেনের মৃত্যুর পর আল কায়দার রাশ ধরে আয়মান আল জওয়াহিরি। কিন্তু মার্কিন ড্রোন হামলা বা বিরোধী শিবিরের হাতে তার মৃত্যু হয়েছে বলেই খবর। আর সত্যিই যদি জাওয়াহিরি খতম হয়েছে তা হলে এই মুহূর্তে শক্ত হাতে আল কায়দার রাশ ধরার মতো কোনও ব্যক্তি ওই সংগঠনে নেই।

এদিকে, ‘গ্লোবাল জেহাদ’ বা গোটা বিশ্বে সন্ত্রাসের বিষ ছড়িয়ে দিতে ভারতীয় উপ-মহাদেশের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা মহাদেশেও পা রেখেছিল আল কায়দা। কিন্তু সেখানেও বিশেষ সুবোধ করে উঠতে পারছে না সংগঠনটি। সিরিয়ায় ২০২০ সালে এক বিরোধী গোষ্ঠীর হামলায় কোমর ভেঙেছে আল কায়দার।

আসাদের দেশে সংগঠনটি কাজ কারবার চালায় ‘হুররাস আল-দিন’ নামে। কিন্তু সিরীয়দের মধ্যে জমি শক্ত করতে পারেনি দলটি। কারণ সিরিয়ানরা মনে করে আল কায়দার সঙ্গে কোনও যোগ পাওয়া গেলে আসাদ ও মার্কিন যৌথবাহিনীর হাত থেকে তাদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না। তা সেই ধারণা ভুল নয়, মার্কিন ড্রোন হানায় বেশ কয়েকজন নেতার মৃত্যুর পর সিরিয়ায় কার্যত কোমায় চলে গেছে আল কায়দা বা ‘হুররাস আল-দিন’।

ইয়েমেনে মার্কিন ড্রোন হামলায় খতম হয়েছে সে দেশের সংগঠনটির প্রধান। al-Qaeda in the Arabian Peninsula (AQAP) নামে বিগত দশকে ইয়েমেনে রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি করেছিল সংগঠনটি। কিন্তু গত বছর মার্কিন ড্রোন হানায় খতম হয় সংগঠনটির প্রধান। তাছাড়া, সম্প্রতি ইরানের মদতপুষ্ট হাউথি বিদ্রোহীদের কাছে মধ্য বায়দা প্রদেশ হাতছাড়া হয় AQAP’র।

তবে এখনও ইউরোপের দেশগুলিতে ‘লোন উলফ’ হামলা চালাতে সক্ষম সংগঠনটি। ফ্লোরিডার মার্কিন নৌঘাঁটিতে হামলার ব্যক্তির যোগ ছিল AQAP’র সঙ্গে। আলজেরিয়ায় আল কায়দার শাখা সংগঠন ‘Al-Qaeda in the Islamic Maghreb’র (AQIM) প্রধান খতম হয় ফরাসি বাহিনীর বিমান হামলায়।

তারপর থেকে সেখানে তেমনভাবে উপস্থিতি জানান দিতে ব্যর্থ হয়েছে সংগঠনটি। তবে মালি ও সোমালিয়ায় এখনও শক্তিশালী জেহাদি সংগঠনটি। মালিতে আল কায়দার শাখা সংগঠনের নাম ‘Jamaat Nusrat al-Islam wal-Muslimin’ (JNIM)।

সোমালিয়ায় আল কায়দার হয়ে কাজ করে কুখ্যাত ‘al-Shabab’ জঙ্গি সংগঠনটি। তবে এই দুই সংগঠনই স্থানীয় সেনাবাহিনী ও মানুষের উপর হামলা করেই ক্ষান্ত থাকে। গ্লোবাল জেহাদে তাদের ততটা আগ্রহ নেই। এছাড়া, ওই সমস্ত জায়গায় ইসলামিক স্টেটের দ্রুত উত্থানে বেকায়দায় পড়েছে আল কায়দা।

উপরোক্ত ঘটনাবলী মন দিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, ৯/১১ হামলার পর প্রত্যাশিতভাবে বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি আল কায়দা। তা বলে ইসলামিক সন্ত্রাস যে বৃদ্ধি পায়নি তেমন নয়। কিংটি এই নয়া জেহাদে আল কেদার জায়গা ছিনিয়ে নিয়েছে ইসলামিক স্টেট-সহ অন্য জেহাদি সংগঠনগুলি।

কিন্তু আফগানিস্তানে তালিবানের উত্থানে এবার নয়া সমীকরণ তৈরি হয়েছে। আগামী দিনে কোন খাতে বইবে পরিস্থিতি, সেই প্রশ্নের উত্তর সময়ের গর্ভে।

বৈশাখী নিউজ/ জেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর