জাপানে দারিদ্র্যের হার বাড়াচ্ছে নারীর বেকারত্ব

জাপানে দীর্ঘদিন ধরেই চাকরির বাজারে নারীদের অংশগ্রহণের হার কমছিল। গত বছর থেকে বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে দেশটিতে বাড়তে থাকে বেকার নারীর সংখ্যা। জাপানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে চাকরিবিহীন নারীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৩ লাখ ৪০ হাজারে। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার। খবর মাইনিচি।

বিশেষ করে এ বছরের বসন্ত থেকে নারীদের বেকার হওয়ার হারটি অনেক বেশি। বিষয়টি নিয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো নারীদের বেকারত্বের হার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, এ অবস্থা দীর্ঘমেয়াদে চলতে থাকলে তা নারীর পারিবারিক জীবন, সম্পর্ক, সন্তানদের শিক্ষার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সে কারণে এ বিষয়ে সরকারের সহায়তারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে ৩০ বছর বয়সী একজন সিঙ্গেল মায়ের উদাহরণ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, একটি চাকরি হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন তিনি। কিন্তু মহামারি শুরুর পর কাঙ্ক্ষিত চাকরির বিজ্ঞাপনের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। গত বছর তিনি চুক্তিভিত্তিক হিসেবে একটি কর কার্যালয়ে চাকরি করতেন। যেহেতু চাকরিটি চুক্তিভিত্তিক ছিল, তাই এপ্রিলের পর আর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। এরপর থেকে টানা আট মাস কেবল চাকরিই খুঁজে চলেছেন তিনি। কিন্তু দেখা মেলেনি সেই সোনার হরিণের।

ওই নারী জানান, মহামারির আগে বিভিন্ন স্টাফিং এজেন্সি বা কাজ খুঁজে দেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন অস্থায়ী চাকরি করতেন। কর অফিসের চাকরিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোও তার জন্য যথাযথ চাকরি খুঁজতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু অনেক অফিসে সাক্ষাত্কার দেয়ার পরও চাকরি হয়নি তার। এ সময়ের মধ্যে নিজের দক্ষতা বাড়াতে বই সংরক্ষণ, ইংরেজিতে অ্যাকাউন্টিং ও অন্যান্য কাজে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। তবে এসব প্রশিক্ষণেও ভাগ্যের শিকে ছেঁড়েনি তার।

বেঁচে থাকার তাগিদে ১০০ ইয়েন শপের মতো দোকানে ক্যাশিয়ার হিসেবেও কাজ করেছেন। যেখানে বেতন হিসেবে উপার্জন করতেন মাত্র ১ লাখ ইয়েন, যা তার আগের মাসিক উপার্জনের অর্ধেক। সন্তানের লেখাপড়া আর ভরণপোষণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে তাই তিনি আরো ভালো চাকরি করতে চান। কিন্তু কীভাবে সে পথ খুঁজে পাবেন, সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না।

এরকম বহু নারী রয়েছেন জাপানে, যারা দীর্ঘদিন ধরেই বেকার। কিন্তু কাজ খুঁজে হয়রান হচ্ছেন। মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি নারী কাজ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে অর্ধেকই কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিশেষ করে রেস্তোরাঁ ও আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো স্থায়ী হিসেবে নারীদের কম নিয়োগ দেয়। যাদের নিয়োগ দেয়া হয় তারা বেশির ভাগই চুক্তিভিত্তিক। আবার মহামারির প্রভাবও এ খাতগুলোতে বেশি পড়েছে। আবার এটাও দেখা গেছে, একটি কাজের বিপরীতে যদি একজন নারী ও একজন পুরুষ আবেদন করেন, তাহলে কাজটির জন্য পুরুষটিকেই নির্বাচন করা হয়। ফলে কাজের সুযোগ হারান নারীরা।

অলাভজনক সংগঠন সিঙ্গেল মাদারস ফোরামের মুখপাত্র মাসাকো কমোরি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে বেকারত্ব দারিদ্র্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে। গত বছরের তুলনায় এমনতিই এবার দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। আর এর প্রভাব পড়ছে শিশুদের লেখাপড়ার ওপর। যেমন অভিভাবকদের অনেকেই ইন্টারনেট বিল দিতে পারছেন না, ফলে সন্তানরা অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছে না। অর্থাৎ মায়ের চাকরি না থাকার প্রভাব গোটা পরিবারের ওপরই কোনো না কোনোভাবে পড়ছে। দীর্ঘমেয়াদে যা দেশের অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত।

বৈশাখী নিউজ/ এপি