কবে থেকে জামায়াতের স্বীকৃতির প্রয়োজন হলো আওয়ামী লীগারদের!

আপডেট: July 6, 2022 |

বিশেষ প্রতিবেদক: তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ দলে জামায়াত নেতাদের অনুপ্রবেশের পরিণতি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা সাম্প্রতিক সময়ে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার দিকে তাকালেই বোঝা যায়।

সম্প্রতি স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীনকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে উপজেলার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাহিবুল হাসান মুকিতের বিরুদ্ধে। এই মুক্তিযোদ্ধা নিজেই অভিযোগটি করেন। এই অভিযোগ উঠার পর থেকেই আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাদের পক্ষ থেকে মুকিতকে দল থেকে বহিষ্কারের জোর দাবি তোলা হয়।তাদের প্রশ্ন কবে থেকে জামায়াতের স্বীকৃতির প্রয়োজন হলো আওয়ামী লীগারদের!

দেখা গেছে অভিযুক্তকে আওয়ামী লীগের আরেক পক্ষ তাকে বাঁচাতে মরিয়া! এমনকি স্থানীয় পর্যায়ে জাময়াত নেতারাও প্রচার করছেন, মুকিত একজন ‘প্রকৃত’ আওয়ামী লীগ কর্মী, তাকে যেনো আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা না হয়!

আশ্চর্য হলেও এমনটাই ঘটছে পলাশবাড়ী উপজেলায়। আওয়ামী লীগ দল থেকে আওয়ামী লীগেরই এক কর্মীকে যেনো বহিষ্কার না করা হয় তার জন্য জামায়াত নেতারা এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের পলাশবাড়ী উপজেলার সেক্রেটারি তাজুল ইসলাম মিলন একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি মুকিতকে ‘ছাত্রলীগ কর্মী’ হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন!

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ভিডিও ছড়িয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, তারা প্রথম থেকেই দাবি করেছেন, মুকিতের পিতা এক সময়ের দাপটশালী জামায়াত নেতা ছিলেন। সেই খোলস থেকে মুকিতও বের হতে পারেননি। আদতে সে কট্টর জামায়াত নেতা।

তারা আরও বলেন, মিলনের ভিডিও বার্তাই বলে দিলো, সেই দাবি সঠিক। একজন আওয়ামী লীগ কর্মী সে আদতে আওয়ামী লীগের নীতিতে বিশ্বাস করেন কিনা তা যদি জামায়াতের নেতাদের কাছ থেকে জানতে হয় তাহলে এটি চোখ বুজে বলে দেওয়া যায় সে আসলে কখনো ‘প্রকৃত’ আওয়ামী লীগ কর্মী ছিল না, সে ‘প্রকৃত’ জামায়াত কর্মী।

স্থানীয় একাংশ আওয়ামী লীগ নেতাদের জোর দাবি পাত্তা না দিয়ে এখনও মুকিতকে দল থেকে বহিষ্কার না করায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, মাত্র সাত বছর আগে ২০১৩ সালে মুকিতের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে স্থানীয় প্রশাসন অনেক জিহাদি বই ও ধর্মকে ব্যবহার করে উস্কানিমূলক লেখা বই উদ্ধার করে। পারিবারিকভাবেই মুকিত জামায়াতের আদর্শ বহন করে আসছেন। তার নানা ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতার বিপক্ষে নির্বাচন করেছিলেন। এমনকি জামায়াত ইসলামের তৈরি করা কলেজে মুকিতের বাবা প্রতিষ্ঠাকালীন প্রিন্সিপালও ছিলেন।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিকে নিয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি মুকিততে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও যখন মুকিত বহাল তবিয়তে নিজ দায়িত্বে রয়েছেন তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বুঝে ফেলেন তাদের সেই প্রতিবেদন তোয়াক্কাই করা হয়নি। তবে মুকিতকে তার ব্যক্তিগত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

কিন্তু কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে এখনও মুকিতের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

মুকিতের বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। এ বিষয়ে ফোনে বীর মুক্তিযোদ্ধা কনক বলেন, আসলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতেও লজ্জা লাগছে। জামায়াত-শিবির পরিবারের সন্তানকে আশ্রয় দিচ্ছে আওয়ামী লীগ- এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আমরা পলাশবাড়ীর মুক্তিযোদ্ধারা খুব শিগগিরই বসছি আবার বিষয়টি নিয়ে। আগেই বলেছিলাম, ব্যবস্থা না নিলে কঠোর অবস্থানে যাবো আমরা।

পলাশবাড়ীর অপর বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা পলাশবাড়ীতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। কেনো এখনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না মুকিতের বিরুদ্ধে, আমরা সামনে কী করবো- এ বিষয়ে আলোচনার পর জানাতে পারব। তবে আমরা এখনো আমাদের আগের দাবিটিই জানাচ্ছি। আর তাহলো, আওয়ামী লীগের যে কোন কার্যক্রম থেকে মুকিতের অপসারণ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাইবান্ধার এক আওয়ামী লীগ নেতা মন্তব্য করেন, জামাতপন্থীদের অনুপ্রবেশের কারণে আওয়ামী লীগে যে রোগ দেখা দিয়েছে তার কিছু লক্ষণ প্রকাশ হচ্ছে মুকিতের মাধ্যমে। এ ধরনের বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে রোগ আরো বিস্তৃত হবে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর