স্কুলে হিরোইজম দেখাতে শিক্ষককে স্ট্যাম্প দিয়ে পেটায় জিতু: র‌্যাব

আপডেট: June 30, 2022 |
print news

প্রেমিকার কাছে হিরোইজম দেখাতে গিয়ে নিজেই হয়ে ওঠে ভয়ংকর খুনি। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রেমিকার সঙ্গে সময় কাটাতে বাধা দেয়ায় খোদ শিক্ষককেই খুন করে সাভারের স্কুল শিক্ষার্থী জিতু।

তাকে গ্রেফতারের পর র‌্যাব জানায়, জিতু দীর্ঘদিন ধরেই মাদক, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। ব্যক্তিগত সুরক্ষায় নিজেই গড়ে তুলেছিল কিশোর গ্যাং।

প্রেমিকাকে নিয়ে স্কুল চত্বরে অবাধ চলাফেরা করত সে। শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষকের চোখে পড়তেই বের করে দেন স্কুল সীমানা থেকে। এতেই ঘটে যত বিপত্তি। ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শিক্ষার্থী আশরাফুল আহসান জিতু। আটতে থাকেন নিজ শিক্ষককে হত্যার মহাপরিকল্পনা। এ ঘটনার কদিন পর স্কুল মাঠে খেলা পরিচালনা করছিলেন শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার। এ সময় হঠাৎ পেছন থেকে তাকে স্ট্যাম্প দিয়ে আক্রমণ করে জিতু। উপর্যুপরি পিটিয়ে পালিয়ে যায় মানিকগঞ্জে। ঘটনার দুদিন পর হাসপাতালে মারা যান শিক্ষক।

এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা হলে আসামিকে ধরতে মাঠে নামে র‌্যাব। বুধবার (২৯ জুন) রাতে তাকে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।

আজ বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গ্রেফতার জিতু দীর্ঘদিন ধরেই মাদক, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। বার বার স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের সচেতন করলেও এর সুরাহা হয়নি।

এলাকায় প্রভাব বিস্তার করার জন্য নিজস্ব কিশোর গ্যাং গড়ে তুলেছিল জিতু। নানা সময় মোটরসাইকেল শোডাউনেও আতঙ্কিত করে তুলত এলাকাবাসীকে।

তবে আসামি জিতুর বয়স নিয়ে জটিলতা তদন্তের মাধ্যমে দ্রুতই নিরসন হবে বলে জানিয়েছেন এ র‌্যাব কর্মকর্তা।

খন্দকার আল মঈন বলেন, জিতু প্রথমে স্কুল পড়াশোনা করতো। পরে সে মাদরাসায় ভর্তি হয়। এরপর আবার সে স্কুলে ভর্তি হয়। জিতু স্কুলের নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে বর্তমানে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। জিতুর জেএসসির সার্টিফিকেট অনুযায়ী বয়স ১৯ বছর। কিন্তু মামলার এজাহারে তার বয়স ১৬ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সে স্কুলে সবার কাছে একজন উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলাভঙ্গ, মারামারিসহ স্কুলের পরিবেশ নষ্টের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে এবং স্কুল চলাকালীন ছাত্রীদের হয়রানি করত জিতু। স্কুলে সবার সামনে ধূমপান, ইউনিফর্ম ছাড়া স্কুলে আসা-যাওয়া, মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করত।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, নিহত উৎপল সরকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তিনি ২০১৩ সালে আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ওই কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ফলে তিনি বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল ইউনিফর্ম, ধূমপানসহ বিভিন্ন শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত বিষয়ে পরামর্শ দিতেন।

এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলাধুলা পরিচালনা করানোসহ শিক্ষার্থীদের সুপরামর্শ, মোটিভেশন ও কাউন্সিলিংয়ে মাধ্যমে সৃজনশীলতা বিকাশেও ভূমিকা রাখতেন তিনি।

জিতুর বাবাকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা মনে করেছেন তদন্তের স্বার্থে তাকে রিমান্ডে নেয়া প্রয়োজন। তাই জিতুর বাবাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছেন।

আমরা জিতুকে গ্রেফতারের আগে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তবে র‌্যাব সবসময় প্রকৃত আসামিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করে। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা প্রকৃত আসামি জিতুকে গ্রেফতার করেছি। তাকে থানায় হস্তান্তর করা হবে।

বৈশাখী নিউজ/ ফাজা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর